Ajker Patrika

প্রেমতলীর পরিচয় বহন করা গাছটি কাটা পড়বে!

রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রেমতলীর পরিচয় বহন করা গাছটি কাটা পড়বে!

বিশালাকারের নিমগাছটির নিচে সব সময় একটা প্রতিমা থাকে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সেখানে পূজা অর্চনা করেন। এর পাশেই নিমগাছের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি কড়ই গাছ। গাছটি এখন কাটার চেষ্টা করছেন স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। গাছটির অপরাধ, তার কয়েকটি ডালপালা চলে গেছে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির মার্কেটের ছাদে।

এই গাছ দুটি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী বাজারে। স্থানটি নানা কারণে ঐতিহাসিক। বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক শ্রী চৈতন্যদেব ধর্ম প্রচারের জন্য পূর্ববঙ্গ থেকে গঙ্গা পার হয়ে এই প্রেমতলীতে স্নান সেরে গৌড় গমন করেন। চৈতন্যদেবের শিষ্য শ্রী গোদা পরবর্তীতে বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারে এ এলাকায় এসে প্রত্যেক পূর্ণিমা তিথিতে স্নানে যেতেন প্রেমতলীর তমাল তলার ঘাটে। প্রেমতলীর পাশেই খেতুর গ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দেশের সবচেয়ে বড় ধাম ‘খেতুরীধাম’ অবস্থিত।

প্রতি বছর কয়েক লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বী আসেন এই প্রেমতলীতে। প্রেমতলী মানেই বছরের পর বছর সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিম ও কড়াই গাছ দুটি। কিন্তু কড়াই গাছটি কাটার জন্য গতকাল সোমবার স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন। এই আবেদনের প্রধান উদ্যোক্তা মাইনুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (ইউপি) রুহুল আমিন নয়নও তাঁর পক্ষে আবেদনে সই করেছেন।

কিন্তু খবরটি জানাজানি হলে প্রতিবাদের ঝড় উঠে সামাজিক মাধ্যমে। এলাকার অসংখ্য প্রতিবাদী তরুণ ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে পরিবেশ রক্ষায় গাছ দুটির প্রাণ বাঁচানোর আকুতি জানাচ্ছেন। সওজ গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিলে প্রতিবাদী কর্মসূচি দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া গোদাগাড়ীর আইনজীবী সালাহউদ্দিন বিশ্বাস গাছ দুটি রক্ষার বিষয়ে বিনা পারিশ্রমিকে আইনগত সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

জানা যায়, স্থানীয় একটি মহল খুব সূক্ষ্মভাবেই গাছ কাটার পরিকল্পনা করেছেন। সম্প্রতি প্রেমতলী থেকে খেতুর হয়ে শিয়ালা পর্যন্ত রাস্তাটি ১০ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৬ ফুট করার কাজ শুরু হয়েছে। এই কাজের অজুহাতে প্রভাবশালী মহল দুই গাছের গোড়ায় দীর্ঘদিন ব্যবসা করা সবজি ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করেছেন। এখন প্রভাবশালী মহলটি বলছে, কড়াই গাছটি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই কেটে ফেলতে হবে।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, গাছটি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। শুধু কয়েকটা ডালপালা চলে যাওয়ায় মাইনুল ইসলাম তাঁর মার্কেটের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করতে পারছেন না। তাই তিনি গাছটি কাটার চেষ্টা করছেন। 

এ বিষয়ে মাইনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রাস্তার সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এতে গাছের কিছু শেকড় কেটে গেছে। গাছটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই সেটি কেটে ফেলার জন্য তাঁরা সড়ক বিভাগে আবেদন করা হয়েছে।

এদিকে এখন এলাকার একটি মহল প্রচার চালাচ্ছে, ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ গাছটি কাটা প্রয়োজন। তবে রাস্তার কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রোকেয়া কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী মো. মুকুল জানান, প্রেমতলী বাজারের ওই দুই গাছের স্থানে তাঁদের কোনো কাজ নেই। তাঁরা শুধু রাস্তার দুই পাশে তিন ফুট করে ছয় ফুট সম্প্রসারণ করেছেন। তাঁরা গাছের শেকড় কাটেননি। গাছের গোড়ার গোলচত্বর থেকে ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করার বিষয়ে জানেন না বলেও জানান এই ঠিকাদার।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রুহুল আমিন নয়ন বলেন, গাছ কাটার বিষয়ে যখন সবার স্বাক্ষর নেওয়া হয় তখন তাঁরও সই নেওয়া হয়। তবে এই গাছ কেউ কাটতে পারবে না। 

এ বিষয়ে সওজের রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হাকিম বলেন, গাছ কাটার আবেদনের বিষয়টি তিনি দেখেননি। এখন পর্যন্ত প্রেমতলীর গাছ কাটার সিদ্ধান্তও হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জীবন বিলিয়ে দিয়ে উত্তরার মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের বাঁচালেন, কে এই মাহরীন চৌধুরী

প্রধানমন্ত্রী দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না, সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়ার সুযোগ

পাচার করা ৭৮১ কোটি টাকা ফেরত দিতে চেয়েও জামিন পেলেন না নাসার চেয়ারম্যান নজরুল

পাইলটের শেষ বার্তা: বিমান ভাসছে না, নিচে পড়ছে

মেয়ের কফিনে বাবার চুমু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত