Ajker Patrika

দ্য আলকেমিস্ট বই থেকে ১০টি শিক্ষা

এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮: ৪৯
Thumbnail image

বিশ্বের বেশি জনপ্রিয় বইগুলোর অন্যতম হলো ব্রাজিলিয়ান লেখক পাওলো কোয়েলহোর লেখা দ্য আলকেমিস্ট। বইটি ১৯৮৮ সালে পর্তুগিজ ভাষায় প্রথম প্রকাশিত হয়। এখন পর্যন্ত ৮৩টির বেশি ভাষায় বইটি অনুবাদ হয়েছে। এটি একটি উপন্যাস হলেও এর মধ্যে রয়েছে জীবনদর্শন ও শিক্ষা। বইটি পড়ে শিক্ষাগুলো লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

নিজের স্বপ্নকে অনুসরণ করা
জীবনে বড় হতে হলে বড় স্বপ্ন থাকতে হয়। দ্য আলকেমিস্ট বইটিও স্বপ্নকে অনুসরণ করার কথা বলেছে। বইটির মূল চরিত্র সান্তিয়াগো নিজের স্বপ্নকে অনুসরণ করে চলেছে। পথে বিভিন্ন  চ্যালেঞ্জ এসেছে, কিন্তু সাহস নিয়ে নিজের স্বপ্নের দিকে এগিয়ে গেছে। নিজের স্বাচ্ছন্দ্য থেকে বেরিয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। ফলে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে সান্তিয়োগো প্রকৃতপক্ষে সুখী হয়েছে।

হৃদয়ের কথা শোনা
বইয়ের গল্পটি আমাদের হৃদয়ের কথা শুনতে শিখিয়েছে। চলার পথে মানুষ তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে পরামর্শ দেবে এবং অভিজ্ঞদের কাছ থেকে সে পরামর্শ নেওয়াটা দোষের নয় কিন্তু সব সময় শুনতে হবে নিজের হৃদয়ের বা মনের কথা। কারণ, আমার হৃদয় জানে, আসলে কী চাই, যা অন্য কেউ জানে না। নিজের হৃদয়ের পথে হাঁটতে গেলে অনেক সময় সমালোচনার শিকার হতে হবে। নিজের গন্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে সেসব সমালোচনা কোনো বাধাই মনে হবে না।

আধ্যাত্মিকতা বাস্তব জীবনেরই অংশ
বইটি আমাদের আধ্যাত্মিকতা যে বাস্তব জীবনেরই অংশ, সে বিষয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে। এ জন্য সারা পৃথিবীতে অধিকাংশ মানুষ সৃষ্টিকর্তা ও ধর্মকে বিশ্বাস করে। পৃথিবীতে বড় বড় আবিষ্কার হতো না, যদি সবাই খুব প্র্যাকটিক্যাল চিন্তা করত বা পৃথিবীটা যেমন আছে, তেমনভাবেই মেনে নিত। অসাধারণ উদ্ভাবন ও অর্জন তখনই সম্ভব, যখন আপনি অসম্ভবকে উপেক্ষা করতে শিখবেন।

ব্যর্থতার ভয়কে জয় করা
সান্তিয়াগোর গল্পের মাধ্যমে বোঝা যায়, ভয় হলো জীবনের লক্ষ্য অর্জনের সবচেয়ে বড় বাধা। ব্যর্থতা এবং অজানা ভয় পেয়ে সফলতার পথে আমরা এগোতে পারি না। জীবনে সফল হতে হলে অজানা ভয়কে সবচেয়ে আগে বিদায় করতে হবে। স্বপ্ন পূরণ করতে গেলে চ্যালেঞ্জ, বাধা, সমস্যা আসবেই। সেটাকে ভয় না পেয়ে সফলতার একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখতে হবে। ব্যর্থতার ভয়কে জয় করতে হবে।

অধ্যবসায়ী হওয়া
অধ্যবসায়ী ও ধৈর্য ধরে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গেলে যে সফল হওয়া যায়, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বইটি। সান্তিয়াগো অসংখ্য বাধার সম্মুখীন হন, কিন্তু তার অটল অধ্যবসায় শেষ পর্যন্ত তাকে তার ধনভান্ডারে নিয়ে যায়। জীবনে চলার পথে বাধা আসবে, পড়ে যেতে হবে, কিন্তু অধ্যবসায়ের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই। 
 
ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া
সান্তিয়াগো তার যাত্রার সময় ভুল করেছে। তবে প্রতিটি ভুলকে শেখার সুযোগ হিসেবে দেখেছে। বইটি আমাদের ভুলগুলো থেকে শেখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। স্বপ্নপূরণের পথে ভুল হওয়া মানে এটা প্রকাশ করে না যে
আমি স্বপ্ন পূরণ করতে পারব না, বরং এটি একটি নতুন শিক্ষা, যা স্বপ্নপূরণের পথে বাড়তি অর্জন। বারবার ভুল করলেও ঘুরে
দাঁড়াতে হবে।

সত্যকে মেনে নেওয়া
সত্য যত খারাপ আর কঠিন হোক, তাকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে, যদি কোনো কিছু সত্যি হয়, তবে তা কখনোই অমলিন হবে না, হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে না। বইয়ের একটি অংশে লেখক তাই বলেছেন, ‘কেউ যদি বিশুদ্ধ পদার্থ খুঁজে পায়, তবে তা কখনোই নষ্ট হবে না। আর সবাই ফিরে আসতে পারে। আপনি যা খুঁজে পেয়েছিলেন, তা যদি কেবল একটি আলোর মুহূর্ত বা একটি নক্ষত্রের বিস্ফোরণের মতো হতো, তাহলে আপনি ফিরে এসে কিছুই খুঁজে পেতেন না।’ 

স্বপ্নপূরণে সহায়ক ‘ভালোবাসা’
পৃথিবীর সব মানুষই জীবনে ভালোবাসা পেতে চায়। আর এই ভালোবাসাও জীবনে বড় লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হতে পারে। তা কিন্তু সান্তিয়োগো ও ফাতিমার মধ্যে ভালোবাসার প্রদর্শন দেখে বোঝা যায়। যদি সঠিক মানুষকে ভালোবাসা যায় এবং ভালোবাসার মানুষটি যদি স্বপ্নপূরণে উৎসাহ দেয়, তাহলে অনেক বড় স্বপ্নকেও স্পর্শ করা যায়। 

আজকের জন্য বাঁচা
আজকের জন্য না বেঁচে আমরা ভবিষ্যতের জন্য দুশ্চিন্তায় মশগুল হয়ে যাই। জীবনে সুখী ও সফল হতে হলে দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে আজকের জন্য কাজ করতে হবে। কেননা জীবনে কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। বইয়ে লেখক বলেছেন, ‘জীবন হলো জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যবর্তী একটা ভ্রমণ। যেখানে প্রকৃতি বা পরিবেশ পরিবর্তন হবে, মানুষ পরিবর্তন হবে, আমাদের চাওয়া-পাওয়া পরিবর্তন হবে, কিন্তু ট্রেন চলবে। জীবন হলো একটা ট্রেন; কোনো স্টেশন নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত