Ajker Patrika

পরিচ্ছন্নতায় অনন্য বিদ্যালয়

আফজাল হোসেন পন্টি, নারায়ণগঞ্জ
পরিচ্ছন্নতায় অনন্য বিদ্যালয়

করোনা সংক্রমণের কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধ ছিল দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ এই সময়ে শিক্ষার্থীদের যেমন পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটেছে, তেমনি বিদ্যালয়গুলোতে জমেছে ধুলো। কোনো বিদ্যালয়ের চেয়ার-টেবিল নড়বড়ে তো, কোনোটির মাঠের আগাছায় হাঁটাই দায়। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধোয়া-মোছায় ব্যস্ত, কিন্তু ব্যতিক্রম নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ ভূঁইয়ারবাগের বিদ্যানিকেতন হাইস্কুল। স্কুলটির শিক্ষকেরা নতুন সূচি তৈরিতে ব্যস্ত। দেড় বছরের বিরতি বিদ্যালয়ের কোথাও ছাপ ফেলতে পারেনি। নিয়মিত চলত পরিষ্কার কার্যক্রম।

জেলায় তিনবার এবং বিভাগীয় পর্যায়ে একবার শ্রেষ্ঠ ডিজিটাল স্কুলের খেতাব অর্জন করছে বিদ্যানিকেতন। প্রতিষ্ঠার মাত্র ১২ বছরের ভেতর এমন অর্জন বিস্ময়কর। কারণ, শহরের অপেক্ষাকৃত নিম্নবিত্ত ও পিছিয়ে পড়া এলাকায় স্কুলটির অবস্থান।

গতকাল বুধবার স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকেরা সভা করছেন। আলোচনা করছেন, কীভাবে ক্লাসের সময় নির্ধারণ করা হবে এবং ছাত্রছাত্রীদের কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হবে—সেসব নিয়ে। তবে যে বিষয়টি অবাক করার সেটা হলো, স্কুল খোলার আগে তড়িঘড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনো আয়োজন নেই। স্কুলের আয়া, দপ্তরি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী সবার কাছেই এটা যেন আর দশটা স্বাভাবিক দিনের মতোই। যে যার কাজ করে বসে আছেন। বিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতাকর্মী আবেদ মিয়া জানালেন, দেড় বছরই নিয়মিত পরিষ্কার কার্যক্রম চলেছে। তাই এখন বাড়তি কিছু করা লাগছে না।

স্কুলটির সুবিশাল লাইব্রেরি ঢাকার যেকোনো স্কুলের জন্যও অবাক করা ব্যাপার। সুসজ্জিত ক্যানটিনের দেয়ালে সব মনীষীর ছবি ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। যদিও আপাতত শিশু শ্রেণির ক্লাস শুরু হচ্ছে না, তবুও এর কক্ষটি দেখলেই ধারণা পাওয়া যায় স্কুলের পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি।

করোনাকালে বিদ্যানিকেতনের মানবিক বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানালেন এর ট্রাস্টি বোর্ডের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুস সালাম। তিনি জানান, করোনার দেড় বছরে তাঁদের কোনো শিক্ষকের বেতন বকেয়া নেই। শিক্ষার্থীদেরও তিন মাসের বেতন মওকুফ করা হয়েছে। তা ছাড়া নিয়মিত ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী বিনা বেতনে পড়াশোনা করে। এমনকি অনেককে ইউনিফর্ম স্কুল থেকে দেওয়া হয়। করোনায় প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর পরিবারকে খাদ্যসহায়তাও দেওয়া হয়েছে।

দীর্ঘ বিরতিতেও কীভাবে স্কুলকে এ অবস্থায় রাখা সম্ভব হলো, সেটা জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার সাহা বলেন, ‘প্রথমে আমাদের ধারণা ছিল না যে বিরতি এত দীর্ঘ হবে। তাই কঠোর লকডাউনের সময়টা ছাড়া বাকি সময় সব শিক্ষক নিয়মিত এসেছেন। অনলাইন ক্লাসগুলো তাঁরা শ্রেণিকক্ষে বসেই নিয়েছেন। পরে লকডাউন যখন বাড়তে থাকল তখনো আমরা এই নিয়মগুলো চালু রেখেছিলাম। স্কুলের লাইব্রেরি ব্যবহার এই সময়ে বাধ্যতামূলক ছিল সব শিক্ষকের জন্য। যখনই লকডাউন শিথিল হয়েছে, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও করেছি। বলতে পারেন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছাড়া আর কোনো কিছুর অভাব ছিল না।’

স্কুলের শিফট ইনচার্জ সালমা আক্তার বলেন, ‘স্কুলে শিক্ষার্থীরা না এলেও আমরা কিন্তু প্রতিদিন ক্লাস টাইমে শ্রেণিকক্ষে গিয়ে অনলাইন ক্লাস করিয়েছি। বলা যায় সবাই একধরনের প্র্যাকটিসের মধ্যেই ছিলাম। স্কুলে ঢুকলে কেউ বুঝবে না যে এটা দেড় বছর পর খুলছে।’

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সারা দেশের স্কুল-কলেজের একরকম চিত্র আর দেওভোগ বিদ্যানিকেতনের চিত্রটি সম্পূর্ণ আলাদা। আমি লকডাউনের সময়ে একাধিকবার সেখানে গিয়েছি। তাঁরা সত্যিই চমকপ্রদ কাজ করেছেন। আসলে সরকারি নির্দেশনা সবার জন্য একই রকম থাকে। ব্যক্তি পর্যায়ে গিয়ে ভালো-খারাপের পার্থক্যটা তৈরি হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখামাত্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আহ্বান

যুবককে আটক করা নিয়ে বিজিবি ও এলাকাবাসীর পাল্টাপাল্টি দাবি

বরিশাল-৩ আসনে বিএনপির দুই হেভিওয়েট নেতার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

বরখাস্ত সৈনিককে অস্ত্র দিয়েছেন বিএনপি নেতা, অডিও নিয়ে তোলপাড়

ভূমি অফিসের কাণ্ড: এসি ল্যান্ড দপ্তরের নামে দেড় কোটি টাকা আদায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত