Ajker Patrika

এ যেন বইয়ের জগৎ

আজিনুর রহমান আজিম, পাটগ্রাম (লালমনিরহাট)
এ যেন বইয়ের জগৎ

একটার ওপর একটা বই থরে থরে সাজিয়ে তৈরি করা হয়েছে প্রবেশদ্বারের পিলার! এর নিচ দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে একটি শহীদ মিনার। দেখলে মনে হবে, বই খুলে রাখা হয়েছে পড়ার জন্য। পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে বই আর কলম দিয়ে তৈরি হৃদয় পুস্তক চত্বর। দেয়ালেও আছে বইয়ের প্রচ্ছদ। মনে হবে—এ যেন এক বইয়ের জগৎ। 

এটি কোনো থিম পার্কের অংশ নয়। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া আদর্শ কলেজের ক্যাম্পাস। কলেজটি হাতীবান্ধা উপজেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে গোতামারী ইউনিয়নের কাকিনা বাইপাস সড়কের পাশে। 

দইখাওয়া আদর্শ কলেজের এ বইয়ের জগতে জায়গা পেয়েছে বাংলা ও ইংরেজি ভাষার সাহিত্যিকদের লেখা চিরায়ত ৫০টি বইয়ের প্রতিকৃতি। ব্যতিক্রম ও দৃষ্টিনন্দন প্রবেশদ্বারটি তৈরি করা হয়েছিল শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা এবং বই পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে। এখন সেটি হয়ে দাঁড়িয়েছে দর্শনীয় জায়গা।

হাতের মুঠোয় পৃথিবী
বই পড়লে পৃথিবী হাতের মুঠোয় ধারণ করা যায়। শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এ ধারণা ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নেন দইখাওয়া আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোফাজ্জল হোসেন। তিনি প্রথমে শহীদ মিনারের নকশায় জুড়ে দেন স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ। সে নকশায় যোগ করেন একটি বইয়ের খোলা দুটি পাতা। এর একটিতে ফুটিয়ে তোলা হয় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এবং অন্যটিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হওয়ার আনন্দ প্রকাশের বিভিন্ন দৃশ্য। পরে তিনি কলেজের প্রধান ফটকের পিলার তৈরি করতে বইয়ের আদল ব্যবহারের পরিকল্পনা করেন। বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদকে জানানো হয়। পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কলেজের ব্যতিক্রমী এ তোরণ তৈরির কাজ শুরু করা হয়। কলেজের নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ২ বছর চলে এর নির্মাণকাজ। ব্যয় হয় প্রায় ১০ লাখ টাকা। এ নকশা করতে মোফাজ্জল হোসেন সহযোগিতা নেন দুজন শিক্ষার্থীর। তাঁদের একজন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেভাল আর্কিটেকচার বিভাগের আসাদুজ্জামান শাকিল এবং অন্যজন কলেজটির সাবেক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী গৌরাঙ্গ রায়। 

নকশা করার জন্য বেছে নেওয়া হয় বাংলা ভাষার ২৫টি এবং ইংরেজি ভাষার ২৫টি চিরায়ত বই। মূল প্রবেশদ্বারের একটিতে এবং অন্যটিতে ইংরেজি বইগুলোর আদল তৈরি করা হয়; এগুলো তৈরি করা হয় ইট, সিমেন্ট ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে। শুধু তা-ই নয়। প্রবেশদ্বারে কলেজের নামের পাশে বাংলাদেশের মানচিত্র এবং সবার ওপরে হাতের মুঠোয় বিভিন্ন দেশের পতাকাসংবলিত পৃথিবীর মানচিত্র নির্মাণ করা হয়। 

যে বইগুলো আছে
ফটকটির দুই পিলার এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন দেখে মনে হবে অনেকগুলো বই এখানে থরে থরে সাজিয়ে রাখা। বাঁ পিলারের সবার ওপরে রাখা হয়েছে লেখক আনিসুল হকের ‘মা’ বইটি। ডান দিকের পিলারে সবার ওপরে আছে ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মাদার’ বইটি। বাঁয়ে সবার নিচে মুনীর চৌধুরী রচিত ‘কবর’ আর ডান পিলারে আছে অমৃত সেনের লেখা ‘ডেভেলপমেন্ট অ্যাজ ফ্রিডম’।   

হাতীবান্ধার গোতামারী গ্রামের আমজাদ হোসেন (৪৫) বলেন, ‘কলেজটি অনেক সুনাম করেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন দেখতে আসে। আমাদেরও অনেক ভালো লাগে।’ 

দইখাওয়া আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোফাজ্জল হোসেন জানান, ১৯৯৯ সালে ৩ একর ১০ শতাংশ জমির ওপর স্থাপিত হয় কলেজটি। বই দিয়ে প্রবেশদ্বার এবং অন্যান্য স্থাপনা তৈরির খবর জেনে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তা তাঁকে এবং কলেজের অন্যান্য শিক্ষককে ফোন দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন সময়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের অনেকে এসে সরাসরি দেখে প্রশংসা করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা জানতে চান, কীভাবে করা হয়েছে এর পরিকল্পনা। 

আছে স্থানীয় মানুষের প্রতিকৃতি
শুধু যে কলেজের মূল প্রবেশদ্বার তৈরি হয়েছে বই দিয়ে, তা নয়; পাশের দেয়ালও বইয়ের প্রচ্ছদের নকশা দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। প্রবেশদ্বারের পশ্চিম পাশের দেয়ালে ১৬টি এবং পূর্ব দিকের দেয়ালে ২৬টি বইয়ের প্রচ্ছদ তৈরি করা হয়েছে সিমেন্ট দিয়ে। তৈরি করা হয়েছে হরিধানের আবিষ্কারক হরিপদ কাপালী, বইপ্রেমী পলান সরকার এবং রাস্তার পাশে প্রায় ১২ হাজার গাছের চারা রোপণ করা নওগাঁর গহের আলীর প্রতিকৃতি। এ ছাড়া হাঁড়িভাঙ্গা আম দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার পথিকৃৎ মিঠাপুকুরের মাসিমপুর গ্রামের আব্দুস সালাম সরকার এবং আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র ৯ বছর বয়সে আনন্দ শিক্ষা নিকেতন গড়ে তোলা  ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাবর আলীর প্রতিকৃতিও আছে এখানে। স্থানীয় মহৎপ্রাণ মানুষদের এই প্রতিকৃতি মানুষকে আকৃষ্ট করছে ভীষণভাবে।

অন্যান্য সুবিধা
কলেজটিতে প্রায় ১ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এখানে বাংলা বিষয়ে অনার্স পাস কোর্স চালু আছে। শিক্ষক, কর্মচারীসহ লোকবল রয়েছেন ৫৪ জন। 

কলেজটির শিক্ষার্থীরা যেন ১০ টাকায় দুপুরে খাবার খেতে পারেন, সে ব্যবস্থা করেছেন অধ্যক্ষ মো. মোফাজ্জল হোসেন। কলেজের লাইব্রেরি এবং মিলনায়তনের দোতলার ছাদে করা হয়েছে ছাদবাগান। কলেজের পাশের জমিতে মৌসুমি শাকসবজির চাষাবাদ করা হয়। এখান থেকে উৎপাদিত শাকসবজি দুপুরের খাবারে রান্না করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত