Ajker Patrika

শিশুকে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে হত্যা করেন বাবা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩: ৪১
শিশুকে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে হত্যা করেন বাবা

হবিগঞ্জে মা–বাবার কথা-কাটাকাটির জেরে প্রাণ গেল ১৫ মাসের অসুস্থ শিশু এ্যানির। মায়ের কোল থেকে শিশুটিকে ছিনিয়ে নিয়ে ট্রাক থেকে মহাসড়কের পাশে ব্রিজের নিচের খালে ছুড়ে ফেলে দেন বাবা। এরপর এ্যানির সৎভাই শিশু সাফিকেও ফেলে দিতে উদ্যত হলে হাতেপায়ে ধরে প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হন মা।

এ ঘটনায় শিশুটির ট্রাকচালক বাবা ইমরান আহমেদ ও ট্রাকের হেলপার বাদলকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন এ্যানির মা ইয়াসমিন বেগম। 

মামলার বাদী জানান, সিলেটের সারিঘাট এলাকার বাসিন্দা ইমরান আহমদ পেশায় ট্রাকচালক। তিন বছর আগে জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার গর্দান গ্রামের তালাকপ্রাপ্ত ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন তিনি। ইয়াসমিনের আগের স্বামীর ঘরে সাফি নামের তিন বছরের একটি ছেলে রয়েছে। ইমরানের সঙ্গে বিয়ের তিন বছরের সংসার জীবনে তাঁদের মেয়ে এ্যানির জন্ম হয়। দাম্পত্য কলহ দেখা দিলে কয়েক মাস আগে ইয়াসমিনকে তালাক দেন ইমরান। পরে স্থানীয় মুরব্বিদের মধ্যস্থতায় মেয়ের ভরণপোষণের জন্য প্রতি মাসে ইয়াসমিনকে ২ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নেন তিনি। সে অনুযায়ী ইমরান মাসে মাসে টাকা দিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি এক মাসের টাকা দিতে দেরি হওয়ায় গত ২৯ জানুয়ারি ইয়াসমিন ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। একই সঙ্গে কন্যার অসুস্থতার কথা জানান। 

অনুনয়–বিনয় করে আরেক শিশুকে রক্ষা করতে সক্ষম হন ইয়াসমিন। ছবি: আজকের পত্রিকাইমরান পরে নিজে এসে সন্তানকে চিকিৎসা করাবেন বলে জানান। তাঁর কথা অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি সিলেটের শাহপরান থানার দাসপাড়া এলাকায় ছেলে–মেয়ে নিয়ে অবস্থান করছিলেন ইয়াসমিন। ওই দিন রাত আনুমানিক ৯টার দিকে চিকিৎসককে দেখানোর নামে ইমরান ইয়াসমিন ও দুই সন্তানকে ট্রাকে তুলে নেন। এ সময় ট্রাকে বাদল নামে তাঁর সহকারী ছিলেন। 

ইয়াসমিন পুলিশের কাছে দাবি করেন, ট্রাক চালানো অবস্থায় ইমরানের সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে প্রায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালিয়ে গভীর রাতে হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার কাগাপাশা ইউনিয়নের কাগাপাশা বাজারের পশ্চিমে একটি ব্রিজের কাছে ট্রাক থামান ইমরান। এরপর ইয়াসমিনের কোলে থাকা অসুস্থ শিশু এ্যানিকে কেড়ে নিয়ে ব্রিজের নিচে খালে ফেলে দেন। শিশুপুত্র সাফিকেও ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। হাতেপায়ে ধরে সাফিকে রক্ষা করেন ইয়াসমিন। একপর্যায়ে ইয়াসমিন অজ্ঞান হয়ে যান। ওই সময় তাঁরা কোথায় অবস্থান করছিলেন তিনি তাও বলতে পারছেন না।

ইয়াসমিন বলেন, ভোরে সিলেটের টিলাগড় এলাকায় ছেলেসহ তাঁকে নামিয়ে ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যান ইমরান ও হেলপার বাদল। তিনি এই ঘটনাটি জানাতে সিলেটের শাহপরান থানায় গেলে পুলিশ আমলে নেয়নি। 

৩০ জানুয়ারি সকালে বানিয়াচং থানা-পুলিশ খবর পেয়ে শিশু এ্যানির মরদেহ উদ্ধার করে। ওই সময় তার পরিচয় না পাওয়ায় মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। একদিন এক রাত মরদেহটি মর্গে রেখে পরদিন গত বুধবার ময়নাতদন্ত শেষ করে পুলিশ। পরে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হলে প্রতিষ্ঠানটি হবিগঞ্জ কবরস্থানে শিশুটিকে দাফন করে। 

শিশুর মরদেহ উদ্ধারের খবরটি ফেসবুক ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বুধবার রাতে ইয়াসমিন ও তাঁর স্বজনেরা শিশু এ্যানিকে কোথায় ফেলা হয়েছিল নিশ্চিত হন। তাঁরা রাত ৩টার দিকে বানিয়াচং থানায় পৌঁছান।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কাগাপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এরশাদ আলীর সহযোগিতায় ইয়াসমিন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বানিয়াচং থানায় ইমরান আহমেদ ও হেলপার বাদলকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। 

এ ব্যাপারে বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ‘ঘটনার সময় ব্যবহৃত ট্রাকটি জব্দ ও ঘাতক ইমরানসহ হেলপার বাদলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত