Ajker Patrika

এডিসি হারুনকে পুলিশ বাঁচিয়ে দিলে মামলা করবেন নাঈম, আরও যা জানা গেল

নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঢাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯: ৩৮
এডিসি হারুনকে পুলিশ বাঁচিয়ে দিলে মামলা করবেন নাঈম, আরও যা জানা গেল

ডিএমপির সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এডিসি হারুনের হাতে মার খেয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আনোয়ার হোসেন নাঈম বলেছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে যে তদন্ত হচ্ছে। তাতে যদি এডিসি হারুনকে পুলিশ বাঁচিয়ে দেয়, তাহলে এডিসি হারুনসহ নির্যাতনকারী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। নাঈম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক।

গত শনিবার রাতে তুলে নিয়ে শাহবাগ থানায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তিন নেতাকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন-অর-রশীদের বিরুদ্ধে। ঘটনার পরদিন ডিএমপি সদর দপ্তরের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপারেশনস্) আবু ইউসুফকে সভাপতি করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তদন্ত শেষ করতে পারেনি কমিটি। সে জন্য তাদের আরও পাঁচ কার্যদিবস অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়। 

সেদিন শাহবাগ থানায় পুলিশের হাতে মারধরের শিকার অন্য দুজন হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক শরীফ আহম্মেদ মুনীম ও সমাজসেবা সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান।

শনিবার রাতে আসলে কী ঘটেছিল জানতে আজ বুধবার আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা হয় নাঈমের, যিনি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। নাঈম বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক মামুন ও ছাত্রলীগ নেতা মুনীমকে ইব্রাহীম কার্ডিয়াক (বারডেম) হাসপাতাল থেকে মারতে মারতে শাহবাগ থানায় নিয়ে যান পরিদর্শক অপারেশন গোলাম মোস্তফা। তাঁর সঙ্গে শাহবাগ থানার পুলিশের অন্য সদস্য ও রমনা বিভাগের (তৎকালীন) অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুন অর রশীদ ছিলেন। থানায় নিয়ে পরিদর্শক তদন্তের রুমে মামুন ও মুনীমকে আটকে মারধর করা হয়।’  

ঘটনার শুরু কোথায়, ঠিক কখন থেকে তা জানিয়ে নাঈম বলেন, ঘটনার দিন সাড়ে ৮টা-৯টার দিকে এপিএস মামুন তাঁকে ও মুনীমকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের চতুর্থ তলায় ডেকে নেন। সেখানে গিয়ে এপিএস  মামুন আর এডিসি হারুনের মধ্যে তর্কাতর্কি দেখেন তাঁরা। পরিস্থিতি অন্যরকম দেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের মাহাবুবর রহমানকে ফোন করেন মুনীম। এডিসি হারুনও তখন থানায় ফোন দিয়ে পুলিশ সদস্যদের ডেকে আনেন। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ এলে এডিসি হারুন এপিএস মামুন ও মুনীমকে মারধর করতে করতে থানায় নিয়ে যান।

ছাত্রলীগ নেতা নাঈম আরও বলেন, পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে তিনি রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেনকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত বলেন। ডিসি তাঁকে থানায় যেতে বলেন। তিনি থানায় গিয়ে পরিদর্শক তদন্তের রুমে ঢুকে দেখেন, এপিএস মামুন ও মুনীমকে সোফায় ফেলে লাথি মারতে থাকেন এডিসি হারুন। তাঁর পরিচয় পাওয়ার পর ‘ছাত্রলীগের ক্যাডার’ এসেছে বলে মারার নির্দেশ দেন এডিসি হারুন। নির্দেশ পেয়ে পরিদর্শক অপারেশন গোলাম মোস্তফা একটানা সাত-আট মিনিট তাঁকে মারতে থাকেন। একপর্যায়ে মেঝেতে ফেলে মুখে পিস্তলের বাঁট দিয়ে আঘাত করেন এডিসি হারুন। 

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন নাঈমশাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের তিন নেতাকে নির্যাতনের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে এডিসি হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনার দিন হৃদ্‌রোগের চিকিৎসার জন্য ইটিটি করতে গিয়েছিলেন এপিএস মামুনের স্ত্রী এডিসি সানজিদা আফরিন। তাঁর সঙ্গেই হাসপাতালে গিয়েছিলেন এডিসি হারুন। চতুর্থ তলায় ৪০২৩ নম্বর ইটিটি কক্ষে ছিলেন সানজিদা। বাইরে বসে অপেক্ষা করছিলেন এডিসি হারুন। তখনই ঘটনাস্থলে আসেন এপিএস মামুন।

সেদিন ইটিটিতে দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী এক আয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, এপিএস মামুন এসেই এডিসি হারুনকে বলেন, ‘আপনি এখানে কী করছেন।’ স্ত্রী কোথায় আছেন জানার পর মামুন সরাসরি ইটিটি রুমে চলে যান। পেছন থেকে বাধা দেন এডিসি হারুন। ততক্ষণে আশপাশে মানুষ জড়ো হয়ে যায়। এপিএস মামুন তখন চিৎকার দিয়ে বলেন, ‘আমার বউয়ের কাছে আমি যাব, তুই আটকানোর কে?’ জোর করেই মামুন ইটিটি রুমে গিয়ে সঙ্গে থাকা দুই ছেলেকে ভিডিও করতে বলেন, তখন তাঁর স্ত্রী সানজিদা এপিএস মামুনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যান। তাঁদের বাধা দেন চতুর্থ তলায় দায়িত্বরত গার্ড ওয়ারেছ আলী। 

ওয়ারেছ আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ইটিটি রুমে বিশৃঙ্খলা থামাতে তিনি সবাইকে রুম থেকে বের হওয়ার অনুরোধ করেন। একটু পরই পুলিশ এসে নিয়ে যায়।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত