Ajker Patrika

ব্যবসায়ী অপহরণে সিআইডি ও র‍্যাব সদস্য, থানায় মামলা

আল-আমিন রাজু, ঢাকা
আপডেট : ০৪ জুন ২০২৩, ২১: ৫৩
ব্যবসায়ী অপহরণে সিআইডি ও র‍্যাব সদস্য, থানায় মামলা

রাজধানীর বনানী থানার টিঅ্যান্ডটি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে থেকে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের অভিযোগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কনস্টেবল এবং এলিট ফোর্স র‍্যাব-৯–এর এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে বনানী থানা-পুলিশ। বর্তমানে তাঁরা কারাগারে।
 
গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বনানী থানার টিঅ্যান্ডটি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণের মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বনানী থানা-পুলিশ। 

পরদিন বৃহস্পতিবার অপহরণ মামলাটি করেন রাজধানীর বনানী কড়াইল বউবাজার এলাকার বাসিন্দা জাকারিয়া খান (২৬)। তিনি পেশায় কাপড় ব্যবসায়ী। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—সিআইডির যানবাহন শাখার কনস্টেবল (অন্য মামলায় সাময়িক বরখাস্ত) শেখ ফরিদ (৩২) ও সিলেটে র‍্যাব-৯ এর সদর দপ্তরের কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল মো. জাহিদ মিয়া। তবে মামলার তিন নম্বর আসামি ও স্থানীয় সোর্স রুহুল আমিন (৩০) পলাতক রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। 

শেখ ফরিদ শেরপুর সদরের মনুয়ারচর পাড়ার বাসিন্দা জালাল উদ্দীনের ছেলে, জাহিদ জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানার আইরমারীর শাহজাহান মিয়ার ছেলে, আর রুহুল আমিন ঢাকার ভাটারা এলাকার বাসিন্দা।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ মে দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে ব্যবসায়ী জাকারিয়া খানকে র‍্যাব পরিচয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নেন অভিযুক্ত তিনজন। পরে তাঁকে উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। তাঁর কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন তাঁরা। রাতভর নির্যাতন শেষে ভুক্তভোগীর মানিব্যাগে থাকা নগদ ৪০ হাজার টাকা ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকাসহ মোট ৭০ হাজার টাকা আদায় করেন।
 
দুই পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জাকারিয়া খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত ১৮ মে বনানীর টিঅ্যান্ডটি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আল আমিন নামের একজনের সঙ্গে কথা বলছিলাম। এ সময় একটি সিএনজিতে করে তিনজন এসে আমাদের মারধর শুরু করে। পরে তাঁদের পরিচয় জানতে পারি— তাঁরা সিআইডির শেখ ফরিদ, র‍্যাবের জাহিদ ও রুহুল আমিন।’ 

জাকারিয়া খান আরও বলেন, ‘এর ফাঁকে আমার সঙ্গে থাকা আল আমিন পালিয়ে যান। র‍্যাব পরিচয়ে আমাকে তাঁরা তুলে নিয়ে যান। এ সময় জাহিদের গায়ে র‍্যাব লেখা পোশাক ছিল। তাঁরা সিএনজিতে তুলে আমার হাতে হাতকড়া পরায়। এরপর গাড়ি চলতে থাকে আর আমাকে মারধর করতে থাকে। এ সময় তাঁরা আমাকে বলে, তোর নামে অভিযোগ আছে। ১০ লাখ টাকা দিলে ছাড়া হবে। আর টাকা না দিলে হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে। দিয়াবাড়িতে নিয়ে মারধর করার সময় আমাকে কাঁদতেও দেয় নাই। লাঠি দিয়ে পেটায় কিন্তু আমাকে কোনো শব্দও করতে দেয় নাই। ওই সিএনজিতে ধারালো অস্ত্রও ছিল। তারা সারা রাত উত্তরা, মিরপুর, ভাষানটেকসহ বিভিন্ন এলাকায় আমাকে নিয়ে ঘোরে। পরে খিলক্ষেতের কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে ১৯ তারিখ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নামিয়ে দেয়।’ 

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জাকারিয়া বলেন, ‘আমার নগদ অ্যাকাউন্টে থাকা ৩০ হাজার টাকা ভাষানটেক এলাকায় একটা দোকান থেকে তুলে নেয় তারা। আমার ধারণা, ওই সিএনজির চালকও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত।’ 

যেভাবে গ্রেপ্তার হলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই সদস্য
ব্যবসায়ী জাকারিয়া খানকে নির্যাতন করে টাকা আদায়ের পর রাতভর ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরির সকালে তাঁকে কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে নামিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি স্থানীয় ধনী ও ব্যবসায়ীদের তথ্য দেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়। গত ৩১ মে রাতে আবারও অপহরণের প্রস্তুতি নেন অভিযুক্তরা। এ দিন ভুক্তভোগী জাকারিয়াকে কোনো ব্যবসায়ীর তথ্য দিতে বারবার চাপ দেন তাঁরা। জাকারিয়া বাধ্য হয়ে স্থানীয় পুলিশের এক সোর্সকে বিষয়টি জানান। পরে ওই সোর্সের সহযোগিতায় বনানী থানা-পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন পুলিশ ফাঁদ পেতে দলটিকে আটক করে।

র‍্যাব ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, সিআইডির যানবাহন শাখার কনস্টেবল (সাময়িক বরখাস্ত) শেখ ফরিদ আরও একটি মামলার আসামি। অন্যদিকে কনস্টেবল জাহিদ গ্রেপ্তার হওয়ার প্রায় তিন মাস আগে সিআইডি থেকে র‍্যাব-৯–এ বদলি হন। এরপর দুই সপ্তাহের ছুটিতে অপহরণ চক্রের হয়ে কাজ শুরু করেন।

জাহিদের বিষয়ে জানতে চাইলে র‍্যাব-৯ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোমিনুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জাহিদের বিষয়টি আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি। তবে এখন পর্যন্ত থানা থেকে অফিশিয়াল কোনো চিঠি পাইনি। কী কারণে সে গ্রেপ্তার হয়েছে, এ বিষয়ে চিঠি পেলে বলতে পারব। তখন তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

অন্যদিকে অপহরণ মামলায় কনস্টেবল শেখ ফরিদ গ্রেপ্তারের বিষয়ে সিআইডির লজিস্টিক শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার খন্দকার শামীমা ইয়াসমিন বলেন, ‘শেখ ফরিদ সাসপেন্ডে আছেন। অনেক দিন ধরে আমাদের সঙ্গে নেই। তাঁর বিষয়ে আমি তেমন কিছু বলতে পারব না। গ্রেপ্তারের বিষয়টিও আমার জানা নেই।’

বনানী থানায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর করা অপহরণ মামলাটি তদন্ত করছেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুজন বর্তমানে কারাগারে আছে। মামলাটি তদন্ত করছি। এখন এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তদন্ত শেষে জানানো যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কুয়েটে ক্লাস বর্জন নিয়ে শিক্ষক সমিতিতে মতবিরোধ, এক শিক্ষকের পদত্যাগ

এনবিআর বিলুপ্তির জেরে প্রায় অচল দেশের রাজস্ব কর্মকাণ্ড

দুটি নোবেলের গৌরব বোধ করতে পারে চবি: প্রধান উপদেষ্টা

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রশ্নে যে প্রতিক্রিয়া জানাল যুক্তরাষ্ট্র

২ ম্যাচ খেলেই মোস্তাফিজ কীভাবে ৬ কোটি রুপি পাবেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত