Ajker Patrika

সত্যজিতের ‘অনঙ্গ বউ’

বিনোদন প্রতিবেদক
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২১, ১৪: ৪৭
Thumbnail image

প্রথম আলাপে ইন্দ্রপুরের স্টুডিওতে রীতিমতো প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছিলেন মানিকদা। আলাপের একপর্যায়ে চিৎকার করে বলে উঠলেন, ‘আমি অনঙ্গ বউ পেয়ে গেছি।’ মনে পড়ে, ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর আগে সিঁথিতে সিঁদুর দেওয়া হয়। সাধারণ একটি শাড়ি পরে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই। বলেছিলেন, ‘মেয়েটি তো দারুণ ফটোজেনিক!’

ভারতের শান্তিনিকেতন ও বীরভূমে ‘অশনি সংকেত’ সিনেমার শুটিং করেছিলাম। শান্তিনিকেতনে শুটিং করার দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে। বিশেষ করে শান্তিনিকেতনে যে বাড়িটিতে শুটিং করেছিলাম, সেই বাড়িটির কথা এবং শুটিং করার কথা এবং শুটিং করার ফাঁকে আড্ডার সময়ের কথাগুলো খুব মনে পড়ে।

এই ছবির মাধ্যমেই প্রথম বিদেশে কোনো উৎসবে গিয়েছিলাম। মুক্তির আগেই ছবিটি দেখানো হয়েছিল বার্লিন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। আমাকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। সিনেমাটিকে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ‘গোল্ডেন বিয়ার’ দেওয়া হয়। সত্যজিৎ রায়ের নামের পাশাপাশি আমার নামটিও সবাই জানলেন। ওটা ছিল বিরাট প্রাপ্তি। ওই প্রথম আমার এমন বড় কোনো উৎসবে যাওয়া।

সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ববিতাসিনেমা মুক্তির পরও কলকাতায় গেলেই মানিকদার জন্য পদ্মার ইলিশ আর চিংড়ি নিয়ে যেতাম। উনি খুব আদর করতেন আমাকে। দাদার একটা চিঠি এখনো আমার কাছে আছে, তিনি লিখেছেন, ‘তোকে বোম্বের ছবিতে নেবার জন্যে বেশ কিছু প্রডিউসার আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। তুই যদি করিস, তাহলে ওদের ঢাকায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। নিজেই কথা বলে নে। নিজেরটা নিজে বুঝে নিবি।’

মারা যাওয়ার বেশ কিছুদিন আগে উনাকে দেখতে গিয়েছিলাম। তখন খুব একটা কথা বলতে পারেন না। হাসপাতাল থেকে একটু সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছিলেন। বউদিকে বললাম, মানিকদাকে দেখতে এসেছি।

বউদি বললেন,

‘কথা বলতে পারবে না। ভেতর গিয়ে একটু দেখে যা।’

ওটাই আমার শেষ দেখা। তবে তাঁর সঙ্গে আর কথা হয়নি। তার কয়েক মাস পর তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন পরপারে।

তাঁর হাত ধরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, জয়া ভাদুড়ি, শর্মিলা ঠাকুর সিনেমায় আসেন। আমারও নতুন যাত্রা শুরু হলো তাঁর ‘অশনি সংকেত’ সিনেমায় কাজ করার মাধ্যমে। একজীবনে কত কিংবদন্তির জন্মদাতা তিনি!

অনুলিখন: মীর রাকিব হাসান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত