Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক তৈরিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম। ছবি: সংগৃহীত

ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এক যুগ পূর্ণ হতে চলেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়; বরং বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে একটি কেন্দ্রীয় কাঠামোয় এনে নৈতিকতা, জ্ঞান ও গবেষণার পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রয়াস। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এই প্রতিষ্ঠানকে আধুনিক ও টেকসই ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে নিরলস কাজ করছেন। তিনি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. আশিকুর রহমান

ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা অনেক প্রত্যাশা আর স্বপ্ন নিয়ে শুরু হয়েছিল। আপনি প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্বে এসেছেন প্রায় ১০ মাস হলো। কীভাবে দেখছেন।

নিঃসন্দেহে আমার জীবনের অন্যতম বড় দায়িত্ব। ২০১৩ সালে যখন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংসদে পাস হয়, তখনই স্পষ্ট হয়েছিল যে দেশের মানুষ; বিশেষ করে আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা এ ধরনের একটি কেন্দ্রীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অপেক্ষায় ছিলেন বহু বছর ধরে।

আমি ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগ দিই এবং সেদিন থেকে বিশ্বাস করি, এই বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়; বরং এটি জাতিগত ও ধর্মীয় ঐতিহ্য রক্ষার একটি বড় দায়িত্ব।

এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে কী কী বড় পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করেন।

সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে স্বীকৃতিতে। আগে আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে একটি সুনির্দিষ্ট কেন্দ্রীয় মানদণ্ড ছিল না। এখন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় সেই মানদণ্ড স্থাপন করতে পারছে। দেশের প্রায় ১ হাজার ৫০০ আলিয়া মাদ্রাসা এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। এর মাধ্যমে আমরা পাঠ্যক্রম, পরীক্ষানীতি, সনদ প্রদান, গবেষণা এবং শিক্ষক উন্নয়নে এক অভিন্ন কাঠামো তৈরির পথে এগিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষা এবং আরবি ভাষার আধুনিকায়নেও আমরা কাজ করছি। বৃহৎ পরিসরে

গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী দিনে অনেক জার্নাল বের করার ইচ্ছা রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু প্রবন্ধ জমা হয়েছে। দেশ-বিদেশের ভালো মানের অনেক গবেষক আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। এমফিল-পিএইচডি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। এ জন্য নীতিমালাও চূড়ান্ত করা হয়েছে।

আপনি বলেছিলেন, আলিয়া মাদ্রাসাশিক্ষা একটি আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা। এ বিষয়ে একটু বিস্তারিত বলবেন।

অবশ্যই। আলিয়া মাদ্রাসাশিক্ষা শুধু ধর্মীয় জ্ঞান নয়, এতে যুক্ত আছে বিজ্ঞান, সাহিত্য, সমাজবিজ্ঞানসহ নানা বিষয়। একে অনেকে ভুল করে কেবল ধর্মীয় শিক্ষা ভাবেন, অথচ এখানে শিক্ষার্থীরা আল-কোরআনের পাশাপাশি গণিত, ইংরেজি, তথ্যপ্রযুক্তি পর্যন্ত শিখছেন। এটি একধরনের ইন্টিগ্রেটেড শিক্ষাব্যবস্থা, যেখানে ধর্ম ও দুনিয়ার জ্ঞান একসঙ্গে চলতে পারে। যাঁরা যুগে যুগে আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাঁরা আমাদের সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থায় অনন্য ভূমিকা রেখে গেছেন। আমরা তাঁদের গর্বের সঙ্গে স্মরণ করি।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ক্ষেত্রে আলিয়া শিক্ষা কতটা কার্যকর।

মানবজীবনের পরিপূর্ণ বিকাশে কেবল দক্ষতা নয়, দরকার নৈতিক ভিত্তিও। দুর্নীতি, অসহিষ্ণুতা, মিথ্যাচার—এসব তখনই কমবে, যখন আমাদের শিক্ষার ভেতর নৈতিকতা ও আদর্শ থাকবে। এই জায়গায় আলিয়া মাদ্রাসাশিক্ষা অপরিহার্য। কারণ, এটি একজন শিক্ষার্থীকে আল্লাহভীতি, মানবিকতা, দায়িত্ববোধ ও আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখায়। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় সেই মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক তৈরিতে বিশেষভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত
ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় চ্যালেঞ্জগুলো কী।

প্রথমত, আমাদের শুরুর দিকে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ছিল, যা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছি। দ্বিতীয়ত, শিক্ষাক্রম আধুনিকীকরণ এবং তা বাস্তবায়নের জন্য দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন, যা আমরা প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে তৈরি করছি। তৃতীয়ত, সমাজের কিছু অংশে এখনো আলিয়া মাদ্রাসাশিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। তাই আমাদের একটা বড় দায়িত্ব হলো, সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং আলিয়া শিক্ষার সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরা।

আপনার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী।

আমাদের লক্ষ্য খুব পরিষ্কার—আন্তর্জাতিক মানের ইসলামি গবেষণাকেন্দ্র গড়ে তোলা, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের জন্য একটি বিশ্বমানের একাডেমিক পরিবেশ তৈরি করা। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানাধীন ঘাটারচর ও মধ্যেরচর এলাকায় ১৭ একর জমিতে নির্মিত হবে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস। ৩ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত হবে আরবি ভাষা ইনস্টিটিউট। সৌদি আরবের অর্থায়নে এই ইনস্টিটিউট নির্মিত হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয় একদিন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের গর্ব হয়ে দাঁড়াবে।

সবশেষে, আপনি শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে কী বার্তা দিতে চান।

আমি সবাইকে বলব, এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সবার। দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ নিয়ে আমরা যদি একতাবদ্ধ হই, তাহলে শুধু শিক্ষা নয়, পুরো সমাজেই পরিবর্তন আনতে পারব। ন্যায়ের পথে, সততার সঙ্গে, আল্লাহর প্রতি ভয় রেখে কাজ করলে কোনো বাধা আর বাধা থাকে না। আমাদের ইতিহাস গৌরবময়—এখন সময় এসেছে সেই ইতিহাসের ধারাবাহিকতা ফিরিয়ে আনার।

সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনাকেও ধন্যবাদ। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন, যেন সত্যিকারের আলোকবর্তিকা হয়ে উঠতে পারি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাড়ি কেনার টাকা না দেওয়ায় স্ত্রীকে মারধর, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলা

মুক্তি পেয়ে আ.লীগ নেতার ভিডিও বার্তা, বেআইনি বলল বিএনপি

ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কাও ঢাকায় এসিসির সভা বর্জন করল

যুদ্ধবিমানের ২৫০ ইঞ্জিন কিনছে ভারত, ফ্রান্সের সঙ্গে ৬১ হাজার কোটি রুপির চুক্তি

সালাহউদ্দিনকে নিয়ে বিষোদ্‌গার: চকরিয়ায় এনসিপির পথসভার মঞ্চে বিএনপির হামলা-ভাঙচুর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত