Ajker Patrika

চাঁদা না দিলে আন্দোলনের মামলার আসামি

খুলনা প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫: ১৫
Thumbnail image

খুলনার বিভিন্ন এলাকায় চরমপন্থীদের নামে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বিএনপির নেতা পরিচয়েও বিভিন্ন এলাকায় চলছে চাঁদাবাজি। চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা না দেওয়ায় ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।

চাঁদাবাজির হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না জেলার শীর্ষ ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, স্কুলশিক্ষক, ব্যাংকার, সাংবাদিকেরাও। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবসায়ী থানায় এবং বিএনপি অফিসে লিখিত অভিযোগ দিলেও অনেকে কোথাও অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহে অগ্রণী ব্যাংক ফুলবাড়ী গেট শাখার কর্মকর্তা পল্লব বাবুর কাছে দুটি মোটরসাইকেল দাবি করা হয়েছে। পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল) নামে এই দাবি করার পর তিনি আতঙ্কে আছেন। দৌলতপুর মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়ার গোলকধাম এলাকার ব্যবসায়ী নুর ইসলামের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়ায় তিনি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রেখেছেন। গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হানিফের কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া শীর্ষ একটি রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল গফ্ফার বিশ্বাসের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা দাবির ঘটনায় থানায় জিডি হয়েছে। পাশাপাশি ২ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

এ ছাড়া রাজনীতি না করেও চাঁদাবাজি ও মামলার শিকার হয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাজী বেলায়েত হোসেনের কাছে মহানগর বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার নামে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করলে তিনি ৩ লাখ টাকা দিয়ে আপাতত রক্ষা পান। খুলনা চেম্বার অব কমার্সের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শরীফ আতিয়ার রহমানের কাছে একই নেতারা ১০ লাখ টাকা দাবি করলে তিনি দেড় লাখ টাকা দেন চার-পাঁচ দিন আগে। এতে ওই নেতারা ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৩০ আগস্ট নগরীর খালিশপুর থানা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুরের মামলায় আতিয়ারকে আসামি করেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।

একই মামলায় খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের পরিচালক শেখ শাহ আলম তুহিনকে আসামি করা হয়। তাঁর কাছেও মোটা অঙ্কের চাঁদা চাওয়া হয়েছে। খুলনায় জামায়াত সমর্থিত ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হ্যামকো গ্রুপের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহমুদের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। তিনি চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা না দেওয়ায় ফুলতলা থানার একটি হত্যা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। একই মামলায় আসামি করা হয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী সুলতান আহমেদ খানকে। তাঁর কাছেও ১০ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়েছিল।

এদিকে পাঁচ দিন আগে ট্যাংক-লরি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জ্বালানি তেল পরিবেশক সুলতান মাহমুদ পিন্টুর কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন মহানগর বিএনপির এক যুগ্ম আহ্বায়ক। চাঁদা দিতে দেরি হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দেওয়া হয়। খুলনায় আওয়ামী লীগ নেতার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে গত বুধবার খুলনা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক রিয়াজ শাহেদকে শোকজ করা হয়েছে বলে বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। চাঁদা না দেওয়ায় খালিশপুর থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান মিঠুর বিরুদ্ধে খালিশপুর থানা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুরের মামলাসহ একাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন। খুলনা বড় বাজারের আড়তদার সহিদুল ও কালামের কাছ থেকে বিএনপির পরিচয়দানকারী কিছু নেতা ৩ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া জেলার শীর্ষ ব্যবসায়ী সরোয়ার কাজীর কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়েছে। টুটুল নামের এক দোকানদারের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ১ লাখ টাকা। শহরের নিক্সন মার্কেটের এক দোকানে ৫ লাখ টাকা ও খানজাহান আলী হকার্স মার্কেটে ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে তালা দেওয়া হয়েছিল। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল গিয়ে দোকানগুলো খুলে দেয়। নগরীর পাওয়ার হাউস মোড়ের পেট্রলপাম্পটি গত ৫ আগস্ট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। গত সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটি সংস্কারের উদ্যোগ নেন মালিক সৈয়দ মাসুদ। তখন বাধা দিয়ে তাঁর কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন সদর থানা বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা। কৃষ্ণ নামের একজন খুদে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়েছেন এক নেতা। আড়তদার তোতা মিয়ার আড়তে তালা দিয়ে চাওয়া হয়েছে ৫ লাখ টাকা।

অন্যদিকে সম্প্রতি নগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের কাছে সোনাডাঙ্গার বাসিন্দা শাওন হাওলাদার নামের এক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে ৩১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ তোলেন তিনি।

জানতে চাইলে খুলনা চেম্বার অব কমার্সের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শরীফ আতিয়ার রহমান বলেন, এখন ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।

জানতে চাইলে ব্যবসায়ী ও খালিশপুর থানা বিএনপির সাবেক সম্পাদক এস এম আরিফুর রহমান মিঠু বলেন, ‘যে মামলাগুলো করা হচ্ছে, তা হাস্যকর। এখানে ব্যবসায়ীরা চাহিদামতো টাকা না দিতে পারলেই মামলার আসামি হতে হচ্ছে। আমার টাকায় খালিশপুর থানা বিএনপির অফিস নির্মাণ হয়েছে, অথচ সেই অফিস ভাঙার মামলায় আমাকেই আসামি করা হয়েছে। এর চেয়ে ন্যক্কারজনক কাজ আর কী হতে পারে!’

খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাফিকুল আলম মনা বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে যাঁরা চাঁদাবাজি করছে, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বহিষ্কার ও শোকজ করা হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের নামে হয়রানিমূলক মামলার বিষয়ে খালিশপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আশীষ কুমার মিত্র বলেন, মামলায় নিরীহ কারও নাম থাকলে তদন্তে অবশ্যই বাদ যাবে। অযথা কাউকে হয়রানি করা হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত