Ajker Patrika

মার্কেটিংয়ে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার

বিশ্বের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে মার্কেটিংকে অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং চাহিদাসম্পন্ন বিষয় ও পেশা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে ব্যবসা, কৌশল, সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটে। বর্তমান বিশ্বে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো শুধু উৎপাদন নয়, গ্রাহকের চাহিদা বোঝাকেও সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। এই কাজ দক্ষতার সঙ্গে করে মার্কেটিং। এ বিষয়ে পড়াশোনা, ক্যারিয়ার ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা নিয়ে আলোচনা করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক আফজাল হোসাইন। তাঁর কথাগুলো শুনেছেন সাব্বির হোসেন।

সাব্বির হোসেন
আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ২৫
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মার্কেটিং কী

মার্কেটিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের চাহিদা শনাক্ত করে। তারপর পণ্যের জন্য মূল্য নির্ধারণ করে, বাজারজাত করে এবং শেষে সে পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়। শুধু বিক্রিই নয়, মার্কেটিং জড়িয়ে আছে গবেষণা, পরিকল্পনা, যোগাযোগ ও গ্রাহকসেবার প্রতিটি ধাপের সঙ্গে।

কেন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ

আজকের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি সঠিকভাবে তা উপস্থাপন করাও সমান জরুরি। একটি ভালো পণ্য সঠিক মার্কেটিংয়ের অভাবে ব্যর্থ হতে পারে। তাই ব্র্যান্ড বিল্ডিং, কাস্টমার রিলেশনস ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এই বিষয়ের গুরুত্ব অপরিসীম।

মার্কেটিং বিষয়ে পড়াশোনা

মার্কেটিং বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করলে একজন শিক্ষার্থী ব্যবসা, অর্থনীতি, মানব আচরণ এবং প্রযুক্তির নানা দিক সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারবেন। দেশের সরকারি-বেসরকারি বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু আছে।

একজন মার্কেটিং গ্র্যাজুয়েট মার্কেটিংয়ের মৌলিক ধারণা, ভোক্তার আচরণ বিশ্লেষণ, পণ্যের মূল্য নির্ধারণ, প্রমোশন কৌশল, ব্র্যান্ড নির্মাণ ও ব্র্যান্ড ব্যবস্থাপনা, ডিজিটাল মার্কেটিং, বিক্রয় ব্যবস্থাপনা এবং বাজার গবেষণাসহ নানান বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারে। এসব শিক্ষাক্রম একজন শিক্ষার্থীকে বাস্তবমুখী ও পেশাভিত্তিক জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে।

মার্কেটিংয়ে ক্যারিয়ার

মার্কেটিং বিষয়ে ডিগ্রি অর্জনের পর একজন শিক্ষার্থীর জন্য বহুবিধ ক্যারিয়ারের পথ উন্মুক্ত হয়। বর্তমান করপোরেট জগতে প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একটি আলাদা মার্কেটিং বিভাগ রয়েছে। যেখানে মার্কেটিং গ্র্যাজুয়েটদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যেমন মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ, সেলস ম্যানেজার, ব্র্যান্ড ম্যানেজার, কাস্টমার রিলেশন অফিসার, মার্কেট রিসার্চার, ডিজিটাল মার্কেটার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও প্রোডাক্ট ম্যানেজার।

এ ছাড়াও বিজ্ঞাপন সংস্থা, মিডিয়া হাউজ, ই-কমার্স কোম্পানি, টেলিকম খাত, ব্যাংক ও বিমা প্রতিষ্ঠানেও মার্কেটিং বিভাগে চাকরির সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রসার ঘটানো ফেসবুক মার্কেটিং, গুগল অ্যাডস, এসইও, ইউটিউব মার্কেটিং ইত্যাদিতেও ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এমনকি নিজের উদ্যোগেও একজন মার্কেটিং শিক্ষার্থী উদ্যোক্তা হতে পারেন।

প্রয়োজনীয় দক্ষতা

মার্কেটিং পেশায় সফল হতে হলে কেবল বইয়ের জ্ঞানই যথেষ্ট নয়, এর পাশাপাশি কিছু বাস্তব দক্ষতা থাকা জরুরি। যেমন:

যোগাযোগ দক্ষতা (Communication Skills): একজন মার্কেটারের অন্যতম বড় সম্পদ তাঁর কথা বলার ও লেখার দক্ষতা। ক্লায়েন্ট, টিম ও গ্রাহকের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগের মাধ্যমেই একটি ব্র্যান্ড বা ক্যাম্পেইনের সফলতা আসে।

বিশ্লেষণী ক্ষমতা (Analytical Ability): বাজার গবেষণা, কাস্টমার ডেটা বিশ্লেষণ এবং প্রতিযোগীদের কৌশল বুঝতে বিশ্লেষণী মানসিকতা অপরিহার্য।

সৃজনশীলতা (Creativity): নতুন কনসেপ্ট তৈরি, বিজ্ঞাপন ভাবনা ও ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে সৃজনশীল চিন্তাভাবনা মার্কেটিংকে এগিয়ে নেয়।

ডিজিটাল জ্ঞান (Digital Literacy): ডিজিটাল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া, এসইও, কনটেন্ট মার্কেটিং—এসব বিষয়ে জ্ঞান না থাকলে বর্তমান সময়ের মার্কেটিংয়ে টিকে থাকা কঠিন।

টিমওয়ার্ক ও নেতৃত্ব (Teamwork & Leadership): বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে কাজ করতে হয় বলে দলগতভাবে কাজ করার সক্ষমতা এবং মাঝে মাঝে নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতাও গুরুত্বপূর্ণ।

সমস্যা সমাধানের দক্ষতা (Problem-solving Skills): মার্কেটিং কৌশল বাস্তবায়নে নানা চ্যালেঞ্জ আসে, তাই দ্রুত চিন্তা করে সমস্যার সমাধান করতে পারাও একটি বড় যোগ্যতা।

মার্কেটিং পেশায় সফল হতে হলে এই বিশেষ দক্ষতাগুলো প্রয়োজন। এই দক্ষতাগুলো অনুশীলনের মাধ্যমে গড়ে তুলতে হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ক্লাস, প্রজেক্ট, ওয়ার্কশপ, সেমিনার ও ইন্টার্নশিপ থেকে অর্জন করা সম্ভব।

মার্কেটিং এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে জ্ঞান, সৃজনশীলতা ও কৌশলের সমন্বয় ঘটে। এই বিষয়ে পড়াশোনা করে একজন শিক্ষার্থী শুধু একটি চাকরিনির্ভর জীবনের পথে এগিয়ে যান না, বরং তিনি উদ্যোক্তা হওয়ার মতো সাহস ও যোগ্যতাও অর্জন করেন।

তাই মার্কেটিং পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার গঠনের জন্য একটি দিকনির্দেশনামূলক, গতিশীল এবং চ্যালেঞ্জিং পথ, যা ভবিষ্যতের জন্য অনেক সম্ভাবনাময়। একবিংশ শতাব্দীর প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে মার্কেটিংয়ের মতো বিষয়ে দক্ষতা অর্জন আবশ্যক। তাই যাঁরা আধুনিক ও সৃজনশীল পেশা খুঁজছেন, তাঁদের জন্য মার্কেটিং হতে পারে পছন্দের একটি স্মার্ট ক্যারিয়ার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত