Ajker Patrika

প্রিসাইডিং কর্মকর্তার মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে তিন গ্রামের মানুষ

রানীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২১, ২২: ৪৫
প্রিসাইডিং কর্মকর্তার মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে তিন গ্রামের মানুষ

ঠাকুরগাঁও রানীশংকৈল উপজেলায় নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় এক প্রিসাইডিং কর্মকর্তার করা মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন একটি ওয়ার্ডের তিনটি গ্রামের মানুষ। ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৩৫০ জনকে আসামি করে দেওয়ায় মামলায় এরই মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের ঘন ঘন টহলে গ্রামজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

থানা ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়। এদিন নেকমরদ ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডে ফলাফল ঘোষণার পর পরাজিত প্রার্থী মতিউর রহমান মেনে নেননি। ভোট পুনঃগণনার দাবি করেন তিনি। কিন্তু প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মেনে নেননি। এতে তাঁর কর্মী সমর্থকেরা উত্তেজিত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। 

সহিংসতা করার অভিযোগে গত শুক্রবার সকালে উপজেলা সমাজ সেবার জুনিয়র হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হেলালউদ্দিন বাদী হয়ে পরাজিত ইউপি সদস্যকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের নাম উল্লেখ্যসহ অজ্ঞাতনামা ৩৫০ জনকে আসামি করে রানীশংকৈল থানায় মামলা করেন। মামলার পর গত রোববার (১৪ নভেম্বর) মধ্য রাতে এসআই বদিউজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ওই ওয়ার্ডের ঘনশ্যামপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে আবুল হোসেন, শাহ আলম, আব্দুল হালিম ও মো. হানিফকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। আদালত তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন। 

এদিকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে নেকমরদ ইউনিয়নের ময়মনসিংহ পাড়া টাঙ্গাইল পাড়া ও জোতপাড়া গ্রামের থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। কোনো পুরুষ বাড়িতে থাকার সাহস পাচ্ছেন না। 

সরেজমিনে টাঙ্গাইলপাড়া এলাকায় গেলে কথা বলার মতো কোনো পুরুষ পাওয়া যায়নি। এ প্রতিবেদককে দেখে কয়েকজন নারী এগিয়ে এসে কথা বলেন। তাঁরা বলেন, গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষেরা বাড়িতে থাকছে না। অপরিচিত কোনো লোককে ঘোরাঘুরি করতে দেখলেই পুরুষেরা লুকিয়ে পড়ছে। 

অপর গ্রাম জোতপাড়ার দিকে যেতে রাস্তার পাশে ধান কাটায় ব্যস্ত কিছু কৃষি শ্রমিককে ডেকে ঘটনা জানতে চাইলে তাঁরা কাছে আসার সাহস পাচ্ছিলেন না। কমপক্ষে দশ গজ দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলেন তাঁরা। তাঁদের কাদের নামে একজন বলেন, পুলিশ মাঝে মাঝেই এ গ্রামে আসছে, আমরা তাদের দেখে লুকিয়ে যাই। আর রাতে বাইরে থাকি। এরই মধ্যে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে দুজন বয়স্ক মানুষ, একজনের সম্প্রতি অপারেশন হয়েছে। 

ওই এলাকার আম্বিয়া বেগম নামে এক নারী বলেন, আমার স্বামী মাছ ধরে সংসার চালায়। ভোটের দিন মারামারির সময় আমরা যাইনি। পরে শুনেছি সবার নামে মামলা হয়েছে। এখন আমার স্বামী গ্রেপ্তারের ভয়ে বাসায় থাকে না। দুই সন্তান নিয়ে এখন আমি কীভাবে সংসার চালাই বলেন? খুব খারাপ অবস্থায় আছি।

রোকেয়া খাতুন নামে আরেক নারী বলেন, কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গেছে। এই ভয়ে বাসায় আর কেউ থাকে না। পাকা ধান কাটতে পারছি না, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা দিনমজুর মানুষ, কী করব এখন? ভোট দেওয়াটাই কি আমাদের অপরাধ? আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। 

এ বিষয়ে জানতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হেলালউদ্দীনের ফোন নম্বরে কল করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। 

রানীশংকৈল থানা ওসি এসএম জাহিদ ইকবাল বলেন, এরই মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত করা হবে। নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবে না। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সিলেটে পাথর লুটে জড়িত দুই দলের ৩৫ নেতা

আলাস্কা বৈঠকে পুতিনের দেহরক্ষীর হাতে ‘মলমূত্রবাহী স্যুটকেস’ কেন

সিলেটের ডিসি হলেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শাস্তি পাওয়া সারওয়ার আলম

শেখ মুজিবকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ছাত্রদল নেতার পোস্ট, শোকজ পেয়ে নিলেন অব্যাহতি

আমরা দখল করি লঞ্চঘাট-বাসস্ট্যান্ড, জামায়াত করে বিশ্ববিদ্যালয়: আলতাফ হোসেন চৌধুরী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত