Ajker Patrika

বেঞ্চের নিচে মাথা ঢুকিয়ে ২২ ছাত্রকে বেত্রাঘাত, প্রকাশ্যে দুই শিক্ষিকার দ্বন্দ্ব

নলডাঙ্গা (নাটোর) প্রতিনিধি
বেঞ্চের নিচে মাথা ঢুকিয়ে ২২ ছাত্রকে বেত্রাঘাত, প্রকাশ্যে দুই শিক্ষিকার দ্বন্দ্ব

বিজ্ঞান ক্লাসে পড়া না পারার অজুহাতে নাটোর নলডাঙ্গা উপজেলার মোমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ২২ শিক্ষার্থীকে গণহারে বেত্রাঘাত করার অভিযোগ উঠেছে সহকারী শিক্ষক জেবুন্নেসার বিরুদ্ধে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই বিদ্যালয়ের অপর এক শিক্ষিকার সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয় উঠে এসেছে।

এ ঘটনায় রোববার (১৪ আগস্ট) অভিযুক্ত ওই শিক্ষিকাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তিন দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

ইউএনও এবং উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে বেত্রাঘাত করা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুনে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। দুই শিক্ষিকার অন্তর্দ্বন্দ্বে প্রতিশোধ নিতে এ ঘটনা ঘটেছে কি না বা অন্য কোনো কারণে হয়েছে— তা খুঁজে বের করতে তদন্ত শুরু করেছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা। কোনোভাবেই প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাতের মতো শারীরিক ও মানসিক শাস্তির মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

রোববার সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার মোমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির ৪৮ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে বিজ্ঞান ক্লাসে পড়া না পারায় ২২ জন ছাত্র-ছাত্রীকে বেত্রাঘাত করে আহত করেন সহকারী শিক্ষক জেবুন্নেসা। এ ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ের আরেক সহকারী শিক্ষক মৌসুমী আকতার শিক্ষা কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ পেয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফারুক উদ্দিনকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে উপজেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি তদন্তের কাজ শুরু করেছেন শিক্ষা কর্মকর্তা। এর আগে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষিকা জেবুন্নেসাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নোটিশে তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের গণহারে বেঞ্চের নিচে মাথা ঢুকিয়ে বেত্রাঘাত করায় ক্ষোভ বিরাজ করছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এ ঘটনা জানতে রোববার বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান ইউএনও।

মোমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মানিক, নাহিদ ও রাসেল বলে, বিজ্ঞান ক্লাসে পড়া না পারায় জেবুন্নেসা ম্যাডাম ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের বেঞ্চের নিচে মাথা ঢুকিয়ে বেত দিয়ে বেদম পিটিয়েছে। একেক জনকে ৫ থেকে ৭টা পর্যন্ত বেত্রাঘাত করেছেন।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষক জেবুন্নেসা বলেন, ‘বিজ্ঞান ক্লাসে পড়া না পারায় তাদের বেত্রাঘাত করা হয়েছে। এ বিষয়ে সহকর্মী আরেক শিক্ষিকা মৌসুমী আখতার শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ক্লাস না করার জন্য উসকানি দিয়েছে এবং বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’ 

ওই শিক্ষিকার সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে এমন ঘটনা কি না— এ প্রশ্নে সহকারী শিক্ষক মৌসুমী আকতার বলেন, ‘আমার ফুটবল টিমের শিক্ষার্থীদের পিটিয়েছে জেবুন্নেসা। যাতে তারা বিরতির সময় ফুটবল খেলার প্রস্তুতি নিতে না পারে।’ 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মোমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খায়রুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘পড়া না পারায় পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞান ক্লাসের ৪৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২২ জনকে বেত্রাঘাত করেছেন সহকারী শিক্ষিকা জেবুন্নেসা। এ ঘটনায় গত রোববার অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষিকা জেবুন্নেসাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’ 

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফারুক উদ্দিন বলেন, ‘কোনোভাবেই প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত বা শারীরিক ও মানসিক শাস্তির মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা প্রদানের সুযোগ নেই। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুখময় সরকার বলেন, ‘এ ঘটনার খবর পেয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে বেত্রাঘাত করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গের কথা বলে সত্যতা পেয়েছি। এ ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত