Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ বিশ্ববিদ্যালয় মুমতাহিনার অপেক্ষায়

মো. আশিকুর রহমান
মুমতাহিনা করিম মীম
মুমতাহিনা করিম মীম

ছোটবেলায় ঘরের দেয়াল ছিল তাঁর ক্যানভাস, রংতুলি ছিল ভাব প্রকাশের মাধ্যম। আজ সেই শিল্পীর অপেক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ।

এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সব বৃত্তি মিলিয়ে তিনি প্রস্তাব পেয়েছেন প্রায় ৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার বৃত্তির প্রস্তাব—বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। এই তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা হেনড্রিক্স কলেজ, যেখানে তিনি পেয়েছেন ফুল-রাইড হেইস মেমোরিয়াল স্কলারশিপ। প্রতিবছর এই সম্মাননা পান মাত্র চারজন। চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে পেয়েছেন রাঙ্গুনিয়ার মেয়ে মুমতাহিনা করিম মীম।

শৈশবের সেই দিনগুলো

রংতুলি হাতে ছোট্ট মীম দৌড়েছেন বারান্দা থেকে উঠোনে। মায়ের ল্যাপটপে ‘পেইন্ট’ খুলে ডিজিটাল আঁকাআঁকি শুরু। ক্লাস থ্রিতে ইউটিউব দেখে শিখে ফেলেন এইচটিএমএল আর সিএসএস! দ্বিতীয় চেষ্টায় ‘হ্যালো ওয়ার্ল্ড’ দেখামাত্রই তাঁর চোখে নতুন পৃথিবী। সপ্তম শ্রেণিতে নিজের স্কুলের ওয়েবসাইট বানিয়ে স্কুলজুড়ে হইচই ফেলে দেন।

চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে এগিয়ে চলা

প্রযুক্তির জগতে মেয়েদের অংশগ্রহণ নিয়ে নানা নেতিবাচক মন্তব্য ও সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির মুখোমুখি হয়েও থেমে থাকেননি মুমতাহিনা। নবম শ্রেণিতে প্রতিষ্ঠা করেন একটি প্রোগ্রামিং ক্লাব, যার নেতৃত্বে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন। নিজের আগ্রহ থেকে কোভিড-১৯-এর সময় রোবোটিকস শেখা শুরু করেন এবং নিজেই বানিয়ে ফেলেন ফুড-সার্ভিং রোবট ‘কিবো’। এসএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জনের পাশাপাশি বিতর্ক, সাহিত্য, সংগীত, আর্ট, সায়েন্স ফেয়ারে অংশগ্রহণ এবং পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে গড়ে তোলেন একটি ব্যালান্সড প্রোফাইল। নিজের ছোট রুমকেই পরিণত করেন একটি হোম ল্যাবে।

ঘুম না এলেও স্বপ্ন ছাড়েননি

‘পরিবারে কেউ বিদেশে পড়েনি’—এই কথা যে কারও বাধা হতে পারে, মুমতাহিনার হয়নি। আবেদনপত্র, এসএটি, রিকমেন্ডেশন, ইন্টারভিউর প্রস্তুতি—সব তিনি একাই সামলেছেন। আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তিনি হাল ছাড়েননি। কখনো রাত জেগে অ্যাপ্লিকেশন লিখেছেন, কখনো খরচ চালাতে চাকরি করেছেন বিদেশি কোম্পানিতে। ‘সেই সময়টা ছিল এক মানসিক যুদ্ধ’—বলছিলেন মুমতাহিনা। ‘প্রতিদিন ছিল অপেক্ষা, অনিশ্চয়তা আর নিজেকে বিশ্বাস করার লড়াই।’ শেষমেশ বিজয়—হেনড্রিক্স কলেজে ফুল-রাইড স্কলারশিপ। বাকি প্রস্তাবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—ফ্রাঙ্কলিন অ্যান্ড মার্শাল কলেজ থেকে ৩ দশমিক ৬ কোটি টাকা; রোডস কলেজ থেকে ২ দশমিক ৫ কোটি টাকা; নক্স কলেজ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা এবং ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো বোল্ডার থেকে ১ দশমিক ২ কোটি টাকা (ইঞ্জিনিয়ারিং অনার্স)। মুমতাহিনা মনে করেন, তাঁর সাফল্যের তিনটি মূল ভিত্তি—সেলফ-লার্নিং, ব্যতিক্রমী প্রোফাইল এবং অধ্যবসায়।

নতুনদের জন্য বার্তা

মুমতাহিনা বিশ্বাস করেন, স্বপ্ন কখনোই লিঙ্গ, স্থান কিংবা অবস্থান দেখে না। তিনি বলেন, ‘স্বপ্ন সেটা নয়, যা ঘুমিয়ে দেখা হয়। স্বপ্ন হলো সেটাই, যা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।’ তাঁর মতে, ভালো কিছু পেতে হলে সময়, শ্রম আর সাহস দিয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে হয়।

নতুন প্রজন্মের জন্য তাঁর পরামর্শ—‘শুধু একাডেমিক রেজাল্ট নয়, প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস, ক্রিটিক্যাল থিংকিং এবং সৃজনশীলতা। চেষ্টা, অধ্যবসায় আর নিজের ওপর বিশ্বাস থাকলে বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে উঠে এসেও বিশ্বমঞ্চে জায়গা

করে নেওয়া সম্ভব।’ সবশেষে মুমতাহিনা বলেন, ‘এই পথ শুধু আমার একার নয়। এটি সেই সব সাহসী মেয়ের গল্প, যারা প্রযুক্তি, শিল্প, আর স্বপ্ন দিয়ে গড়ে তুলতে চায় এক নতুন বাংলাদেশ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খানসামায় ১১ বছর আগের ঘটনায় সাবেক জামায়াত নেতার মামলা

নিউইয়র্কে মামদানির জয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে মোদি সমর্থকেরা

বিশেষ বিমানে ২৫০ জনকে সীমান্তে এনেছে ভারত, শিগগিরই ‘পুশইন’

হুসাইন (রা.)-এর হত্যার পেছনে দায়ীদের মৃত্যু হয়েছিল যেভাবে

মুরাদনগরের মা, মেয়ে ও ছেলে হত্যাকাণ্ডের হোতা চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল, নেপথ্যে মাসোহারা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত