Ajker Patrika

বন্ধুর শেখানো কৌশলে প্রতারণায় নামেন সামি, প্রেমের ফাঁদে ফেলে কেড়ে নিতেন সর্বস্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বন্ধুর শেখানো কৌশলে প্রতারণায় নামেন সামি, প্রেমের ফাঁদে ফেলে কেড়ে নিতেন সর্বস্ব

রাজধানীর ওয়ারি এলাকার বাসিন্দা আদনান সামি মজুমদার। এক বন্ধুর প্ররোচনায় জড়িয়ে যান অভিনব এক প্রতারণা চক্রে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সুন্দরী তরুণীদের ছবি দিয়ে খোলা ফেসবুক আইডি দিয়ে পাততেন ফাঁদ। এরপর বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে ডেকে আনতেন নির্দিষ্ট ঠিকানায়। প্রেমিকার ডাকে সাড়া দিয়ে আসলেই টার্গেট ব্যক্তিকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে নিরিবিলি স্থানে নিয়ে মারধর করে সঙ্গে থাকা সর্বস্ব লুটে নিতেন। আবার কখনো কখনো জিম্মি করে আদায় করতেন মুক্তিপণ। 

চলতি মাসের ১৫ তারিখ রাজধানীর একটি মার্কেটের এক দোকান কর্মচারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মুক্তিপণ আদায় করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন আদনান সামি ও তার দুই বন্ধু। অনলাইনে মাত্র পাঁচ দিনের পরিচয়ে ওয়ারীতে দেখা করতে এসে সর্বস্ব হারান ওই ব্যক্তি। 

শুক্রবার রাতে বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) রেফাতুল ইসলাম। তিনি বলেন, আদনান সামি মজুমদার নামে এই তরুণ দীর্ঘদিন বিভিন্ন জনের সঙ্গে এভাবে প্রতারণা করে আসছিলেন। ইউনুস তার বন্ধু জাহিদকে ফোন করে টাকা পাঠাতে বলে। এতে ইউনুস প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরে জাহিদ বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালিয়ে প্রতারণা চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ওয়ারী থানা পুলিশ। 

গ্রেপ্তার অপর দুজন হলেন-জিসান মাহমুদ ও তামিম হাওলাদার। 

ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তি এই ঘটনায় ওয়ারি থানায় প্রতারণা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, হঠাৎ একদিন ‘হৃদিতা রহমান’ নামে একটি আইডি বন্ধুত্বের অনুরোধ আসে। সেটি গ্রহণ করার পরে আইডিটি থেকে বিভিন্ন বার্তা পাঠানো হয়। এভাবেই ধীরে ধীরে পরিচয় গড়ে ওঠে। পরিচয়ের দুদিনের মাথায় দেখা করার অনুরোধ করে কিন্তু প্রথমে গুরুত্ব না দিলেও পরে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেই। দেখা করতে চাইলে আমাকে ওয়ারী সেন্ট্রাল ওমেন্স কলেজের সামনে যেতে বলা হয়। 

মামলায় ওই ব্যক্তি আরও উল্লেখ করেন, সন্ধ্যা ৬টার দিকে পূর্ব নির্ধারিত ঠিকানায় যাওয়ার পরে সুকৌশলে আদনান ও জিসান গলির মধ্যে দিয়ে ওয়ারী ৫৯ আর কে মিশন রোড একটি লেপতোষকের কারখানায় নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল তামিম। সেখানে নিয়ে সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, দামি ঘড়ি ও নগদ টাকা নিয়ে নেওয়া হয়। এরপর জিম্মি করে আরও টাকা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এ সময় তার এক বন্ধুকে টাকা নিয়ে আসতে বললে সেই বন্ধু জিম্মির বিষয়টি বুঝতে পেরে থানা পুলিশকে জানায়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে সামি ও তার দুই বন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। 

পুলিশের এই কর্মর্তা বলেন, ‘হৃদিতা রহমান’ নামে কোনো তরুণীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। প্রতারণা চক্রের প্রধান আদনান নিজেই ভুয়া পরিচয়ে আইডি ব্যবহার করতেন। পরে টার্গেট করে বিভিন্ন জনকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠাতেন। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজেদের ঠিকানয় ডেকে সর্বস্ব হাতিয় নিতেন। 

এসি রেফাতুল ইসলাম বলেন, আদনান ও তার বেশ কয়েকজন বন্ধুরা মিলে এমন আরও এক ডজনেরও বেশি ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে কোনো ভুক্তভোগি অভিযোগ না করায় তারা অধরা থেকে গেছেন। আদনান ওয়ারি এলাকার বাইরে যেতেন না। সবাইকে এই এলাকায় সবাইকে ডেকে আনতেন। তার প্রতারণার কাজে স্থানীয় বেশ কয়েকজন জড়িত। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তারা মূলত টার্গেট ব্যক্তিকে ডেকে এনে মারধর করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিতেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত