Ajker Patrika

রত্না থেকে শাবানা: একাত্তর বছরে কিংবদন্তি অভিনেত্রী

আপডেট : ১৫ জুন ২০২৩, ১৪: ৫১
রত্না থেকে শাবানা: একাত্তর বছরে কিংবদন্তি অভিনেত্রী

মানুষের হৃদয়ে তাঁর মতো আবেগী হয়ে এখন পর্যন্ত ধরা দিতে পারেনি কেউ। মাত্র ৯ বছর বয়সে তিনি নাম লিখিয়েছিলেন সিনেমায়, এরপর বাকিটা ইতিহাস। তাঁকে ছাড়া বাংলা সিনেমার ইতিহাস লেখা অসম্ভব, তিনি জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা।

আজ বৃহস্পতিবার বাংলা সিনেমার কালজয়ী অভিনেত্রী শাবানার জন্মদিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে বিদায় জানানোর ২৬ বছর হলেও আজও শাবানাকে কেউ ভোলেনি।

ছোটবেলা থেকেই শাবানা ছিলেন খানিক চঞ্চল আর অনেক বেশি লাজুক। পড়াশোনায় মন ছিল না, তাই মাধ্যমিকেই ইতি টানেন। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালীন চিত্র পরিচালক এহতেশামের সিনেমায় অভিনয়ের ডাক পান। স্টার মেকার নির্মাতা এহতেশাম ছিলেন তাঁর বাবার খালাতো ভাই। ১৯৬২ সালে ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে তাঁর রুপালি অধ্যায়ের সূচনা হয়। এহতেশামই তাঁর পারিবারিক নাম আফরোজা সুলতানা রত্না পাল্টে রাখেন শাবানা। ইবনে মিজান পরিচালিত ‘আবার বনবাসে রূপবান’ (১৯৬৬)-এ শিশুশিল্পী এবং মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘ডাক বাবু’ (১৯৬৬) চলচ্চিত্রে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন। কয়েকটি সিনেমায় নৃত্যশিল্পী ও অতিরিক্ত শিল্পী হিসেবেও কাজ করেছেন।

কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা১৯৬৭ সালে এহতেশামের ‘চকোরী’ সিনেমায় নায়িকা হিসেবে অভিষেক হয় শাবানার। নায়িকা হিসেবে প্রথম সিনেমাতেই তিনি দর্শকপ্রিয়তা লাভ করেন। ব্যবসাসফল সিনেমাটি থেকে শুরু, এরপর তিনি একে একে উপহার দিতে থাকেন দর্শকনন্দিত ও ব্যবসাসফল সিনেমা। সাড়ে তিন দশকের কর্মজীবনে প্রায় ৩০০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন শাবানা। নায়ক আলমগীরের সঙ্গে তিনি জুটি বেঁধে ক্যারিয়ারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এ ছাড়া তিনি নাদিম, রাজ্জাক, ফারুক, জসীম, সোহেল রানাসহ জনপ্রিয় নায়কদের সঙ্গে জুটি বেঁধে উপহার দিয়েছেন বহু নন্দিত সিনেমা।

তিনি মোট ১০ বার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সেরা অভিনেত্রী হিসেবে ৯ বার এবং প্রযোজক হিসেবে একবার। এই রেকর্ডও আজ পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারেনি। ২০১৭ সালে আজীবন সম্মাননাও পেয়েছেন শাবানা। অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে প্রযোজক সমিতি পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, আর্ট ফোরাম পুরস্কার, নাট্যসভা পুরস্কার, কামরুল হাসান পুরস্কার, নাট্যনিকেতন পুরস্কার, ললিতকলা একাডেমি পুরস্কার ও কথক একাডেমি পুরস্কার।

কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা১৯৭৩ সালে সরকারি কর্মকর্তা ওয়াহিদ সাদিককে বিয়ে করেন তিনি। দুজনে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন প্রযোজনা সংস্থা এসএস প্রোডাকশন। ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে নির্মিত হয়েছে অনেক জনপ্রিয় সিনেমা।

বিয়ের পর নায়িকাদের জনপ্রিয়তা কমে যায়, সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করে ২১ বছর বয়সেই বিয়ে করে সংসার ও সিনেমা দুটোই সমান্তরালভাবে সামলেছেন শাবানা। ১৯৯৭ সালের শেষ দিকে এসে অভিনয় কমিয়ে দেন এবং হঠাৎ করেই সিনেমা থেকে বিদায় নেন তিনি। এরপর স্থায়ী হন যুক্তরাষ্ট্রে। মাঝেমধ্যে দেশে আসেন, কিছুদিন থেকে আবার চলে যান শাবানা।

কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানাশাবানা অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘ভাত দে’, ‘অবুঝ মন’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘সত্য মিথ্যা’, ‘রাঙ্গা ভাবী’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘ওরা এগারোজন’, ‘বিরোধ’, ‘আনাড়ি’, ‘সমাধান’, ‘জীবনসাথী’, ‘মাটির ঘর’, ‘লুটেরা’, ‘সখী তুমি কার’, ‘কেউ কারো নয়’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘স্বামী কেন আসামি’, ‘দুঃসাহস’, ‘লক্ষ্মীর সংসার’, ‘পুত্রবধূ’, ‘আক্রোশ’, ‘চাঁপাডাঙ্গার বউ’ প্রভৃতি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত