Ajker Patrika

চাকরি প্রার্থী থেকে নিজেই প্রতারক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২১, ১১: ১৪
চাকরি প্রার্থী থেকে নিজেই প্রতারক

এইচএসসি পাসের পর চাকরি খুঁজছিলেন কারিশমা আক্তার। অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেখে ‘এনএইচ সিকিউরিটি সার্ভিস লি. নামের একটি প্রতিষ্ঠানে সিভি পাঠান। দুদিন পরেই তাঁকে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ফোন করা হয়। বলা হয়, আপনি প্রাথমিকভাবে আমাদের কল সেন্টারে চাকরির জন্য সিলেক্টেড হয়েছেন। এরপর ইন্টারভিউয়ের জন্য তাঁকে ডাকা হয়। সেখানে গেলে ফরমপূরণ (আবেদনপত্র) বাবদ প্রথমে পাঁচ শ টাকা নেওয়া হয়। এরপর চাকরির নিয়োগপত্র দিয়ে আরও সাড়ে তিন হাজার টাকা দাবি করা হয়। টাকা দেওয়ার পর পরবর্তীতে তিনি আর চাকরি পাননি। কারিশমা ততক্ষণে বুঝে যান, তিনি প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন। কারিশমার মতো আরও অনেকে চাকরির নামে প্রতারিত হয়ে র‍্যাবে অভিযোগ করেন। 

অভিযোগের ভিত্তিতে আজ বুধবার সকালে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কথিত হেড অফ ব্রাঞ্চ সালমা আক্তার মুন্নিকে গ্রেপ্তার করা হয়। অফিস থেকে একটি কম্পিউটার ও দুটি মোবাইল ফোনসহ প্রতারণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন নথি উদ্ধার করা হয়। 

র‍্যাবের দাবি, ভুয়া এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে প্রায় সাড়ে বারো শ  প্রতারিত হয়েছেন। হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল অর্থ। 

একইদিন বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিং করে র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন জানান, অনলাইনে সাবেক আর্মি অফিসারের বডিগার্ড, বাসা-বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীসহ বিভিন্ন পদে একটি চক্র চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছিল। তাঁরা আকর্ষণীয় বেতনের প্রলোভনে চাকরি প্রত্যাশী সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এমন ঘটনায় অনেকে র‍্যাবের কাছে অভিযোগ দেয়। খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ এলাকায় অবস্থিত ‘এনএইচ সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড’ এর অফিসে অভিযান চালিয়ে মুন্নিকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

র‍্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুন্নি জানায়, তিনি সংঘবদ্ধ এমএলএম প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। ‘বিডি জবস বিডি’ নামের তাঁর একটি পেজ থেকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সাধারণ মানুষের বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে চাকরি দেওয়ার নামে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। 

মুন্নি জানিয়েছেন, তিনি মাদারীপুরের একটি প্রত্যন্ত এলাকার নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে। এই নারীর রয়েছে উচ্চাভিলাষী মনোভাব। ইন্টারপাশের পর ঢাকার মহাখালিতে এনএইচ সিকিউরিটি সার্ভিস নামের একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক হাবিবুর রহমানের হাতে প্রতারিত হন। এরপর ভুক্তভোগী থেকে মুন্নি নিজেই হাবিবের সঙ্গে মিলে খিলক্ষেত এলাকায় একই নামের নতুন একটি প্রতিষ্ঠান খুলে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা শুরু করেন। 

পলাতক হাবিবুর রহমানের বিষয়ে জানতে চাইলে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রেপ্তার সালমার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তাঁকে ধরতে অভিযান চালাচ্ছি। কিন্তু এখনো তাঁকে পাওয়া যায়নি। আশা করছি শিগগিরই আমরা তাঁকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব।’ 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ‘এ ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে সকল মহলের সচেতনতা জরুরি। গণমাধ্যমে বিষয়গুলো ফলাও করে প্রচার হলে সচেতন হবে। এ ছাড়া জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারের নির্ধারিত সংস্থাগুলো কাজ করবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত