Ajker Patrika

স্বপ্নগুলো যেন ভেঙে না যায়

আপডেট : ২১ জুলাই ২০২২, ১২: ৩৫
স্বপ্নগুলো যেন ভেঙে না যায়

আইভিলিগের অন্তর্ভুক্ত ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়। এটি কানেটিকাট অঙ্গরাজ্যের নিউ হ্যাভেন শহরে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়। মাত্র ৪ দশমিক ৪৬ এক্সেপ্টেন্স রেট নিয়ে বিশ্বের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি। স্বাভাবিকভাবেই এখানে পড়াশোনা করার সুযোগ পেতে শিক্ষার্থীদের কঠিন ভর্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এসব প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের মনেই নানান প্রশ্ন থাকে। সেসব বিষয়ে জানিয়েছেন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পিএইচডি প্রোগ্রামের শৈতী শ্রাবন্তী হালদার

আবেদনের প্রক্রিয়া
মাস্টার্স, পিএইচডি ইত্যাদি স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য অ্যাপ্লিকেশন প্রসেসটা যুক্তরাষ্ট্রের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই প্রায় এক। ইয়েলে অ্যাপ্লাই করতে কয়েকটা জিনিস লাগে: 

  • স্টেটমেন্ট অব পারপাস: এখানে একজন শিক্ষার্থীকে তাঁর ব্যাকগ্রাউন্ড, তাঁর গবেষণা ও শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা এবং তিনি কেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা নির্দিষ্ট বিভাগে আবেদন করতে চাইছেন, তা গুছিয়ে লিখতে হবে।
  • টেস্ট স্কোর: জিআরই ও টোফেল পরীক্ষার ফলাফল জমা দিতে হয়। যদিও ধরাবাঁধা স্কোর পেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। দুটো স্কোরই গুরুত্বপূর্ণ। আমার মতে, টোফেলে ১২০-এর মধ্যে ১০০+ এবং জিআরইতে ৩৪০-এর মধ্যে ৩০০+ টার্গেট করা উচিত।
  • রেকমেন্ডেশন লেটার: তিনজন পরিচিত প্রফেসরের কাছ থেকে রেকমেন্ডেশন লেটার নিতে হবে। এমন প্রফেসরদের কাছ থেকে রেকমেন্ডেশন লেটার চাওয়া উচিত, যাঁদের সঙ্গে ক্লাসের বাইরেও কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
  • আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ট্রান্সক্রিপ্ট: আন্ডারগ্র্যাজুয়েট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলাফলপত্র বের করে নিতে হবে, যেখানে সিজিপিএ উল্লেখ আছে। 

আবেদনের আগে

  • আবেদন করার আগে আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিভাগের কোন প্রফেসর কিসের ওপরে গবেষণা করেন, এটা রিসার্চ করতে হবে। আবেদন করার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরদের ই-মেইল করে জিজ্ঞেস করতে হবে তাঁরা আসছে বছর তাঁদের ল্যাবে নতুন কোনো পিএইচডি শিক্ষার্থী নিয়োগ দিতে আগ্রহী কি না। তাঁদের রিপ্লাই থেকে বুঝতে হবে কোথায় অ্যাপ্লাই করলে চান্স পাওয়ার সুযোগ বেশি।
  • একজন শিক্ষার্থী অসাধারণ হলেও, যদি তাঁকে ফান্ডিংসহ নিতে ইচ্ছুক কোনো প্রফেসর সেবার না থাকে, তাহলে একটা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ইচ্ছা থাকলেও নিতে পারবে না। এটার ব্যতিক্রমও যে হয় না তা না। বিশেষ ক্ষেত্রে হয় এবং আমি এর উদাহরণ। আমি একজন প্রফেসরের সঙ্গে কথা বলে অ্যাপ্লাই করেছিলাম ঠিকই, কিন্তু আমাকে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল আমাদের বিভাগের চেয়ারের। উনি আমাকে নেন এবং আমি ইয়েলে যাওয়ার পরে কোন ল্যাব জয়েন করব, এই সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু আমার মতে, এটা একটু রিস্কি, আগে 
        থেকে প্রফেসরের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে যাওয়াটাই ভালো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-ব্যয় 
ইয়েলের খরচ কেমন এটা বিভাগের ওপরে নির্ভর করে। কিন্তু পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য ইয়েল আসলে মোটামুটি পাঁচ বছরই ফান্ডিং নিশ্চিত করে। টিউশন ফি বছরে ইউএসডি ৪৫ হাজার এবং স্টাইপেন্ড (থাকা-খাওয়ার খরচের জন্য) বর্তমানে বছরে ইউএসডি ৩৮ হাজার। এই ইউএসডি ৮৩ হাজার প্রথম বছর ইয়েল দেয় এবং পরবর্তী বছর থেকে যেই প্রফেসরের তত্ত্বাবধানে গবেষণা চলছে উনি দেন। বছরে ইউএসডি ৩৮ হাজার নিউ হেভেনে থাকা-খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত এবং এক্সট্রা উপার্জন থাকলে আরও একটু স্বাচ্ছন্দ্যে থাকা যায়। তবে যেসব শিক্ষার্থীর সন্তান আছে তাঁরা চাইলে আরও এক্সট্রা ইউএসডি ৬ হাজার ৬০০ বছরে ইয়েলের কাছ থেকে পাবেন। পাঁচ বছর পরে ফান্ডিং নিয়ে একটু সমস্যা হতে পারে, কিন্তু ইয়েল সাধারণত সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যেন শিক্ষার্থীদের আর্থিক কোনো অসুবিধা না হয়।

কর্মসংস্থানের সুযোগ 
পড়াশোনার সময়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা চাইলে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত অন-ক্যাম্পাস জব করতে পারেন। এই জব হতে পারে ইয়েলের কোনো প্রশাসনিক দপ্তরে কাজ বা টিচিং, অথবা লেখালেখি। এর বাইরে যদি কেউ ইন্টার্নশিপ করতে চান, তাহলে প্রফেসরের অনুমতি নিয়ে সামারে তিন মাস, গবেষণা বন্ধ রেখে যেকোনো কোম্পানিতে কারিকুলার প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিংয়ের (সিপিটি) জন্য আবেদন করতে পারে। পিএইচডি শেষে তিন বছর পর্যন্ত যেকোনো প্রতিষ্ঠানে অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিংয়ের (ওপিটি) মাধ্যমে চাকরি করতে পারবেন। এর পরে ইউএসএতে কাজ করতে চাইলে ওয়ার্ক ভিসা (এইচ১-বি) অথবা গ্রিন কার্ডের আবেদন করতে হবে। 

নেতিবাচক মন্তব্য উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হবে
আন্ডারগ্র্যাজুয়েট হোক আর গ্র্যাজুয়েট, বড়মাপের বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেলেই কিন্তু যুদ্ধটা শেষ নয়; বরং মাত্র যুদ্ধের শুরু। তাই নিজের পড়াশোনার অথবা গবেষণার বিষয়টাকে ভালোবাসলে সেই যুদ্ধটা হাজার গুণ সহজ হয়ে যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গবেষণার অভিজ্ঞতা অর্জন করা এবং কয়েকজন অধ্যাপকের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করা। আমার আরেকটা উপদেশ হলো—সম্ভব হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের ফান্ডিংয়ের জন্যও আবেদন করা। বাংলাদেশ থেকে যদি কেউ স্নাতক করে থাকেন, তাহলে তাঁরা এউএস অ্যাম্বাসির অধীনে ফুলব্রাইট স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারেন। আন্তর্জাতিক নারী শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু অল্পসংখ্যক স্কলারশিপও আছে, যেগুলো খুবই সম্মানজনক। তাই আমি মেয়েদের বিশেষ করে বলব, বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করতে। বর্তমানে মেয়েদের বাইরে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক বাধা আছে। পেছনে কারণ হিসেবে অনেক কিছুই থাকতে পারে, কিন্তু আমার মনে হয় যেসব চিন্তা থেকে বাধা দেওয়া হয়, সেগুলো নিতান্তই অমূলক। প্রতিটি পরিবারের উচিত, মেধাবী ছাত্রীদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের স্বপ্নগুলো ভাঙতে না দেওয়া। বাইরে উচ্চশিক্ষা নিয়ে অনেক ভুল তথ্য বা ধারণা মানুষের মনে আছে। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আশপাশের মানুষের নেতিবাচক মন্তব্য উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে এবং নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে। 

অনুলিখন: সাদিয়া আফরিন হীরা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল পুনর্বিন্যাস আনছে ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলে

গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে কক্সবাজার ভ্রমণ: ৫ নেতাকে শোকজ করল এনসিপি

‘বাবার অসুস্থতায় পরামর্শ নিতে’ চিকিৎসকের বাসায় নারী, দুজনকে পুলিশে দিল স্থানীয়রা

১৪৬ যাত্রী নিয়ে ব্যাংককের পথে এক ঘণ্টা উড়ে মিয়ানমার থেকে ফিরে এল বিমানের সেই ফ্লাইট

৬ বছর পর চীন সফরে যাচ্ছেন মোদি, আসবেন পুতিনও

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত