Ajker Patrika

নিজেকে জীবিত প্রমাণে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা

তারেক রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২১, ২০: ১৩
নিজেকে জীবিত প্রমাণে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বীর মুক্তিযোদ্ধা শিবনাথ ভারতী। মৃত দেখিয়ে ১২ বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে তাঁকে। ঘুষ দিতে না পারায় দুই মুক্তিযোদ্ধা নেতা মৃতের তালিকায় তাঁর নাম ঢুকিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। 
 
সেই থেকে নাচোলের মুক্তিযোদ্ধা নেতা ও উপজেলা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন শিবনাথ। দেশের জন্য জীবনবাজি রাখা দরিদ্র শিবনাথ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা শিবনাথ জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সগুনা গ্রামের মৃত বৈদ্যনাথ ভারতীর মেজ ছেলে তিনি। ১৯৭১ সালে ১৭ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধের ৭ নম্বর সেক্টরের আলফা কোম্পানির অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বরে আমনুরা মিশনের পাচক হারাধনের সঙ্গে জীবিকার তাগিদে নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার উজিরপুর রাজোয়াড় পাড়ায় চলে যান শিবনাথ। সেখানে কমল কর্মকারের মেয়ে সুষমা রানীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে। এরপর সেখানেই থিতু হন শিবনাথ। 

শিবনাথ ভারতী মুক্তিযোদ্ধা ভাতার জন্য জন্মস্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালে তাঁর ভাতা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন নাচোল উপজেলার পণ্ডিতপুরে নৈমুদ্দিন মণ্ডলের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা নেতা মোশাররফ হোসেন ও বিশালপুর গ্রামের বিষ্ণুচরন বর্মণের ছেলে চৈতন্য দেব বর্মণ। এর জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন তাঁরা। কিন্তু সেই সামর্থ্য শিবনাথের নেই। ফলে মুক্তিযোদ্ধা বাছাই কমিটির সদস্য চৈতন্য দেব বর্মণ তাঁর নাম মৃতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। 

শিবনাথ নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে সর্বশেষ চলতি বছর মুক্তিযোদ্ধা বাছাইকালে নাচোল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে কাছে যান শিবনাথ। কিন্তু নাচোলের মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন ও তৎকালীন বাছাই কমিটির সভাপতি চৈতন্য দেব বর্মণ তাঁকে ভুয়া বলে শনাক্ত করায় তাঁর আবেদন মঞ্জুর করেননি ইউএনও সাবিহা সুলতানা। 

জানা গেছে, নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার ৮ নম্বর নজিপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উজিরপুর গ্রামে টিনের ছাপড়াঘরে পাঁচ ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকেন শিবনাথ ভারতী। মুক্তিযুদ্ধের লাল মুক্তিবার্তার ৩৮ নম্বর পৃষ্ঠায় ০৩০৩০৩০০২৪ নম্বর সিরিয়ালে ও বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, ২৫ আগস্ট/ ২০০৫-এর ৮১৬৫ নম্বর পৃষ্ঠার ২৯৯ নম্বর ক্রমিকে শিবনাথ ভারতীর নাম রয়েছে। 

শিবনাথের বিষয়ে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার ৮ নম্বর নজিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাদেক উদ্দীন জানান, শিবনাথ এই ইউনিয়নের উজিরপুর রাজোয়াড় পাড়ায় প্রায় ৪৮ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। তাঁর জানামতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের দক্ষিণ সগুনা গ্রামে শিবনাথের পৈতৃক নিবাস। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। 

এ বিষয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য বাবলু মণ্ডল জানান, তাঁর জানামতে, শিবনাথের জন্মস্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল ইউনিয়নের দক্ষিণ সগুনা গ্রামে। জীবিত শিবনাথকে নাচোলের কিছু মুক্তিযোদ্ধা মৃত ঘোষণা করার কারণে তিনি সরকারি ভাতা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। 

শিবনাথ বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের লাল মুক্তিবার্তায় তাঁর নাম ও সরকারের ২০০৫ সালের (অতিরিক্ত) গেজেটেও তাঁর নাম নাচোল উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় উল্লেখ আছে। কিন্তু মোশাররফ হোসেন ও ২০০৯ সালের বাছাই কমিটির সদস্য চৈতন্য দেব বর্মণ তাঁকে মৃত ঘোষণা করেছেন। তাঁর নাম হালনাগাদ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ও ইউএনও সুপারিশ নিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁরা দুজন শিবনাথের কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। গরিব শিবনাথ তাঁদের ৫০ হাজার টাকা দিতে পরেননি। চলতি বছরে পুনঃ বাছাইকালেও মোশাররফ হোসেন ও চৈতন্য দেব বর্মণ ইউএনওকে ভুল বুঝিয়েছেন। 

অভিযোগের বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন ও ২০০৯ সালের বাছাই কমিটির অন্যতম সদস্য চৈতন্য দেব বর্মণের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা বলেন, নিজের নাম ও বাবার নাম সংশোধনের জন্য শিবনাথকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেন তাঁরা। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাচোলের সাবেক ইউএনও সাবিহা সুলতানা বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা শিবনাথ ভারতীকে শনাক্ত করে সুপারিশ করলে ভাতার ব্যবস্থা করা হতো। কিন্তু যাচাইবাছাইয়ের সময় কেউ সুপারিশ করেনি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত