Ajker Patrika

চুরির অপবাদে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে বাবা-ছেলেকে মারধরের অভিযোগ

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
চুরির অপবাদে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে বাবা-ছেলেকে মারধরের অভিযোগ

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় টাকা চুরির অপবাদে এক কিশোরকে (১৭) ঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধরের পর জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী কিশোরের বাবাকেও ধরে এনেও মারধর করা হয়ে। এ ছাড়া বাবা ও ছেলেকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চাচাকেও ডেকে নিয়ে জমির চুক্তিনামা আদায় করার বলে অভিযোগ উঠেছে দুই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় আজ সোমবার দুপুরে দুই ইউপি সদস্যসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন বলে জানান ভুক্তভোগী কিশোরের চাচা। এর আগে বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের ভটপুর-সিধুলি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগীরা হলেন—কিশোর, তাঁর বাবা ও চাচা। কিশোরের বাবা ও চাচা পেশায় দিনমজুর।

এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন—নয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য হাবিবুর রহমান ও মোজাম্মেল হক। 

পুলিশ, ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার ভটপুর গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলামের বাড়ি থেকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) আলমিরা ভেঙে ১ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় তারা প্রতিবেশী দিনমজুর ওই কিশোরকে সন্দেহ করেন। এরপর পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমানকে জানানো হয়।

এ নিয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) দুপুরের দিকে কিশোরকে ধরে নিয়ে পাশের সিধূলী গ্রামে জয়নাল আবদীনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমানসহ স্থানীয় কয়েকজন কিশোরের দুই হাত পেছনে টেনে ঘরের বারান্দার খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধর করেন। মারধরের একপর্যায়ে টাকা চুরির কথা স্বীকার করিয়ে তা মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করা হয়।

এরপর ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান পাশের আরেক ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোজাম্মেলকে ঘটনাস্থলে ডেকে নিয়ে যান। পরে কিশোরের বাবাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে তাঁকেও মারধর করেন ইউপি সদস্য মোজাম্মেল। এরপর বাবা-ছেলেকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ওই কিশোরের চাচাকেও ডেকে নেওয়া হয় ওই বাড়িতে। 

সেখানে নিয়ে ভাই-ভাতিজাকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চুরি যাওয়া টাকা আদায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। এ সময় কিশোরের চাচার সম্পত্তির দুই লাখ টাকায় বিক্রি করার চুক্তিনামা করেন। ওই সময় জমির গ্রাম্য দলিল ইউপি সদস্যদের হাতে জিম্মা রেখে ভাই-ভাতিজা ও চাচাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

চুরি যাওয়া টাকার মালিক আমিনুলের স্ত্রী অঞ্জনা বেগম বলেন, ‘আমি দরজায় শিকল দিয়ে বাড়ির বাইরে গেলে শোকেসের ড্রয়ারে রাখা এক লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা চুরি হয়। এলাকায় ছোটখাটো সব চুরি ওই কিশোর করে থাকে। তাই আমাদের সন্দেহ হয় এ টাকা ওই নিয়েছে।’ তবে এ বিষয়ে তাদের কোনো সাক্ষী-প্রমাণ নেই বলে জানান অঞ্জনা ও তাঁর বাড়ির লোকজন। 

ভুক্তভোগী কিশোর বলেন, ‘আমি টাকা চুরি করি নাই। সন্দেহ করে আমাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে বেঁধে মারধর করে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করে ভিডিও করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত চাচার জমির দাম ধরে গ্রাম্য দলিল করেছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’ 

কিশোরকে মারধরের পর তাঁর বাবাকে ডেকেও মারধর করার অভিযোগ উঠেছেনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রতিবেশী বলেন, হাতেনাতে না ধরে এবং কোনোপ্রকার সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়াই এভাবে চুরির অভিযোগ তুলে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে বেঁধে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি। কোনো ইউপি সদস্য এমনটা করতে পারেন না। 

অভিযোগ সম্পর্কে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক আজকের পত্রিকা বলেন, ‘আমরা ওই কিশোরকে ধরে নিয়ে বাঁধিনি, মারধরও করিনি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটা সত্য নয়।’ তবে কিশোরের বাবাকে মারধর করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন এই ইউপি সদস্য। 

অভিযোগ সম্পর্কে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, ‘পাবলিক ওই ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। আমি শুধু দুটি ছবি তুলেছি। পরে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করেছি। এর বাইরে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সঠিক নয়।’

এ ব্যাপারে কিশোরের চাচা বলেন, ‘আজ সোমবার দুই মেম্বারসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি। আমাদের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে তার সঠিক বিচার চাই। এক ছেলেকে সন্দেহ করে সবাইকে এইভাবে অত্যাচার করা ঠিক হয় নাই।’ 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক বলেন, ‘বিষয়টি শুনেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। যদি আদালতে মামলা করে থাকেন, তাহলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত