ইলিয়াস শান্ত, ঢাকা
রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের নতুন পরিচয় প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নেতৃত্বাধীন উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি। এ কমিটিকে চার মাসের যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সে সময়ের মধ্যেই মূল কাজ শেষ হচ্ছে। কমিটির সদস্যরা সে লক্ষ্য নিয়ে কাজগুলো গুছিয়ে নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে সাত কলেজের সমন্বয়ে যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে, সেটির নাম প্রস্তাব করেছে ইউজিসি। পাশাপাশি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল ও লোগো তৈরির কাজও প্রায় শেষ।
বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, চলতি এপ্রিলের মধ্যে সাত কলেজ পরিচালনায় অন্তর্বর্তী প্রশাসন ঘোষণা করা হবে। এখন অপেক্ষা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত কলেজের আনুষ্ঠানিক অধিভুক্তি বাতিলের প্রক্রিয়া শেষ করা। একই সঙ্গে ঢাবি সাত কলেজ পরিচালনায় অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রাতিষ্ঠানিক অনুমোদনও দেবে। ঢাবির অনুমোদনের বাইরে অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের যে কার্যক্রম, তার প্রায় সব ধরনের কাজ শেষ হয়েছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর কার্যক্রম চালু হওয়ার আগপর্যন্ত এই প্রশাসনের কার্যকারিতা সচল থাকবে। এই প্রশাসনকে তত্ত্বাবধান করবে ইউজিসি।
সদস্যরা জানান, চলতি শিক্ষাবর্ষের (২০২৪-২৫) ভর্তি পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হবে এই প্রশাসনের অধীনে। অন্তর্বর্তী প্রশাসন ঘোষণা হলে ঢাবির অধীনে স্থগিত হওয়া সাত কলেজের ভর্তির আবেদন আবার শুরু হবে। বিগত বছরগুলোর মতোই হবে এবারের ভর্তি পরীক্ষা। নবীন এসব শিক্ষার্থী সাত কলেজের বিগত বছরগুলোর সিলেবাসে তাঁদের পাঠ শুরু করবেন। এই প্রশাসনের সঙ্গে ভর্তি কার্যক্রমে কারিগরি সহায়তা দেবে বুয়েট। তবে এখানে ঢাবির সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তারাও থাকবেন। অন্তর্বর্তী প্রশাসনের পর মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ঘোষণা করা হবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল ও লোগো। এই মডেল ও লোগো চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে তৈরি করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন। ঈদ-পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তী প্রশাসন, মডেল ও লোগোসহ সব কাজ সমানতালে এগিয়ে চলেছে।
সাত কলেজের স্বতন্ত্র পরিচয় প্রতিষ্ঠায় ২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজকে সভাপতি করে চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটির সদস্যরা হলেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তার। চলতি এপ্রিলের মধ্যে এ কমিটির কাজ শেষ করার একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞ কমিটির এক সদস্য জানান, তাঁদেরকে চার মাসের যে টাইমফ্রেম দেওয়া হয়েছে, শুরুতে তার মধ্যে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের ঝামেলা ছিল না। কমিটির কাজের মাঝপথে শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিলে এ প্রশাসন গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। আর অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন যেহেতু ইউজিসির নিজস্ব সক্ষমতার বাইরে, তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে এ বিষয়ে কাজ করতে হচ্ছে। ফলে একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করায় অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনে কিছুটা সময় লাগছে।
ঢাবিতে আটকে আছে অন্তর্বর্তী প্রশাসন
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘সাত কলেজ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সাময়িক ব্যবস্থাসংক্রান্ত’ শিরোনামে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের একটি প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ইউজিসি। এরপর গত ২ মার্চ ইউজিসির এ সুপারিশপত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্মতি দেয়। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খানকে ইউজিসির সুপারিশ অনুযায়ী অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানায় মন্ত্রণালয়। তবে অন্তর্বর্তী প্রশাসন এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাবিতে পাঠানো ইউজিসির সুপারিশপত্রে বলা হয়েছে, যেসব শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীলতার সঙ্গে বর্তমান ব্যবস্থাই চালু রাখবে। আর ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের সব শিক্ষা কার্যক্রম অন্তর্বর্তী প্রশাসনের অধীনে চলবে। এই প্রশাসনের কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে হবে। এ ক্ষেত্রে এই প্রশাসনের পরিচালক হিসেবে যে কলেজের অধ্যক্ষ কাজ করবেন, সেই কলেজে এই কাঠামোর কার্যালয় হবে। কাঠামোর অধীন সব হিসাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা ব্যাংক হিসাবে পরিচালিত হবে।
জানতে চাইলে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বৃহস্পতিবার সকালে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত কলেজের সম্মানজনক পৃথক্করণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ কলেজগুলোর জন্য এখন একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের কাজ চলছে। এটা একটা আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সঙ্গে সমন্বয় করে এ কাজ করা হচ্ছে। ঈদের আগে প্রশাসন গঠনের কিছু কাজ এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকি কাজ চলতি মাসের মধ্যেই শেষ করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা কমিটি গঠন করে দিয়েছি। এ কমিটি একটা ড্রাফট তৈরি করেছে। এ ড্রাফট নিয়ে ইউজিসির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এখন আমরা এটা ডিনস কমিটিতে তুলব। এরপর এটা পর্যায়ক্রমে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন হবে।’
সাত কলেজের অন্তর্বর্তী প্রশাসন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলমও কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি পরিচালনায় এ কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের মধ্য থেকে একজনকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। যিনি প্রশাসক নির্বাচিত হবেন, তাঁর প্রতিষ্ঠান হবে সাত কলেজের হেডকোয়ার্টার্স। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী প্রশাসনের অধীনে সাতটি কলেজে কো-অর্ডিনেশন ডেস্ক তৈরি করা হবে, সেই ডেস্কের কো-অর্ডিনেশনের দায়িত্বে থাকবেন হেডকোয়ার্টার্সের কলেজের অধ্যক্ষ।’
অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রধান হচ্ছেন ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ
ইউজিসির সচিব ড. ফখরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াসকে সাত কলেজের ‘অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রধান’ হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। সব কটি কলেজের অধ্যক্ষদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার মাধ্যমে তাঁকে নির্বাচন করা হয়। এ নিয়োগে অধ্যক্ষদের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও প্রশাসন পরিচালনার দক্ষতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অধ্যক্ষদের এসব গুণ বিবেচনায় অন্তর্বর্তী প্রশাসন পরিচালনায় ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষকে কমিশনের কাছে যোগ্য বলে মনে হয়েছে।
এদিকে, সম্প্রতি একাধিক সংবাদমাধ্যমে অধ্যাপক ইলিয়াসকে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রশাসক’ হিসেবে উল্লেখ করে সংবাদ পরিবেশনের বিষয়টি ইউজিসির দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কমিশনের সদস্যরা এটাকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের ঘোষণা অনুযায়ী, যেই কলেজ থেকে প্রশাসক নিয়োগ হবে, সেই কলেজই হবে নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডকোয়ার্টার্স বা সদর দপ্তর। সে হিসেবে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস হচ্ছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টির হেডকোয়ার্টার্স।
২০১৭ সালে রাজধানীর সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। অধিভুক্তির পর থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করতে দেখা যায় এসব কলেজের শিক্ষার্থীদের। সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরে সে আন্দোলন স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে রূপ নেয়। সাতটি কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী রয়েছেন।
নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি
সাত কলেজের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (ডিসিইউ) নামে প্রস্তাব করেছে ইউজিসি। গত ১৬ মার্চ ইউজিসির কনফারেন্স কক্ষে সাত কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আয়োজিত সভা শেষে এ নাম প্রস্তাব করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ইউজিসি চেয়ারম্যান ও বিশেষজ্ঞ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। সভায় ইউজিসি ও কমিটির সদস্য অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খানও উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে ইউজিসির সচিব ড. ফখরুল ইসলাম বলেন, ইউজিসির প্রস্তাবিত নাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মডেল ও লোগোর কাজ চূড়ান্ত হলে সেগুলোও পাঠানো হবে। এরপর এসব প্রস্তাবনা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে পাস হবে। পরে রাষ্ট্রপতির সম্মতিক্রমে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি করা হবে।
কেমন হবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল
কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির কার্যক্রমের পরিকল্পনা করা হচ্ছে কলেজগুলোর ঐতিহ্য ধারণ করেই। সাত কলেজের যে পাঁচটিতে ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার্থী ছিল, সেটি তেমনই থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়টি শুধু কলেজের সময় ও জায়গা শেয়ার করবে। এতে ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার্থী ও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষকদের অবস্থান একই থাকবে। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী এটি হবে নতুন মডেলের বিশ্ববিদ্যালয়। যে মডেল তৈরিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একাধিক শিক্ষক কাজ করছেন। মডেল তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। কাজ শেষ হলে এ মডেল নতুন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরারের সঙ্গে বসে চূড়ান্ত করা হবে।
যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের (এনইউএস) মতো হবে সাত কলেজের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় চলবে ‘হাইব্রিড মডেলে’। এর নীতিবাক্য হলো, Learning through interdisciplinary knowledge and teaching বা আন্তবিষয়ক জ্ঞান ও পাঠদানের মাধ্যমে শিখন। এখানে ৪০ শতাংশ ক্লাস হবে অনলাইনে, আর ৬০ শতাংশ ক্লাস হবে সশরীরে। নতুন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনকার মতো একেকটি কলেজে সব বিষয় পড়াশোনা হবে না। এক বা একাধিক কলেজে অনুষদভিত্তিক ক্লাস হবে। যেমন সরকারি তিতুমীর কলেজে হতে পারে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত বিষয়গুলোর ক্লাস। এভাবে অন্যান্য কলেজে হতে পারে বিভিন্ন অনুষদভুক্ত বিষয়ের ক্লাস।
প্রাথমিকভাবে ৪টি স্কুল নিয়ে শুরু হচ্ছে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। পরে সক্ষমতা অনুযায়ী এই স্কুলের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। এসব স্কুলের অধীনে আরও একাধিক ডিসিপ্লিন থাকবে। চারটি স্কুল হলো: স্কুল অব সায়েন্সেস, স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ, স্কুল অব বিজনেস এবং ল স্কুল। এর মধ্যে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে থাকবে স্কুল অব সায়েন্সেস। সরকারি তিতুমীর কলেজে স্কুল অব বিজনেস, বাঙলা কলেজে স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ এবং কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে থাকবে ল স্কুল।
লোগো কেমন হচ্ছে
ইউজিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাত কলেজের জন্য ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নাম প্রস্তাবনার পর লোগো তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে একাধিক লোগোর ডেমো নেওয়া হয়েছে। এখন এগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। লোগো তৈরিতে সমান গুরুত্ব পাচ্ছে সাতটি কলেজের প্রতিটি কলেজের নাম ও প্রতিকৃতি। এ ছাড়া ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত বিপ্লব, ইন্টারডিসিপ্লিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবাক্যসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ লোগোতে আধুনিক ও যুগোপযোগী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপ স্পষ্ট উল্লেখ থাকবে।
রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের নতুন পরিচয় প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নেতৃত্বাধীন উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি। এ কমিটিকে চার মাসের যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সে সময়ের মধ্যেই মূল কাজ শেষ হচ্ছে। কমিটির সদস্যরা সে লক্ষ্য নিয়ে কাজগুলো গুছিয়ে নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে সাত কলেজের সমন্বয়ে যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে, সেটির নাম প্রস্তাব করেছে ইউজিসি। পাশাপাশি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল ও লোগো তৈরির কাজও প্রায় শেষ।
বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, চলতি এপ্রিলের মধ্যে সাত কলেজ পরিচালনায় অন্তর্বর্তী প্রশাসন ঘোষণা করা হবে। এখন অপেক্ষা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত কলেজের আনুষ্ঠানিক অধিভুক্তি বাতিলের প্রক্রিয়া শেষ করা। একই সঙ্গে ঢাবি সাত কলেজ পরিচালনায় অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রাতিষ্ঠানিক অনুমোদনও দেবে। ঢাবির অনুমোদনের বাইরে অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের যে কার্যক্রম, তার প্রায় সব ধরনের কাজ শেষ হয়েছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর কার্যক্রম চালু হওয়ার আগপর্যন্ত এই প্রশাসনের কার্যকারিতা সচল থাকবে। এই প্রশাসনকে তত্ত্বাবধান করবে ইউজিসি।
সদস্যরা জানান, চলতি শিক্ষাবর্ষের (২০২৪-২৫) ভর্তি পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হবে এই প্রশাসনের অধীনে। অন্তর্বর্তী প্রশাসন ঘোষণা হলে ঢাবির অধীনে স্থগিত হওয়া সাত কলেজের ভর্তির আবেদন আবার শুরু হবে। বিগত বছরগুলোর মতোই হবে এবারের ভর্তি পরীক্ষা। নবীন এসব শিক্ষার্থী সাত কলেজের বিগত বছরগুলোর সিলেবাসে তাঁদের পাঠ শুরু করবেন। এই প্রশাসনের সঙ্গে ভর্তি কার্যক্রমে কারিগরি সহায়তা দেবে বুয়েট। তবে এখানে ঢাবির সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তারাও থাকবেন। অন্তর্বর্তী প্রশাসনের পর মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ঘোষণা করা হবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল ও লোগো। এই মডেল ও লোগো চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে তৈরি করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন। ঈদ-পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তী প্রশাসন, মডেল ও লোগোসহ সব কাজ সমানতালে এগিয়ে চলেছে।
সাত কলেজের স্বতন্ত্র পরিচয় প্রতিষ্ঠায় ২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজকে সভাপতি করে চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটির সদস্যরা হলেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তার। চলতি এপ্রিলের মধ্যে এ কমিটির কাজ শেষ করার একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞ কমিটির এক সদস্য জানান, তাঁদেরকে চার মাসের যে টাইমফ্রেম দেওয়া হয়েছে, শুরুতে তার মধ্যে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের ঝামেলা ছিল না। কমিটির কাজের মাঝপথে শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিলে এ প্রশাসন গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। আর অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন যেহেতু ইউজিসির নিজস্ব সক্ষমতার বাইরে, তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে এ বিষয়ে কাজ করতে হচ্ছে। ফলে একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করায় অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনে কিছুটা সময় লাগছে।
ঢাবিতে আটকে আছে অন্তর্বর্তী প্রশাসন
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘সাত কলেজ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সাময়িক ব্যবস্থাসংক্রান্ত’ শিরোনামে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের একটি প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ইউজিসি। এরপর গত ২ মার্চ ইউজিসির এ সুপারিশপত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্মতি দেয়। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খানকে ইউজিসির সুপারিশ অনুযায়ী অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানায় মন্ত্রণালয়। তবে অন্তর্বর্তী প্রশাসন এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাবিতে পাঠানো ইউজিসির সুপারিশপত্রে বলা হয়েছে, যেসব শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীলতার সঙ্গে বর্তমান ব্যবস্থাই চালু রাখবে। আর ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের সব শিক্ষা কার্যক্রম অন্তর্বর্তী প্রশাসনের অধীনে চলবে। এই প্রশাসনের কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে হবে। এ ক্ষেত্রে এই প্রশাসনের পরিচালক হিসেবে যে কলেজের অধ্যক্ষ কাজ করবেন, সেই কলেজে এই কাঠামোর কার্যালয় হবে। কাঠামোর অধীন সব হিসাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা ব্যাংক হিসাবে পরিচালিত হবে।
জানতে চাইলে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বৃহস্পতিবার সকালে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত কলেজের সম্মানজনক পৃথক্করণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ কলেজগুলোর জন্য এখন একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের কাজ চলছে। এটা একটা আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সঙ্গে সমন্বয় করে এ কাজ করা হচ্ছে। ঈদের আগে প্রশাসন গঠনের কিছু কাজ এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকি কাজ চলতি মাসের মধ্যেই শেষ করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা কমিটি গঠন করে দিয়েছি। এ কমিটি একটা ড্রাফট তৈরি করেছে। এ ড্রাফট নিয়ে ইউজিসির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এখন আমরা এটা ডিনস কমিটিতে তুলব। এরপর এটা পর্যায়ক্রমে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন হবে।’
সাত কলেজের অন্তর্বর্তী প্রশাসন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলমও কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি পরিচালনায় এ কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের মধ্য থেকে একজনকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। যিনি প্রশাসক নির্বাচিত হবেন, তাঁর প্রতিষ্ঠান হবে সাত কলেজের হেডকোয়ার্টার্স। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী প্রশাসনের অধীনে সাতটি কলেজে কো-অর্ডিনেশন ডেস্ক তৈরি করা হবে, সেই ডেস্কের কো-অর্ডিনেশনের দায়িত্বে থাকবেন হেডকোয়ার্টার্সের কলেজের অধ্যক্ষ।’
অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রধান হচ্ছেন ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ
ইউজিসির সচিব ড. ফখরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াসকে সাত কলেজের ‘অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রধান’ হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। সব কটি কলেজের অধ্যক্ষদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার মাধ্যমে তাঁকে নির্বাচন করা হয়। এ নিয়োগে অধ্যক্ষদের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও প্রশাসন পরিচালনার দক্ষতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অধ্যক্ষদের এসব গুণ বিবেচনায় অন্তর্বর্তী প্রশাসন পরিচালনায় ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষকে কমিশনের কাছে যোগ্য বলে মনে হয়েছে।
এদিকে, সম্প্রতি একাধিক সংবাদমাধ্যমে অধ্যাপক ইলিয়াসকে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রশাসক’ হিসেবে উল্লেখ করে সংবাদ পরিবেশনের বিষয়টি ইউজিসির দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কমিশনের সদস্যরা এটাকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের ঘোষণা অনুযায়ী, যেই কলেজ থেকে প্রশাসক নিয়োগ হবে, সেই কলেজই হবে নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডকোয়ার্টার্স বা সদর দপ্তর। সে হিসেবে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস হচ্ছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টির হেডকোয়ার্টার্স।
২০১৭ সালে রাজধানীর সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। অধিভুক্তির পর থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করতে দেখা যায় এসব কলেজের শিক্ষার্থীদের। সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরে সে আন্দোলন স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে রূপ নেয়। সাতটি কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী রয়েছেন।
নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি
সাত কলেজের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (ডিসিইউ) নামে প্রস্তাব করেছে ইউজিসি। গত ১৬ মার্চ ইউজিসির কনফারেন্স কক্ষে সাত কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আয়োজিত সভা শেষে এ নাম প্রস্তাব করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ইউজিসি চেয়ারম্যান ও বিশেষজ্ঞ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। সভায় ইউজিসি ও কমিটির সদস্য অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খানও উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে ইউজিসির সচিব ড. ফখরুল ইসলাম বলেন, ইউজিসির প্রস্তাবিত নাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মডেল ও লোগোর কাজ চূড়ান্ত হলে সেগুলোও পাঠানো হবে। এরপর এসব প্রস্তাবনা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে পাস হবে। পরে রাষ্ট্রপতির সম্মতিক্রমে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি করা হবে।
কেমন হবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল
কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির কার্যক্রমের পরিকল্পনা করা হচ্ছে কলেজগুলোর ঐতিহ্য ধারণ করেই। সাত কলেজের যে পাঁচটিতে ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার্থী ছিল, সেটি তেমনই থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়টি শুধু কলেজের সময় ও জায়গা শেয়ার করবে। এতে ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার্থী ও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষকদের অবস্থান একই থাকবে। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী এটি হবে নতুন মডেলের বিশ্ববিদ্যালয়। যে মডেল তৈরিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একাধিক শিক্ষক কাজ করছেন। মডেল তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। কাজ শেষ হলে এ মডেল নতুন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরারের সঙ্গে বসে চূড়ান্ত করা হবে।
যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের (এনইউএস) মতো হবে সাত কলেজের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় চলবে ‘হাইব্রিড মডেলে’। এর নীতিবাক্য হলো, Learning through interdisciplinary knowledge and teaching বা আন্তবিষয়ক জ্ঞান ও পাঠদানের মাধ্যমে শিখন। এখানে ৪০ শতাংশ ক্লাস হবে অনলাইনে, আর ৬০ শতাংশ ক্লাস হবে সশরীরে। নতুন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনকার মতো একেকটি কলেজে সব বিষয় পড়াশোনা হবে না। এক বা একাধিক কলেজে অনুষদভিত্তিক ক্লাস হবে। যেমন সরকারি তিতুমীর কলেজে হতে পারে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত বিষয়গুলোর ক্লাস। এভাবে অন্যান্য কলেজে হতে পারে বিভিন্ন অনুষদভুক্ত বিষয়ের ক্লাস।
প্রাথমিকভাবে ৪টি স্কুল নিয়ে শুরু হচ্ছে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। পরে সক্ষমতা অনুযায়ী এই স্কুলের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। এসব স্কুলের অধীনে আরও একাধিক ডিসিপ্লিন থাকবে। চারটি স্কুল হলো: স্কুল অব সায়েন্সেস, স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ, স্কুল অব বিজনেস এবং ল স্কুল। এর মধ্যে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে থাকবে স্কুল অব সায়েন্সেস। সরকারি তিতুমীর কলেজে স্কুল অব বিজনেস, বাঙলা কলেজে স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ এবং কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে থাকবে ল স্কুল।
লোগো কেমন হচ্ছে
ইউজিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাত কলেজের জন্য ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নাম প্রস্তাবনার পর লোগো তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে একাধিক লোগোর ডেমো নেওয়া হয়েছে। এখন এগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। লোগো তৈরিতে সমান গুরুত্ব পাচ্ছে সাতটি কলেজের প্রতিটি কলেজের নাম ও প্রতিকৃতি। এ ছাড়া ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত বিপ্লব, ইন্টারডিসিপ্লিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবাক্যসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ লোগোতে আধুনিক ও যুগোপযোগী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপ স্পষ্ট উল্লেখ থাকবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের লেভেল-১/টার্ম-১-এর স্নাতক শ্রেণির নবীন শিক্ষার্থীদের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়া হয়।
৩ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচনের (ডাকসু) ‘পথনকশা’ ঘোষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক রফিকুল ইসলাম পান্না স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ পথ নকশার কথা জানানো হয়।
৩ ঘণ্টা আগেবিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী নারী অপরাহ উইনফ্রে। তিনি ‘দি অপরাহ উইনফ্রে শো’র মাধ্যমে আমেরিকার টেলিভিশন প্রোগ্রামে ইতিহাস গড়ে তুলেছেন। অপরাহ উইনফ্রে শুধুই সফলতার প্রতীক নন—তিনি সাহস ও অন্তর্দৃষ্টির প্রতিচ্ছবি।
১ দিন আগেহয়তোবা রেকর্ডিং তখন সবাইকে স্বাগত জানিয়ে কথা শুরু করেছে—নির্দেশাবলি কথা বলছে, পরীক্ষা পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত করাচ্ছে, উদাহরণ টানছে ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপর কিছু সময় একদম চুপ, কোনো কথা নেই। এই সময়টুকু ইচ্ছাকৃত। এটাকে কাজে লাগাতে হবে, তবে কীভাবে? সেসব নিয়েই আজকের এই পাঠদান।
১ দিন আগে