Ajker Patrika

নীতিমালা: দেশি চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপনে বিদেশি তারকা

বিনোদন প্রতিবেদক
আপডেট : ০৪ জুন ২০২১, ১১: ২৫
নীতিমালা: দেশি চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপনে বিদেশি তারকা

ঢাকা: দেশীয় চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপনে বিদেশি অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী, সংগীতজ্ঞ, সংগীতশিল্পী অংশগ্রহণ বিষয়ে নীতিমালা (২০২১ সংশোধিত) করেছে সরকার। নীতিমালাটি প্রকাশ করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। এতে মোট ১২টি পয়েন্টে চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপনে বিদেশি কোনো শিল্পীকে ব্যবহারের নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, দেশীয় চলচ্চিত্রে সরকারের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে বিদেশি অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী, সংগীতজ্ঞ, সংগীতশিল্পী ও বিজ্ঞাপনে বিদেশি শিল্পী অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। এমনকি সরকারের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্রে অংশ নিতে পারবেন।

তবে নীতিমালার তিন নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে, বিদেশি শিল্পীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন নির্মাণের ক্ষেত্রে সেই প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে প্রতি বিদেশি শিল্পীর জন্য ২ লাখ টাকা ফি (ভ্যাট ও আয়কর ছাড়া) এবং নির্মিত বিজ্ঞাপন প্রচারের সময় টিভি চ্যানেল কর্তৃক এককালীন প্রতি বিজ্ঞাপনের জন্য ২০ হাজার টাকা ফি হিসেবে সরকারকে দিতে হবে। নতুন এই নীতিমালা আগের চেয়ে নমনীয় করেছে। ২০২০ সালে প্রকাশিত নীতিমালায় জারি করা হয়েছিল, বিদেশি শিল্পীর জন্য ৫ লাখ টাকা এবং নির্মিত বিজ্ঞাপন প্রচারের সময় টিভি চ্যানেলের এককালীন প্রতি মিনিট ব্যাপ্তির জন্য ১০ হাজার টাকা সরকারকে দিতে হবে। এর দ্বারা কি বিদেশি শিল্পীদের আগমনে উৎসাহিত করা হলো? সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

চার নম্বর পয়েন্টে আছে, দেশের চলচ্চিত্রের শুটিং বিদেশে করতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদন প্রদানের ক্ষেত্রে একটি কমিটি যাচাই-বাছাই করে সুপারিশ প্রদান করবে। কমিটি সুপারিশ প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চলচ্চিত্রের গল্প ও চিত্রনাট্য অনুযায়ী বিদেশে শুটিংয়ের প্রয়োজন আছে কি না, খরচের বিবরণী যথাযথ কি না ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করবে। সেই কমিটির সভাপতি হিসেবে থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্তি সচিব (প্রশাসন ও চলচ্চিত্র)।

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, বিনা পারিশ্রমিকে বিদেশি অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী, সংগীতজ্ঞ, সংগীতশিল্পী ও বিজ্ঞাপনে বিদেশি শিল্পীদের অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ করা যাবে না। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে চিত্রনাট্য পেশ করার সময় বিদেশিদের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিপত্রের প্রয়োজনীয় তথ্যাদি জমা দিতে হবে। বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। নীতিমালার এই পয়েন্ট নিয়ে অনেকে সাধুবাদও জানিয়েছেন। কারণ অনেক শিল্পী বাংলাদেশে নিয়মিত কাজ করছেন। সেক্ষেত্রে তাঁরা ফ্রি করে দিচ্ছেন বলে একটা মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয় প্রায়ই। সেক্ষেত্রে সরকার যথাযথব্যবস্থা নিয়েছে।

বিদেশি শিল্পীর জন্য ২ লাখ টাকা ফি (ভ্যাট ও আয়কর ছাড়া) এবং প্রচারের সময় টিভি চ্যানেল কর্তৃক এককালীন প্রতি বিজ্ঞাপনের জন্য ২০ হাজার টাকা ফি হিসেবে সরকারকে দিতে হবে।

অপরাধ দমন, অপরাধীর শাস্তি অথবা তাদের বিচার করার দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পূর্ণভাবে উপহাস করা বা মর্যাদাহানি ঘটানো অপরাধমূলক কার্যকলাপকে লাভজনক করে দেখানো অথবা সাধারণ জীবন প্রবাহের নিত্যনৈমিত্তিক সহজ ব্যাপার হিসেবে প্রদর্শন করা যাবে না।

বিনা পারিশ্রমিকে বিদেশি অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী, সংগীতজ্ঞ, সংগীতশিল্পী ও বিজ্ঞাপনে বিদেশি শিল্পীদের অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ করা যাবে না

বিদেশি অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী, সংগীতজ্ঞ, সংগীতশিল্পী ও বিজ্ঞাপনে বিদেশি শিল্পীদের এ দেশে আগমন, অবস্থান ও প্রত্যাবর্তনের দৈনিক শিডিউল পূর্বাহ্নেই প্রযোজক/নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লিখিতভাবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় অথবা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনকে জানাতে হবে। শিডিউল পরিবর্তন হলেও জানাতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এই পয়েন্টকে অনেকে বাড়াবাড়ি বলছেন। কারণ অনেক ক্ষেত্রে এতে শুটিংয়ের গোপনীয়তা নষ্ট হবে।

যদি বিদেশি শিল্পীদের কার্যক্রমে নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ধর্মের সংবেদনশীলতা নষ্ট করে, নৈতিকতাহীন-অশ্লীলতা, বর্বরতা, অপরাধকে সমর্থন করা হয় এবং নকল গান-সুর ব্যবহার করলে মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত দিতে পারবে।

এই নীতিমালা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। নির্মাতা জসিম উদ্দীন বলেন, ‘অনুভূতি ইস্যুকে প্রাধান্য দিয়েছে। আর সরকারি চাকরিজীবীদের ওপর আরও বেশি দ্বারস্থ হতে হবে। তাঁদের সুপারিশ ছাড়া সিনেমা হবে না। স্ক্রিপ্ট ফাইনালের আগে হাইকোর্টের বিচারপতি লেভেলের কোনো আইন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ লাগবে যে নীতিমালার কোন কোন ধারায় আটকা পড়বে বুঝতে। এটা চলচ্চিত্রবান্ধব নীতিমালা হতে পারে না। দ্বারে দ্বারে বাধাগ্রস্ত হবে চলচ্চিত্র।’

নীতিমালায় বলা হয়েছে, অপরাধমূলক কাজকে ক্ষমা করা। অপরাধীর অপরাধ করার কৌশল ও কার্যপ্রণালি এমনভাবে দেখানো, যা নতুন অপরাধের কৌশল সৃষ্টিতে সহায়ক হবে; অপরাধীকে সম্মানজনক চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা এবং দর্শকদের থেকে সহানুভূতি আদায়, অপরাধ দমন, অপরাধীর শাস্তি অথবা তাদের বিচার করার দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পূর্ণভাবে উপহাস করা বা মর্যাদাহানি ঘটানো অপরাধমূলক কার্যকলাপকে লাভজনক করে দেখানো অথবা সাধারণ জীবন প্রবাহের নিত্যনৈমিত্তিক সহজ ব্যাপার হিসেবে প্রদর্শন করা যাবে না।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্মাতা বলছেন, ‘সেটা কি সমাজের স্বাভাবিক প্রতিচ্ছবি হবে? বিদেশি যে শিল্পী বাংলাদেশে অভিনয় করবেন, তিনি তো বাংলাদেশের কোনো গল্পেই অভিনয় করবেন। সেখানে এই সমাজে কী ঘটছে তা কি তুলে ধরা যাবে না? এখানে দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা নেই? তাঁদের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে সমস্যা কোথায়? আমাদের পাশের দেশ ভারতের সেন্সরশিপ দেখলেই বোঝা যাবে আমাদের হাত কতটা বেঁধে রাখা হচ্ছে। চলচ্চিত্র সমাজেরই প্রতিচ্ছবি। রোমান্টিক ছবি ছাড়া ভিন্ন কিছু ভাবার সুযোগ নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত