Ajker Patrika

বৈদ্যুতিক মিটার ও ট্রান্সফরমার চুরি, টাকার বিনিময়ে ফেরত 

মঞ্জুর রহমান, মানিকগঞ্জ
Thumbnail image

মানুষজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের কথা হরহামেশায় শোনা যায়। কিন্তু বৈদ্যুতিক মিটার চুরি করে টাকার বিনিময়ে তা ফেরত দেওয়ার কথা কখনো শোনা যায়নি। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটেছে মানিকগঞ্জ সদর ও সাটুরিয়াসহ জেলার পাঁচটি উপজেলায়। গত ৬ মাসে জেলায় দুই শতাধিক বৈদ্যুতিক মিটার ও ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটে এবং টাকার বিনিময়ে আবার কিছু ফেরতও দেওয়া হয়েছে। 

সম্প্রতি ধামরাই উপজেলার নান্দেশ্বরী এলাকায় মেসার্স শহীদ টিম্বার অ্যান্ড স’মিলে রাতের কোনো এক সময় অজ্ঞাত যুবক এসে বৈদ্যুতিক মিটার খুলে নিয়ে গেছে। চুরির এই দৃশ্য ধরা পড়ে সেই স’মিলে বসানো সিসি ক্যামেরায়। গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া এলাকার আব্দুল করিম মিয়ার চালের মিলের বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হয়ে যায়। চলতি মাসে সাটুরিয়া উপজেলার সাহেব পাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের চালের মিলের বৈদ্যুতিক মিটার রাতের বেলায় চুরি করে নিয়ে যায় সঙ্গবদ্ধ চোরের দল। এভাবে গত ৬ মাসে জেলায় দুই শতাধিক বৈদ্যুতিক মিটার ও ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো চোরকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। ফলে দিন দিন মিটার ও ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তা, মিল মালিকসহ সাধারণ মানুষজন আতঙ্কে দিন পাড় করছেন। 

মানিকগঞ্জ সদর ও সাটুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈদ্যুতিক মিটার চুরির পর সেখানে থাকা ফাঁকা মিটার বোর্ডে চোরেরা একটি মোবাইল নম্বর রেখে যান। পরে ওই নম্বরে যোগাযোগ করা হলে চোরের দাবিকৃত ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা বিকাশ, রকেট বা নগদের মাধ্যমে পরিশোধ করলে তাঁদের নির্দেশিত কোনো এক নির্জন জায়গায় মিটার রেখে যান চোরেরা। পরে ভুক্তভোগীকে মোবাইলে জানিয়ে দিলে পরিত্যক্ত স্থানে রেখে যাওয়া মিটার পেয়ে যান মালিকেরা। এ কাজে চোরদের ওপর বিশ্বাস রাখতে হয় ভুক্তভোগীদের। তবে এ খবর পুলিশকে জানানো হলে পরবর্তীতে আবার তাঁর মিটার চুরি করবেন বলে হুমকি প্রদানও করা হয়। 
 
সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া এলাকার আব্দুল করিম মিয়া জানান, চুরি যাওয়া মিটারের বদলে নতুন মিটারের সংযোগ নিতে গ্রাহকদের ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা খরচসহ বাড়তি নানা ঝামেলা পড়তে হয়। এ কারণেই চোরেদের প্রস্তাবে রাজি হন মিটার মালিকেরা। আর চোরেরা সেই সুযোগটি নেন। 

মিটার চুরির ঘটনাটি সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়লেও এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। ছবি: সংগৃহীতনাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিটার মালিক বলেন, ‘চোরেরা যে পদ্ধতিতে মিটার চুরি করে তা দেখে বোঝা যায় তাঁদের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের অসাধু কিছু কর্মচারী জড়িত। সাধারণ মানুষের পক্ষে মিটার খুলে নেওয়া সম্ভব নয়। তা ছাড়া মিটার খুলে ফেলার চাবি চোরেরা কোথায় পায়? শুধু তাই নয়, মিটার চুরি হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ জিডি নিতে চায় না। আর জিডি না নিলে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা নতুন মিটার সংযোগ দিতে চায় না। মিটার চুরির দৃশ্য সিসি ক্যামেরায় স্পষ্ট দেখা এবং চোরেদের চেহারাও বোঝা যায়। তবুও পুলিশ তাঁদের আটক করতে পারেন না।’ 

মানিকগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় মাসে মানিকগঞ্জ সদর-সাটুরিয়াসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পাঁচ কেভিএ ট্রান্সফরমার ৪১ টি, ১০ কেভিএ ট্রান্সফরমার ৩৬ টি, ১৫ কেভিএ ট্রান্সফরমার ১০ টি, ২৫ কেভিএ ট্রান্সফরমার ৯টি ও ৩৭ কেভিএ ট্রান্সফরমার ৩ টিসহ শতাধিক বৈদ্যুতিক মিটার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব মিটার ও ট্রান্সফরমারের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। 

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সিনিয়র ম্যানেজার আব্দুর রশিদ মৃধা বলেন, ‘মিটার চুরির বিষয়টি জানার পর জেলায় আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে একাধিকবার বলা হয়েছে যে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ আমাদের জানিয়েছে তারা অভিযান পরিচালনা করছে। খুব দ্রুত সঙ্গবদ্ধ চোরদের আটক করা হবে। একই সঙ্গে সাধারণ গ্রাহকদের সচেতন করতে জেলা শহর থেকে গ্রামাঞ্চল পর্যায়ে মাইকিং করে সচেতন করা হচ্ছে। মিটার চুরির পর থানার জিডি কপি দেখাতে পারলে অর্ধেক টাকার পুনরায় সংযোগ দেওয়ার হয়।’ 
 
মানিকগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ভাস্কর সাহা জানান, বৈদ্যুতিক মিটার চুরির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে। খুব শিগগির চুরির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনিগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত