Ajker Patrika

দেশের পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক বন্যা যেসব কারণে, উন্নতির আশা নেই শিগগির

সৌগত বসু, ঢাকা
আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২৪, ১৬: ৫৭
দেশের পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক বন্যা যেসব কারণে, উন্নতির আশা নেই শিগগির

বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তের ৮টি জেলার লাখ লাখ মানুষ নজিরবিহীন এক বন্যা পরিস্থিতির শিকার। সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিপাত এবং ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। আগামী দুয়েক দিন একই অবস্থা বিরাজ করবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ২৫ আগস্টের পর এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কিছুটা কমতে পারে। 

বাংলাদেশে এমন বন্যা হতে পারে এই বিষয়ে আগাম সতর্কবার্তাও ছিল। মাস চারেক আগে ভারতের পুনেতে অনুষ্ঠিত এক জলবায়ু সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ায় এবারের বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টিপাতের কথা বলা হয়েছিল। 

দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বলছে, গত ২০ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ৬টি। সেগুলো হলো—কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী ও মৌলভীবাজার। এসব জেলার ৪৩ উপজেলা বন্যা প্লাবিত। এই ৬ জেলায় মোট ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৬৩টি পরিবার পানিবন্দী। সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৪৮ জন। এ ছাড়া বন্যার পানিতে ডুবে ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।

যে কারণে পূর্ব সীমান্তের জেলাগুলোতে বন্যা 
বন্যা পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করেছে ফেনী অঞ্চলে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দাঁড়িয়েছে ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায়। এই এলাকায় ১৯৮৮ সালের পর বন্যা পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হয়নি আগে কখনো। ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পানিতে ফেনীর মুহুরি, কহুয়া ও বিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলেও। 

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা আছে। আবহাওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এসব অঞ্চলে গত ৪৮ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টা এই অবস্থা বিরাজ করতে পারে। তবে আগামীকাল বিকেলের পর থেকে কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালী অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা একটু কমে যেতে পারে।’

নাজমুল হক বলেন, ‘গত ১৬ আগস্ট এর দিকে উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটা লঘুচাপ তৈরি হয়। এই লঘুচাপ পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকার ওপরে এসে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। এই সুস্পষ্ট লঘুচাপ কিছুটা দুর্বল হয়ে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে কিছুটা দুর্বল হয়ে লঘুচাপ আকারে অবস্থান করে। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে অনেক পাহাড় আছে এবং উল্লিখিত কারণে এসব অঞ্চলে ভারী বর্ষণ হয়েছে।’

এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘লঘুচাপ দুর্বল হয়ে গেলেও মৌসুমি বায়ুর অক্ষের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।’ অর্থাৎ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এই মুহূর্তে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় অবস্থায় আছে। এই সক্রিয় অবস্থার কারণে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশে নয় বাংলাদেশের উজানেও (বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে ভারতীয় অঞ্চলগুলোতে) হচ্ছে।’ 

আবহাওয়া অধিদপ্তর আশা করছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে বৃষ্টিপাত বিশেষ করে নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম সার্কেলের মধ্যে যে তীব্রতা আগামীকাল শুক্রবার বিকেলের মধ্যে একটু কমে যেতে পারে। 

দেশে এবার বেশি বৃষ্টি ও বন্যার হতে পারে এটা চার মাস আগেই বলা হয়েছিল। ভারতের পুনেতে গত ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট ফোরামের ২৮তম অধিবেশনে জানানো হয়, প্রশান্ত মহাসাগরের ক্রান্তীয় অঞ্চলে এখন এল নিনো জলবায়ু চক্র বিরাজ করছে। তবে আসন্ন বর্ষা মৌসুমের প্রথমার্ধে দক্ষিণ গোলার্ধে এল নিনোর প্রভাব কমবে। মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধে লা নিনা জলবায়ু চক্রে শুরু হবে।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে লা নিনার প্রভাব শুরু হলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় ও আসাম এবং বাংলাদেশে বৃষ্টি বেশি হতে পারে। বাংলাদেশ ভাটির দেশ হওয়ায় বৃষ্টির সেই পানি গড়াবে এই দেশের ওপর দিয়েই। ফলে এখানে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। 

তখন বলা হয়েছিল, বর্ষায় বৃষ্টিও বেশি হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ায়। সেই বৃষ্টির প্রভাবে ভাটির দেশ বাংলাদেশে হতে পারে বন্যা। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, জলবায়ু চক্র এল নিনো দুর্বল হয়ে যাওয়া, প্রচণ্ড গরম ও দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ুসহ নানা কারণে আগামী জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গতবারের তুলনায় বেশি বৃষ্টি হতে পারে।

নাজমুল হক বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদপ্তর আগে থেকেই একটা দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। এমনিতেই দেশে জুলাই মাস ও আগস্ট মাস বৃষ্টি প্রবণ মাস। প্রতিবছর এই সময়ে বৃষ্টিপাতের আধিক্য থাকে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের পূর্বাঞ্চলে কমবেশি বৃষ্টিপাত নিয়ে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত এমন অবস্থা থাকতে পারে। ২৫ তারিখের পর থেকে ২৬-২৮ আগস্ট এই তিন দিন মোটামুটি দেশের পূর্বাঞ্চলে যে ভারী বৃষ্টিপাত অনেকটাই কমে যেতে পারে। তবে এই অঞ্চলে কমে গিয়ে ২৮-২৯ আগস্ট রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা আবার বাড়তে পারে।’ 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ নাথ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই সময়ে বন্যার বড় কারণ প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে তার আগের বড় কারণ, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি। এটা খুবই শক্তিশালী ছিল এবং এটাতে প্রচুর মেঘমালা সঞ্চিত ছিল। এটা নর্থইস্ট ডিরেকশনে (উত্তর-পূর্ব দিকে) মুভ করে সুন্দরবন হয়ে ক্রস অ্যাঙ্গেলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের দিকে অবস্থান করেছে। এটা এই অঞ্চলে বদ্ধ হয়ে ছিল বলেই ওই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছে।’

বিশ্বজিৎ নাথ আরও বলেন, ‘এই অঞ্চলে যখন মেঘ নর্থইস্ট অঞ্চলে মুভ করেছে তখন খাগড়াছড়ি ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ওপর বদ্ধ ছিল। ত্রিপুরা একটা লেক আছে। যেখানে প্রচুর বৃষ্টিতে লেকের পানি ওভারফ্লো হয়ে বেরিয়ে গেছে। তখন তারা ছোট বাঁধের গেট খুলে দিয়েছে। আগামী দুই তিন আরও বৃষ্টিপাত হবে। এখানে মেঘ জমে আছে।’

এই দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এখানে (বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের বন্যা কবলিত অঞ্চল) পানি সরে যাওয়ার সুযোগ খুবই কম। যতক্ষণ না পর্যন্ত এই মেঘ না সরে যাচ্ছে। তবে দেশের অভ্যন্তরীণ পানি নিষ্কাশনের অবস্থা অনেক খারাপ থাকা, নদ-নদীর নাব্যতা কমে যাওয়াতে পানি ওভারফ্লো হচ্ছে। ত্রিপুরা থেকে যে পানি বের হয়ে খাগড়াছড়ি ও ফেনী অঞ্চলে ঢুকেছে তা সহজে বের হতে পারছে না। পানির উচ্চতা বাড়ছে এ কারণে।’

তিনি বলেন, ‘পানি নিঃসরণের যে ক্যাপাসিটি নদীগুলোর থাকা উচিত তা নেই। পানি ধরে রাখার ক্ষমতা নেই। আমাদের এখন প্রতি বছর বন্যা সহ্য করতে হবে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের একটা বড় বিষয় উঠে এসেছে। বঙ্গোপসাগরে অনেক বেশি লো প্রেশার তৈরি হচ্ছে। তাই এমন অবস্থা তৈরি হলেই সতর্ক হতে হবে। এর বাইরে ড্রেনেজ পদ্ধতি নষ্ট হচ্ছে ও নদীর নাব্যতা হারাচ্ছে। তাই ওপর থেকে যখন ঢল নেমে আসে সেটা স্বাভাবিক ভাবে নদী ধরে রাখতে পারছে না।’

বিশ্বজিৎ নাথ আরও বলেন, ‘১৯ আগস্ট নাসা আর্থ ডেটার গ্লোবাল প্রিসিপিটেশন মিশন উপগ্রহ পরিমাপের মাধ্যমে দেখা গেছে—ভারতের সাবরুমের (ত্রিপুরা) উত্তরে ২২০ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রায় ১৩০ থেকে ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে অনুমান করা হয়েছে। যা ফেনী নদীর মাধ্যমে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে, বাংলাদেশের অংশে ব্যাপক বন্যার ঘটনা দেখা গেছে। বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ২৪ আগস্টের পর হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল বুধবার সন্ধ্যা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত কুমিল্লায় ১৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, নোয়াখালীতে ১৪৭ মিলিমিটার ও কক্সবাজারের ১৬২ মিলিমিটার। আর আজ সকাল ৬ টা থেকে ৯ টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৫৫ মিলিমিটার, রাঙামাটিতে ৭১মিলিমিটার ও কক্সবাজারে ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে বন্য পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, মুহুরি, ফেনী ও হালদা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এর মধ্যে ফেনীর মুহুরি নদীর পানি গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চল এবং ত্রিপুরার ভেতরের অববাহিকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে।

বলা হয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিগত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকাসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়েছে। ফলে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলে বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।

আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসতে পারে। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদী সমূহের সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে স্থিতিশীল থেকে পরবর্তীতে উন্নতি হতে পারে। 

আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসতে পারে। এ সময় এ অঞ্চলের ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরি, ফেনী, গোমতী, হালদা ইত্যাদি নদীসমূহের সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে স্থিতিশীল থেকে পরবর্তীতে উন্নতি হতে পারে। 

তবে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইডিএম) জানিয়েছে, ২১ থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত ত্রিপুরায় বিচ্ছিন্নভাবে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। আর ত্রিপুরার অধিকাংশ নদীই বাংলাদেশ হয়ে প্রবাহিত হওয়ার এই ধাক্কা অবধারিতভাবেই পড়বে ভাটি অঞ্চলের জেলাগুলোতে। 

তবে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা নদ-নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে, অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি স্তর স্থিতিশীল আছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এ সকল নদীর পানি স্তর হ্রাস পেতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

এদিকে ভারত বলছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদীর ক্যাচমেন্ট এলাকায় গত কয়েক দিন ধরে এই বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাংলাদেশে বন্যা মূলত বাঁধের নিচের দিকের এই বৃহৎ ক্যাচমেন্টের পানির কারণে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত
‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’—ধরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২১টি সংগঠনের উদ্যোগে আগামী ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তন, শেরেবাংলা নগর, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ৩য় ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’ (Climate Justice Assembly 2025)।

বাংলাদেশসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক মোট ১৪টি দেশের প্রায় ১ হাজার ৫০০ বিশিষ্ট পরিবেশবিদ, গবেষক, নীতিনির্ধারক ও সামাজিক আন্দোলনের নেতাদের উপস্থিতিতে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এই জলবায়ু অধিকারভিত্তিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

সম্মেলনের আগে আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সমাবেশের ঘোষণা দেন অ্যাসেম্বলি কমিটির সদস্যসচিব শরীফ জামিল।

‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর লক্ষ্য, প্রস্তুতি, অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি অতিথিসহ দুই দিনের সেশন পরিকল্পনা, র‌্যালি এবং অন্যান্য আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুই দিনব্যাপী এই সমাবেশের প্রথম দিন ১৩ ডিসেম্বর সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ক্লাইমেট র‌্যালিতে অংশগ্রহণ এবং র‌্যালি শেষে ক্লাইমেট জাস্টিজ এসেম্বলি ২০২৫ উদ্বোধন করবেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও ধরার উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এই উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

দিনব্যাপী প্রোগ্রামে ৩টি প্লান্যারি সেশন থাকবে। বাংলাদেশে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল থেকে আসা ভুক্তভোগীরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য দেবেন।

দ্বিতীয় দিনে ১৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় সমাবেশের প্রথম দিনের আলোচনার সারসংক্ষেপ, সুপারিশ ও করণীয় নিয়ে উপস্থাপন করা হবে ‘ড্রাফট অ্যাসেম্বলি ডিক্লারেশন’।

শরীফ জামিল বলেন, ‘প্রান্তিক এবং অপ্রান্তিক সকল মানুষের সচেতনতার মধ্য দিয়েই রূপান্তরের বাস্তবতার ন্যায্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সেই লক্ষ্যে এই জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫।’

ক্লাইমেট জাস্টিজ অ্যাসেম্বলি ২০২৫-এর আহ্বায়ক ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘পরিবেশ ও জলবায়ু বিশ্বব্যাপী হুমকির মুখে, ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের পরিবেশকর্মীরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছে; যা একটি মহৎ কাজ। কোনো কিছুর বিনিময়ে এ কাজের মূল্যায়ন সম্ভব নয়। কিন্তু এই ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থায়ন প্রয়োজন। আমার যে জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ করতে যাচ্ছি, তাতে অনেক সহযোগীর সহযোগিতা প্রয়োজন রয়েছে, তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সঠিক রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে জলবায়ু ন্যায্যতার ন্যায্য প্রতিফলন পাওয়া সম্ভব।

এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন কো-কনভেনর, ক্লাইমেট জাস্টিজ অ্যাসেম্বলি ২০২৫-এর কো-কনভেনর এম এস সিদ্দিকি, সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা, সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল হক, শেরেবাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিলা আজিজ এবং জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫ এর সমন্বয়ক এবং সহযোগী সমন্বয়কেরা।

জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫-এর আয়োজক ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’ (ধরা)। সহযোগী আয়োজক সিপিআরডি, কোস্ট ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিসেস, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, মিশনগ্রিন বাংলাদেশ, ব্রাইটার্স, ওএবি ফাউন্ডেশন, এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেবট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, অলটারনেটিভ ল কালেকটিভ, আর্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক, ফসিল ফুয়েল নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি ইনিশিয়েটিভ, ফসিল ফ্রি জাপান, গ্রিন কাউন্সিল, জাপান সেন্টার ফর আ সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি, এলডিসি ওয়াচ, মাইনস, মিনারেলস অ্যান্ড পিপল, নেটজভের্ক এনার্জিভেন্ডে, ফিলিপাইন মুভমেন্ট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট ফর ইকুটেবল ডেভেলপমেন্ট, রিভারফক্স, সিডব্লিউটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল উত্তর-পূর্ব জাপান, সুনামি সতর্কতা জারি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জাপানের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আঘাত হেনেছে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। জাপান আবহাওয়া সংস্থার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৪ মিনিট (গ্রিনিচ মান সময় ২টা ৪৪ মিনিট) নাগাদ এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০ কিলোমিটার গভীরে। মূল কম্পনের পর বেশ কয়েকটি ছোট আফটারশকও অনুভূত হয়েছে।

ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে জাপানের পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাগুলোর জন্য সতর্কতা হিসেবে ‘সুনামি অ্যাডভাইজরি’ জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া সংস্থা সতর্ক করে জানিয়েছে, ঢেউগুলো প্রায় এক মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে, তাই উপকূলবাসীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে একই অঞ্চলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। এতে বহু বাসিন্দা আহত হয়েছেন। সর্বশেষ পরিস্থিতি ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকার বাতাস সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর, দিল্লির অবস্থা বিপজ্জনক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ শুক্রবার ঢাকার অবস্থান ১০ম। অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি।

আজ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৬৭, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক। আর শীর্ষে থাকা দিল্লির বায়ুমান ৩৮৫, যা বিপজ্জনক বাতাসের নির্দেশক।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভিয়েতনামের হ্যানয়, ভারতের কলকাতা, কুয়েতের কুয়েত সিটি ও পাকিস্তানের লাহোর। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৫৫, ২৪৬, ২১৭ ও ২১১।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় জেঁকে বসেছে শীত, তাপমাত্রা ১৫.৫

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকায় গত কয়েক দিন ধরেই তাপমাত্রা কমছিল। তবে আজ শুক্রবার শীত বেশ ভালোভাবেই জেঁকে বসেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সকালে সেটি কমে হয়েছে ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাস থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৫ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সাধারণত অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১৩ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ৩৩ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত