Ajker Patrika

অনুবাদ করার ৫ কৌশল

আপডেট : ২৭ মে ২০২৪, ০৮: ৫৪
Thumbnail image

অনুবাদ হলো এক ভাষায় লিখিত বা প্রকাশিত কোনো বিষয়কে অন্য ভাষায় রূপান্তর করা। পৃথিবীতে প্রায় ৭ হাজার ৯৯টি ভাষা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার অন্যতম উপায় হচ্ছে ভাষার রূপান্তর। অন্য ভাষার রচিত বিভিন্ন শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞানবিষয়ক জ্ঞান অর্জনসহ একাডেমিক পড়াশোনায় অনুবাদের বিকল্প নেই। তাই সঠিকভাবে অনুবাদ করতে শেখা খুব জরুরি। সঠিকভাবে অনুবাদ করার পাঁচটি কৌশল নিয়ে লিখেছেন তাসনুভা চৌধুরী। 

পরিচিতি: অনুবাদ সাধারণত ৪ ধরনের। 

  • সাহিত্য অনুবাদ
  • পেশাদার অনুবাদ
  • প্রযুক্তিগত অনুবাদ 
  • প্রশাসনিক অনুবাদ

ভাষা জানা ও বোঝা
যেকোনো ভাষা থেকে অপর ভাষায় কোনো বিষয় অনুবাদ করতে হলে দুটি ভাষাতেই সমানভাবে দখল থাকতে হবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইদানীং যেকোনো ভাষার আক্ষরিক অনুবাদ খুব সহজে করা যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আক্ষরিক অনুবাদ হয়, যা কিছুটা কৃত্রিম ও আড়ষ্ট। এর মধ্য দিয়ে মূল ভাষার অনুভূতি ও রচনাশৈলী আক্ষরিক অনুবাদের সঙ্গে হারিয়ে যায়। বিপরীতে দুটো ভাষা ভালোভাবে বুঝলে খুব সহজে মূল রচনার ভাব ও প্রাঞ্জলতা রক্ষা করা সম্ভব, ভাবানুবাদও সফল হয়; তাই অনুবাদে দক্ষ হতে চাইলে আগে ভাষা জানা ও বোঝা খুব জরুরি।

বেশি বেশি পড়তে হবে
কোনো বিষয়ে অনুবাদ করতে হলে মূল ভাষার রচনার সব শব্দ ও ভাব খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে। তাই অনুবাদ করার আগে নির্ধারিত ভাষার বিভিন্ন লেখা বারবার পড়া জরুরি। এর মধ্য দিয়ে মূলভাব বুঝতে সহজ হবে। পাশাপাশি মূলভাব অক্ষুণ্ন রেখে অনুবাদ করতে পারবেন। এ ছাড়া ভাবানুবাদ করার সময় কাঠামোগতভাবে অনেক সময় কিছু বিষয়ে পরিবর্তন করার প্রয়োজন পড়ে। কারণ, প্রতিটি ভাষার নিজস্ব সত্তা অনুসরণ করে রচনার ভাব রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। তবে দলিল-দস্তাবেজ, বিজ্ঞান, আইন, সংখ্যা, তত্ত্ব অনুবাদ করার সময় মূল অংশের সঙ্গে ঠিক রেখে আক্ষরিকভাবে অনুবাদ করতে হবে।

শব্দভান্ডার বাড়ানো
অনুবাদ করার সময় মাঝে মাঝে নতুন কিছু শব্দের খোঁজ পাওয়া যায়। সেই শব্দগুলো নিজের শব্দভান্ডারে যুক্ত করে নেওয়া একজন ভালো অনুবাদকের দায়িত্ব। কারণ, অনুবাদকের শব্দভান্ডার যত বেশি সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, অনুবাদের কাজও তত বেশি সুন্দর ও সাবলীল হবে। তবে নতুন কোনো শব্দের অর্থ জানা না থাকলে অভিধানের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে অভিধান ব্যবহার করে সেই শব্দ ভালোভাবে বুঝে অনুবাদ করতে হবে, যেন দুটো রচনার বাচনভঙ্গি অপরিবর্তিত থাকে। ভাষা অনুসারে কিছু শব্দের অর্থ ব্যবহার না করে সেই শব্দগুলোর পরিভাষাও প্রয়োগ করতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে ইংরেজি ‘স্কুল’ শব্দের কথাই ধরা যাক, এর বাংলা অর্থে ‘বিদ্যালয়’ লেখা যেতে পারে। কিন্তু পরিভাষা যদি দুর্বোধ্য বা অপ্রচলিত মনে হয়, তাহলে প্রচলিত উচ্চারণ লিখতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইংরেজি ‘রেফ্রিজারেটর’ শব্দের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। অনুবাদের সময় শব্দটির অর্থ ‘হিমায়ক’ লেখার বদলে ‘রেফ্রিজারেটর’ লেখাই বেশি কার্যকর।

ব্যাকরণের নিয়ম রক্ষা
মূলভাব ঠিক রাখার পাশাপাশি মূল ভাষার বাচ্য, ক্রিয়ার কাল অনুবাদে বহাল রাখতে হবে। বাংলা ভাষারীতির অনুবাদের ক্ষেত্রে সাধু ও চলিত ভাষারীতি মিলে গিয়ে গুরুচণ্ডালী যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখাও জরুরি। মনে রাখবেন, ব্যক্তি, স্থানের মতো নামবাচক বিশেষ্য শব্দের অনুবাদ হয় না। এই ধরনের শব্দের উচ্চারণ অনুযায়ী অনুবাদ করতে হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে ইংরেজি ‘Henry’ ও ‘Berlin’ শব্দের কথা, এ ক্ষেত্রে অনুবাদের সময়ও যথাক্রমে ‘হেনরি’ ও ‘বার্লিন’ লিখতে হবে। আর মূল ভাষায় যদি বাগধারা বা প্রবাদ প্রবচন থাকে, তাহলে অর্থ ও ভাব বজায় রেখে অনুবাদের ভাষার বাগধারা, প্রবাদ ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ, ‘You reap what you sow’ বাক্যটির অনুবাদ হবে ‘যেমন কর্ম তেমন ফল’। 

গঠন অক্ষত রাখা
সাহিত্যিক বা ব্যাকরণিকভাবে মূল ভাষার লেখাটি গঠনগতভাবে যেভাবে লেখা থাকে, অনুবাদ করার পরও যেন সেটি অক্ষত থাকে; সেদিকে অনুবাদকের বিশেষ নজর রাখা উচিত। কোনো গল্প অনুবাদ করার সময় লেখার ধরন অনুকরণ করেই মূলত লিখতে হবে। একইভাবে কবিতা, প্রবন্ধ লেখার সময়ও গঠন ও পরিধি যেন খুব বেশি পরিবর্তন না হয়, তা খেয়াল রাখতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত