Ajker Patrika

নির্বাচনী প্রচারে নিষিদ্ধ পলিথিন কি বৈধ হয়ে গেল? 

মো. ফরিদ রায়হান, অষ্টগ্রাম
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ১৭: ৫১
নির্বাচনী প্রচারে নিষিদ্ধ পলিথিন কি বৈধ হয়ে গেল? 

দেশের বিভিন্ন এলাকায় ষষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন চলছে। প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে দেয়াল, পথঘাট। কুয়াশা ও বৃষ্টির পানিতে পোস্টার ভিজে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করতে কাগজের পোস্টার পলিথিনে মুড়ে দেওয়া হচ্ছে। আইন অনুসারে পলিথিন নিষিদ্ধ হলেও এই দৃশ্য যেন দেখছেই না প্রশাসন। 

অপচনশীল পলিথিন মাটি ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক উল্লেখ করে সরকার ২০০২ সালে আইন করে পলিথিন উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। আইনে পলিথিন উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকারীদের ১০ বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়। 

মাঝেমধ্যে নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালিত হলেও হাটবাজার পলিথিনে সয়লাব। আইন বাস্তবায়নে কড়াকড়ি না থাকাসহ নানা কারণে থামছেই না পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহার। সাম্প্রতিক ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পোস্টার সাঁটানোতে কদর বেড়েছে নিষিদ্ধ এই পলিথিনের। যেন নির্বাচনী প্রচারে বৈধ হয়ে গেছে নিষিদ্ধ পলিথিন। নিত্যব্যবহার্য পলিথিনের সঙ্গে নির্বাচনী পোস্টারের পরিত্যক্ত পলিথিন মিলে অবস্থা যেন 'গোদের ওপর বিষফোড়া'। 

নির্বাচনী প্রচারণা বিধিমালা অনুসারে দেয়াল বা ঘরের বেড়ায় পোস্টার লাগানো নিষেধ। নির্বাচন বিধিমতে গ্রাম-শহর, সড়ক ও হাটবাজার বা নির্বাচনী এলাকায় রশিতে ঝুলিয়ে পোস্টার প্রদর্শনের নিয়ম। এভাবে পোস্টার লাগালে কুয়াশা ও বৃষ্টির পানিতে ২ থেকে ৩ দিনেই নষ্ট হয়ে যায়। এতে প্রার্থীদের পোস্টারের সংখ্যা ও খরচের পরিমাণ বেড়ে যাবে কয়েক গুণ। এমন পরিস্থিতিতে পলিথিন ব্যবহার করছেন বলে উল্লেখ করেন প্রার্থীরা। 

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ আন্দোলন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচারে পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহার, পরিবেশের জন্য হুমকি। আর হবু জনপ্রতিনিধিদের পরিবেশ রক্ষা ও আইনের প্রতি সম্মান দেখানোর চিত্র হতাশাজনক। পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। 

পোস্টারে ছেয়ে গেছে চারপাশএ প্রসঙ্গে পরিবেশবিষয়ক সংগঠন 'হাওরাঞ্চলবাসী' ঢাকা শাখার সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বাবু বলেন, সারা দেশে নির্বাচনী প্রচারণায় চলছে পলিথিনের রমরমা ব্যবহার। প্রশাসনের চোখের সামনে পলিথিনের অবাধ ব্যবহার হতাশাজনক। প্রাণ ও পরিবেশ বাঁচাতে কঠোর শাস্তির বিধান রেখে আইন হলেও প্রয়োগে শিথিলতা থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশের ক্ষতি সুফল দেয় না। 

কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা ইটনা চৌগাংগা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘পোস্টার ঝুলিয়ে প্রচারণা চালাতে দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে। আবার বাধ্য হয়ে পরিবেশের ক্ষতিকর পলিথিন ব্যবহার করছি। নতুবা কয়েকবার পোস্টার ছাপানো লাগবে। তবে, কোনোভাবেই পলিথিন ব্যবহার কাম্য নয়।’ 

এ প্রসঙ্গে কিশোরগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম মুঠোফোনে বলেন, পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ। কেউ যদি নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করে, এই বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পরিবেশ অধিদপ্তর দেখবে। নির্বাচন বিধিমতে কোনো করণীয় নেই। 

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের সিনিয়র কেমিস্ট রুবাইয়াত সৌরভ মুঠোফোনে বলেন, পোস্টার রক্ষার জন্য পরিবেশ রক্ষা করতে না পারার বিষয়টি দুঃখজনক। এটা হবু জনপ্রতিনিধিদের কাছে কাম্য নয়। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত