Ajker Patrika

বিদেশে উচ্চশিক্ষা: ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপ পেতে চাইলে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৩, ০৮: ৫৩
বিদেশে উচ্চশিক্ষা: ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপ পেতে চাইলে

ইউরোপের মর্যাদাপূর্ণ ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করছেন বাংলাদেশের আসিফ মাহমুদ। মানিকগঞ্জে তাঁর জন্ম হলেও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিষয়ে সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিনে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপে ‘এনভায়রনমেন্টাল কন্টামিনেশন অ্যান্ড টক্সিকোলজি’ প্রোগ্রামে ফ্রান্স, নরওয়ে ও স্পেনের ভিন্ন ভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে জয়েন্ট মাস্টার্স সম্পন্ন করবেন তিনি। স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা, আবেদন প্রক্রিয়া এবং নতুনদের জন্য তাঁর পরামর্শ নিয়ে থাকছে আজকের আয়োজন। 

ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপ কী
ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপ হলো আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য দেওয়া একটি বৃত্তি প্রোগ্রাম। এই বৃত্তিগুলো ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যৌথ প্রযোজিত মাস্টার্স প্রোগ্রামের আওতায় ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার সুযোগ দিয়ে থাকে। মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই প্রোগ্রামে অর্থায়ন করে থাকে এবং এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে উচ্চশিক্ষা অর্জনে সহযোগিতা করা। স্কলারশিপের আওতায় টিউশন ফি, ভ্রমণ খরচ, বাসস্থানের খরচসহ যাবতীয় ব্যয় বহন করা হয়ে থাকে, যা শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা অর্জন করার পথ সুগম করে। বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈচিত্র্যপূর্ণ শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানসহ বিশ্বের খ্যাতনামা গবেষকদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দেয় স্কলারশিপটি। 

যেসব বিষয়ে পড়া যাবে
ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপের মাধ্যমে অনেক বিষয়ে অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে। এই স্কলারশিপের অধীনে বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে সামাজিক বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, আইন, গণিত, প্রকৌশল, শিল্প, মানবিক, ব্যবসাসহ আরও অনেক বিষয়।ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপের আওতায় মোট ১৯৩টি মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। স্নাতক, স্নাতকোত্তর ডিগ্রির বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একের অধিক প্রোগ্রামে আবেদন করা যায়। যদিও আগে শুধু তিনটি প্রোগ্রামে আবেদন করা যেত। তবে এখন শিক্ষার্থীদের জন্য নিজের পছন্দমতো সাবজেক্টে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই বাধানিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে। 

আবেদনের যোগ্যতা
প্রতিটি প্রোগ্রামের আবেদনের পদ্ধতি আলাদা। তবে কিছু ডকুমেন্ট সব প্রোগ্রামেই দরকার হয়। যেমন আবেদনকারীর কাছে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতকের সনদপত্র থাকতে হয়, ভাষাগত দক্ষতা (আইইএলটিএস, টোফেল, পিটিই ইত্যাদি)। তবে স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা ট্রান্সক্রিপ্ট দিয়েও আবেদন করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার আগে স্নাতক ডিগ্রি শেষ হওয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে। এগুলোর বাইরে আন্তর্জাতিক জার্নালে এবং আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে প্রকাশিত গবেষণাপত্রসহ বিভিন্ন গবেষণা কাজের অভিজ্ঞতা স্কলারশিপ লাভে বেশ গুরুত্ব বহন করে। 

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
প্রতিটি প্রোগ্রামের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া আলাদা হয়ে থাকে। তবে সব প্রোগ্রামের জন্যই কিছু অত্যাবশ্যক কাগজপত্র দরকার হয়। যেমন স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর (যদি থাকে) সনদ এবং ট্রান্সক্রিপ্ট অব রেকর্ডস (স্নাতক অধ্যয়নরত থাকলে আগের সেমিস্টার পর্যন্ত ট্রান্সক্রিপ্ট), রিকমেন্ডেশন লেটার (বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অথবা কর্মরত প্রতিষ্ঠানপ্রধানের স্বাক্ষর করা), মোটিভেশন লেটার, ইউরোপাস ফরমেটেড সিভি, পাসপোর্ট (কমপক্ষে এক বছরের মেয়াদ থাকতে হবে), ভাষাগত যোগ্যতার সনদ (আইইএলটিএস, টোফেল, পিটিই)। তা ছাড়া সিভিতে এক্সট্রা কারিকুলার, কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস, চাকরির অভিজ্ঞতা যোগ করে তার সনদ সাবমিট করতে হয়। 

আবেদনের প্রক্রিয়া
প্রথমে এই ওয়েবসাইট থেকে নিজের স্নাতকের বিষয় অথবা পূর্ববর্তী গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রোগ্রামগুলো বাছাই করতে হবে। এসব প্রোগ্রামের নিজস্ব ওয়েবসাইট ভিজিট করে তাদের আবেদন করার নিয়ম দেখে নিতে হবে। যেহেতু সব প্রোগ্রামের ডেডলাইন আলাদা, তাই সেই বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। 

স্কলারশিপের সুযোগ-সুবিধা
স্কলারশিপের আওতায় পূর্ণ বা আংশিক আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এতে অধ্যয়ন ও জীবনযাপনের খরচ দেওয়া হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপ পাওয়ার মাধ্যমে ইউরোপীয় নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়ন করা যায়। এ ছাড়া একাধিক ইনস্টিটিউশনে ইন্টার্ন করার সুযোগ রয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীর সঙ্গে নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ থাকে। প্রোগ্রাম শেষে 
অনেক দেশে এক বছরের জব সার্চিং ভিসা দিয়ে থাকে। এই সময়কে কাজে লাগিয়ে অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষক হিসেবে যোগদান করেন এবং অনেকে ডক্টরেট ডিগ্রিতে আবেদন করে থাকেন। এ ছাড়া ইউরোপের অনেক দেশে লম্বা সময় নিয়ে চাকরি করলে সে দেশের নিয়মকানুন অনুযায়ী নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। 

নতুনদের জন্য পরামর্শ 
যারা দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী, তাদের জন্য স্নাতকের প্রথম বর্ষ থেকেই সিজিপিএ ভালো রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে মাথায় রাখতে হবে, শুধু সিজিপিএ নয়, এর সঙ্গে বিভিন্ন একাডেমিক এক্সট্রা কারিকুলামের সঙ্গে যুক্ত থাকাটাও জরুরি। যেমন বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে উপস্থিত থাকা, একাডেমিক স্কিলের সঙ্গে সঙ্গে অ্যানালিটিক্যাল স্কিল বাড়ে, এমন সব প্রোগ্রামের সঙ্গে থেকে নিজের স্কিল ডেভেলপ করা। সর্বোপরি একাডেমিক দক্ষতা বাড়ানো যায়, এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা। 

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত