Ajker Patrika

বিশ্বমঞ্চে টানা সাফল্যে ইউআইইউ

আব্দুর রাজ্জাক খান
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৮: ০৯
বিশ্বমঞ্চে টানা সাফল্যে ইউআইইউ

২০২৫ সাল যেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) জন্য এক অনন্য অর্জনের বছর। বছরের শুরু থেকে একের পর এক আন্তর্জাতিক মঞ্চে জয়রথ ছুটিয়ে চলেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রোবোটিকস হোক, মহাকাশবিজ্ঞান কিংবা সাগরতলের প্রযুক্তি—প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইউআইইউর উদ্ভাবনী টিমগুলো বিশ্বের নজর কাড়ছে। এই ধারাবাহিক সাফল্য শুধু ইউআইইউর নয়, পুরো দেশের জন্যই গর্বের।

চলুন, জেনে নেওয়া যাক ২০২৫ সালে ইউআইইউর তিনটি উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক অর্জনের কথা—

ইউআইইউ-মার্স-রোভার

ক্যানস্যাট প্রতিযোগিতায় বিশ্বে সপ্তম, এশিয়ায় দ্বিতীয় এবং বাংলাদেশে প্রথম

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় অনুষ্ঠিত ক্যানস্যাট ২০২৫ প্রতিযোগিতায় ‘ইউআইইউ অ্যাসেন্ড’ দল বিশ্বের সপ্তম, এশিয়ায় দ্বিতীয় এবং বাংলাদেশে প্রথম স্থান অর্জন করে। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনটিক্যাল সোসাইটি, যার পৃষ্ঠপোষক ছিল নাসা, ইউএস নেভাল রিসার্চ ল্যাব, সিমেন্সসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। ক্যানস্যাট একটি স্যাটেলাইট-ক্যাপসুল নির্মাণ ও উৎক্ষেপণভিত্তিক চ্যালেঞ্জ, যেখানে শিক্ষার্থীরা বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে মহাকাশ প্রযুক্তি রপ্ত করেন। সব মিলিয়ে ছয়টি ধাপে এই প্রতিযোগিতা সাজানো ছিল।

দলের টিম লিডার মো. আব্দুল্লাহ্ আল সাদ বলেন, ‘২০২৪ সালে বিশ্বে ১১তম হয়েছিলাম। এবার আরও এগিয়েছি। সাফল্যের এই ধারাবাহিকতা আমাদের আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। মহাকাশ গবেষণাকে আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’ দলের অ্যাডভাইজার ছিলেন ইইই বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম রেজওয়ান খান এবং মেন্টর ছিলেন ইইই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাদিদ মুনির।

ইউআইইউ-অ্যাসেন্ড-দল-ক্যানস্যাট

রোভার চ্যালেঞ্জে চতুর্থবার চ্যাম্পিয়ন

যুক্তরাষ্ট্রের ইউটা স্টেটে অনুষ্ঠিত ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ (ইউআরসি) ২০২৫-এ টানা চতুর্থবারের মতো এশিয়ার শীর্ষ স্থান দখল করে নেয় ইউআইইউ মার্স রোভার টিম। প্রতিযোগিতার ‘সায়েন্স মিশনে’ পূর্ণ ১০০-তে ১০০ স্কোর করে প্রথমবারের মতো এশিয়ার হয়ে ‘সেরা বিজ্ঞান দল’-এর স্বীকৃতি অর্জন করে তারা।

৩৮টি দেশের দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ৩২৫.৯৩ পয়েন্ট পেয়ে তারা বিশ্বে ৬ নম্বরে অবস্থান করে। চারটি মিশন—অনুসন্ধান, স্বয়ংক্রিয় নেভিগেশন, চরম পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ইকুইপমেন্ট সার্ভিসিং—সব কটিতে দক্ষতা দেখিয়ে তারা এই কৃতিত্ব অর্জন করে।

টিম লিডার মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে এখনো রোবোটিকস চর্চার পরিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়নি। কিন্তু আমরা হাল ছেড়ে দিইনি। মেকানিক্যাল সাপোর্ট ছাড়াই আমাদের দল নিজ হাতে রোভার ডিজাইনও নির্মাণ করেছে। এই অর্জন আমাদের পরিশ্রম আর বিশ্বাসের ফসল।’

দলের তত্ত্বাবধানে ছিলেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক মো. আবিদ হোসাইন। সাব টিমে নেতৃত্ব দিয়েছেন সিয়াম বিন রশীদ, গাজী তাওসিফ তুরাবি, আহমেদ জেবাইল সৌখিন, মো. ইফতে ফয়সাল ও সাইফ আল সাদ।

ইউআইইউ-মেরিনার

সমুদ্রের তলদেশেও সাফল্য

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের থান্ডার বে ন্যাশনাল মেরিন স্যাঙ্কচুয়ারিতে অনুষ্ঠিত মেট রোভ কম্পিটিশন ২০২৫-এ অংশ নিয়ে ইউআইইউর ‘মেরিনার’ দল পাইওনিয়ার ক্লাসে বিশ্বে পঞ্চম এবং এশিয়ায় প্রথম স্থান অর্জন করে। পাশাপাশি তারা ‘সেরা টেকনিক্যাল ডকুমেন্টেশন’-এর স্বীকৃতিও অর্জন করে। আটটি মানদণ্ডে প্রতিযোগিতার দলগুলোকে মূল্যায়ন করা হয়—পণ্য প্রদর্শন, প্রকৌশল উপস্থাপনা, বিপণন, করপোরেট দায়বদ্ধতা, নিরাপত্তাসহ নানা দিক।

দলের টিম লিডার আনিকা তাবাসসুম অর্চি বলেন, ‘বিশ্বসেরা টেকনিক্যাল ডকুমেন্টেশন পুরস্কার পাওয়া আমাদের জন্য এক স্বপ্নপূরণ। টানা পরিশ্রম, উদ্ভাবনী ভাবনা আর রাতজাগা কষ্ট আজ সার্থকতা পেয়েছে।’

দলের পেছনে ছিলেন অধ্যাপক ড. এম রিজওয়ান খান, ড. এ কে এম মুজাহিদুল ইসলাম, প্রভাষক ফাহিম হাফিজ ও সাইফুর রহমান।

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, তুরস্কসহ বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পেছনে ফেলে ইউআইইউর এই তিনটি টিম প্রমাণ করেছে—বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের দৌড়ে কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই। এমন সাফল্যই আগামী দিনের তরুণদের স্বপ্ন দেখতে শেখাবে—একটি দেশের নাম তুলে ধরতে হলে অদম্য ইচ্ছা, উদ্ভাবনী মনন আর কিছু সাহসী পদক্ষেপ যথেষ্ট।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খানসামায় ১১ বছর আগের ঘটনায় সাবেক জামায়াত নেতার মামলা

নিউইয়র্কে মামদানির জয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে মোদি সমর্থকেরা

বিশেষ বিমানে ২৫০ জনকে সীমান্তে এনেছে ভারত, শিগগিরই ‘পুশইন’

হুসাইন (রা.)-এর হত্যার পেছনে দায়ীদের মৃত্যু হয়েছিল যেভাবে

‘আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট’ মালয়েশিয়াফেরত ৩ জন, মামলার প্রস্তুতি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত