Ajker Patrika

৫০০ টাকা ঘুষ নিয়ে ডিসি অফিসের কর্মী বললেন, পত্রিকায় খবর হলে তাঁরই ভালো

নীলফামারী প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২১: ০৩
৫০০ টাকা ঘুষ নিয়ে ডিসি অফিসের কর্মী বললেন, পত্রিকায় খবর হলে তাঁরই ভালো

নীলফামারী জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয় থেকে ওয়াজ মাহফিলের অনুমতিপত্র দিতে নাগরিক শাখার (জেএম) এক কর্মচারী ঘুষ দাবি করছেন। অন্যথায় অনুমতি দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিচ্ছেন। একপর্যায়ে দাবিকৃত টাকা গ্রহণ করেন এবং এরপর অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন। বদলি হয়ে আরও বেশি অনিয়ম করে টাকা আয় করার সম্ভাবনার কথাও জানান ওই কর্মচারী। 

গত বৃহস্পতিবারের (২ ফেব্রুয়ারি) এমন ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটিতে যিনি ঘুষ নিচ্ছেন তিনি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের জুডিশিয়াল মুন্সিখানা (জেএম) শাখার অফিস সহকারী কাম সাঁট মুদ্রাক্ষরিক আব্দুস সাদিক। 

ওয়াজ মাহফিলের আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, জেলার জলঢাকা উপজেলার দক্ষিণ দেশীবাই রাজারহাট কাবাদি রহমানিয়া নূরানি ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানের অনুমতির জন্য জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ের জেএম শাখায় আবেদন করেন মাদ্রাসার সভাপতি আলহাজ মো. ওয়াহিদুর রহমান। তবে অনুমতির কাগজটির জন্য অফিস সহকারী আব্দুস সাদিক মাদ্রাসা সভাপতির কাছে টাকা দাবি করেন। পরে স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুল মালেক কাগজটির জন্য গেলে তাঁর কাছেও টাকা চান সাদিক। ওই সাংবাদিক সেই দৃশ্য ভিডিও করে রাখেন। 

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে ঘুষ গ্রহণকারী আব্দুস সাদিককে বলতে শোনা যায়, ‘৫০০ টাকার কমে অফ টাইমে কোনো কাজ হবে না। আপনি যদি চান পেপারে উঠে দিবেন, তাও দেন, আমরা চাচ্ছি ওটা। কারণ, আমাদের ইমিডিয়েটলি বদলি নেওয়ার কথা এই শাখা থেকে। হয় ভালো সেকশন দিবে আমাদের, নাহয় রেকর্ড রুম দিবে। আমরা নির্বাচনে (দ্বাদশ নির্বাচনে) রেকর্ড রুমে বসে খাব কয়েকটা দিন। এটা আমাদের টার্গেট, না হলে নির্বাচন অন্য কাহো (কেউ) করুক।’ 

এ সময় সাংবাদিক ২০০ টাকা দেওয়ার কথা বললে সাদিক বলেন, ‘২০০ টাকায় কোনো কাজ হবে না।’ ‘কত টাকায় কাজ হবে’ জানতে চাইলে, অফিস সহকারী সাদিক বলেন, ‘৫০০ টাকার কথা কইছি তোক, রাত ১০টার মধ্যে তোক ওয়াজ মাহফিলের অনুমতি দিয়ে, তারপর বাড়ি যাব। সেই রকম লোক আমরা।’ 

এরপর অফিস সহকারীকে ৫০০ টাকা দেওয়া হলে আরও ১০০ টাকা দাবি করেন তিনি। সেটি দিতে না চাইলে তিনি বলেন, ‘তাহলে তোর কাজও হবে না। তো চিঠি অর্ধেক সই হয়া ওই যে, ক্যানটিন পর্যন্ত নিগি থুইবে (রেখে দেবে)।’ 

এ বিষয়ে সাংবাদিক আব্দুল মালেকের সঙ্গে আজকের পত্রিকার এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশের মাদ্রাসায় ওয়াজ মাহফিলের অনুমতির জন্য ডিসি বরাবর আবেদন করা হয়। কয়েক দিন ধরে কাগজটির জন্য আমিসহ অনেকেই ঘুরছি। টাকার জন্য কাগজটি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।’

সাংবাদিক আব্দুল মালেক আরও বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার আমি গেলে, আমাকেও বলা হয়—টাকা ছাড়া কোনো কাজ হবে না। আমি ভিডিও করি। সবাই ভিডিওতে দেখেছেন উনি কী বলেছেন। আমি তো সাধারণ মানুষ নই, আমি একজন সংবাদকর্মী। সংবাদকর্মী হয়েও যদি জেলা প্রশাসনের কর্মচারী আমার কাছে ঘুষ চায়, তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হয়, এ থেকে তা অনুমান করা যায়।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আব্দুস সাদিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ঘুষ নিইনি। উনি তো নিজেই ভিডিও করেছেন। উনি নিজে টাকা দিয়ে ভিডিও করেছেন, যেন পরে চাঁদা দাবি করতে পারেন। পরে তো ভাইরাল করে দিল।’ 

বিষয়টি জানালে নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভিডিওটি খুব আপত্তিকর। তাঁর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত