Ajker Patrika

কোভিড টিকা দিতে টাকা নিয়ে ফেঁসে গেলেন দুই স্বাস্থ্য সহকারী

শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
কোভিড টিকা দিতে টাকা নিয়ে ফেঁসে গেলেন দুই স্বাস্থ্য সহকারী

বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলায় কোভিড টিকা দিতে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফেঁসে গেছেন দুই স্বাস্থ্য সহকারী। গত মঙ্গলবার (৭ জুন) দুপুর ১টার দিকে আড়িয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে (এফডব্লিউসি) তাঁরা হাতেনাতে ধরা পড়েন। পরে কর্তৃপক্ষ সবার টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

অভিযুক্ত স্বাস্থ্য সহকারীরা হলেন মো. সেলিমুজ্জামান সেলিম এবং আবু বকর। কমপক্ষে চার মাস ধরে তাঁরা এই কাজ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতি জনের কাছ থেকে ২০ থেকে ৫০ টাকা করে নিতেন।

বিষয়টি নজরে আসার পর অবশ্য সবার টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. মোতারাব হোসেন। 

জানা যায়, গত বুধবার আড়িয়া ইউনিয়ন এফডব্লিউসি কেন্দ্রে করোনা টিকাদান কর্মসূচি চলছিল। এ সময় সেলিমুজ্জামান সেলিম এবং আবু বকর নামে দুজন স্বাস্থ্য সহকারী টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের কাছ থেকে ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা দাবি করেন। একজন ভুক্তভোগী বগুড়া সিভিল সার্জনকে ফোনে বিষয়টি জানান। সিভিল সার্জনের নির্দেশে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা এবং উপজেলা হেলথ ইন্সপেক্টর আড়িয়া এফডব্লিউসি পরিদর্শনে যান। সে সময় টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের দেওয়া টাকাসহ সেলিম ও আবু বকরকে হাতেনাতে ধরেন। তাঁদের সেখানেই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। 

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একজন স্বাস্থ্যকর্মী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সহকারী সেলিমুজ্জামান এবং আবু বকর অনেক আগে থেকেই টাকা নিতেন। কমপক্ষে চার মাস ধরে তাঁরা এসব করে আসছেন। এই ঘটনাগুলো তাঁরা আমার সামনেই করছিল। আমাকেও সেই টাকার ভাগ দিতে চেয়েছিলেন। আমি টাকা নিইনি।’ 

উপজেলার বি-ব্লক বাজারের টিভি মেকার মাসুদ রানা বলেন, ‘আমি জানতাম করোনা টিকা দিতে টাকা লাগে না। কিন্তু টিকা দিতে গিয়ে আমিও ২০ টাকা দিয়েছি।’ 

করোনা টিকা নিতে গিয়ে টাকা দিয়েছেন এমন আরেক জন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ অফিসারকে না জানিয়ে টাকা নেওয়া প্রায় অসম্ভব। শত শত লোকের কাছ থেকে এভাবে টাকা নেবে আর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানবে না সেটা হতে পারে না। কর্মীরা কী করছে সেটা দেখার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের।’ 

অভিযোগের বিষয়ে স্বাস্থ্য সহকারী সেলিমুজ্জামান সেলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেখার দায়িত্ব নিয়েছেন। আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে। যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি তাদের টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে।’ 

অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা হেলথ ইন্সপেক্টর মো. আব্দুল হাই আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আড়িয়া এফডব্লিউসি থেকে স্বাস্থ্য সহকারী সেলিমুজ্জামান ও আবু বকর করোনা টিকাদানের জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিতেন আমরা তার সত্যতা পেয়েছি। মানিকদ্বীপা রাঙামাটি এলাকায় মনিরুল ইসলাম নামের আরেক স্বাস্থ্য সহকারীও টিকা দেওয়ার জন্য টাকা নিয়েছেন বলে সত্যতা পেয়েছি।’ 

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. মোতারাব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য সহকারী সেলিমুজ্জামান সেলিম এবং আবু বকর করোনা টিকাদান করার জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিতেন। যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তাঁদের টাকা ফেরত দিতে বলেছি। ওই স্বাস্থ্য সহকারীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। নোটিশের জবাব পাওয়ার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত