Ajker Patrika

বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাবে বিলুপ্তির মুখে ‘জলদস্যু’ খ্যাত গ্রেট স্কুয়া পাখি

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

বার্ড ফ্লু মহামারিতে এবার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ‘সমুদ্রের জলদস্যু’ খ্যাত গ্রেট স্কুয়ার মৃত্যু হয়েছে। ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যের উপকূলীয় অঞ্চলের শক্তিশালী এ পাখির সংখ্যা ৭৬ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের দাতব্য সংস্থা রয়্যাল সোসাইটি ফর দ্য প্রোটেকশন অব বার্ডস (আরএসপিবি)। 

অন্য পাখিদের খাবার কেড়ে নিয়ে জীবনধারণ করে বলে গ্রেট স্কুয়াকে সমুদ্রের জলদস্যু বলে অভিহিত করা হয়।

২০২১–২২ সালে বন্য পাখির মধ্যে বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় হাজারো পাখির মৃত্যু হয়। তখন গ্যানেট ও রোজেট টার্ন পাখির সংখ্যাও গুরুতরভাবে হ্রাস পেয়েছিল। এই মহামারির আগে এ তিন প্রজাতির পাখির সংখ্যা বাড়ছিল। 

২০২১ সালের গ্রীষ্মে পাখিদের মধ্যে বার্ড ফ্লুর এইচ৫এন১ স্ট্রেন ছড়িয়ে পড়ে। এতে হাজারো প্রাণীর মৃত্যু হয়।

আরএসপিবি বলছে, প্রতিবেদন অনুসারে, বার্ড ফ্লু একাধিক সামুদ্রিক পাখি সংরক্ষণের সবচেয়ে বড় তাৎক্ষণিক হুমকিগুলোর মধ্যে একটি, এটি স্পষ্ট।

২০২২ সালে বার্ড ফ্লুতে স্কটল্যান্ডে ১১ হাজার ১৭৫টি গ্যানেট পাখির মৃত্যু হয়। ছবি: ফিজ. অর্গআরএসপিবি এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা নীতিবিষয়ক সহকারী জিন ডুগগান বলেন, ‘বার্ড ফ্লু কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা উপলব্ধি করার এখনই সময়। এই প্রজাতিগুলো অন্যান্য যে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তার মধ্যে বার্ড ফ্লু শীর্ষে।’

২০২৩ সালের মে থেকে জুলাই পর্যন্ত আরএসপিবি ১৩ প্রজাতির পাখির ওপর জরিপ চালিয়েছে। তারা বলছে, বার্ড ফ্লুর কারণে গ্রেট স্কুয়া, গ্যানেট ও রোজেট টার্ন পাখির সংখ্যা কমে গেছে। এ ছাড়া বার্ড ফ্লুর কারণে রোজেট টার্ন ও অন্যান্য টার্ন জাতীয় পাখির সংখ্যাও কমে এসেছে। 

 ২০১৫–২০২১ সালে পাখির সংখ্যার একটি বড় জরিপের তুলনায় গ্যানেটের সংখ্যা ২৫ শতাংশ, রোজেট টার্ন ২১ শতাংশ, স্যান্ডউইচ টার্ন ৩৫ শতাংশ এবং সাধারণ টার্ন ৪২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। 

যুক্তরাজ্যের গ্রেট স্কুয়ার প্রায় সবগুলোই স্কটল্যান্ডে বাস করে। ২০২২ সালে অন্তত ২ হাজার ৫৯১টি গ্রেট স্কুয়ার মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্কটল্যান্ডের শেটল্যান্ড দ্বীপের প্রত্যন্ত অঞ্চল ফাউলা আইল্যান্ডেই ১ হাজার ৪০০ পাখির মৃত্যু হয়েছে।

যুক্তরাজ্যে গ্রেট স্কুয়ার সংখ্যা ৯ হাজার ৮৮ থেকে কমে ২ হাজার ১৬০ টিতে এসে ঠেকেছে।

ডুগগান বলেন, বিশ্বজুড়ে পাখিদের সুরক্ষায় ব্রিটেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ ব্রিটেন অনেক প্রজাতির পাখির আবাসস্থল। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা বৈশ্বিক পাখির সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় প্রভাব ফেলবে।’ 

এ ছাড়া ২০২২ সালে বার্ড ফ্লুতে স্কটল্যান্ডে ১১ হাজার ১৭৫টি গ্যানেট পাখির মৃত্যু হয় আর ওয়েলসের গ্রাসহোমে ৫ হাজার পাখির মৃত্যু হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

জরিপ অনুসারে, বার্ড ফ্লুতে ২১ শতাংশ রোজেট টার্নের মৃত্যু হয়েছে। ছবি: ইবার্ডসাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাজ্যে বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব কমে এলেও বিশ্বের অন্যান্য স্থানে বার্ড ফ্লুর কারণে অনেক প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে।

গত জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো অ্যান্টার্কটিকার হস্তিসিল ও লোমশ সিলে বার্ডফ্লু শনাক্ত করা হয়। তখন বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শত শত হস্তিসিলের মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর পাওয়া যায়।

ডুগগান বলেন, ‘যেহেতু বৈশ্বিকভাবে এখনো এ রোগটির প্রাদুর্ভাব রয়েছে, তাই যুক্তরাজ্যের পাখিরা এখনো ঝুঁকির মুখে রয়েছে। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি নিয়ে ভাবতে হবে।’

জলবায়ু পরিবর্তন, মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত মৃত্যুহার, উপকূলীয় অঞ্চলে বায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্যের প্রাপ্যতা কমে যাওয়ায় যুক্তরাজ্যের সামুদ্রিক পাখিরা আরও হুমকির মুখে রয়েছে বলে জানিয়েছে আরএসপিবি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত