Ajker Patrika

ঋণ মওকুফ করিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার স্বাক্ষর জাল, উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পরোয়ানা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৪, ২২: ০৬
ঋণ মওকুফ করিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার স্বাক্ষর জাল, উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পরোয়ানা

দুই কোটি পাঁচ লাখ টাকার ব্যাংক ঋণ মওকুফে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টার স্বাক্ষর জালের মামলায় দণ্ডিত কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রেনুর বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। 

গত ১৮ জানুয়ারি সাজা পরোয়ানাটি কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয় গ্রহণ করলেও বিষয়টি গোপন ছিল। আজ সোমবার সেটি জানাজানি হয়। এর আগে ৪ জানুয়ারি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৮ সাজাপ্রাপ্ত হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে এ পরোয়ানা জারি করেন।

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গ্রেপ্তারি পরোয়ানাটি নিরীক্ষার পর অন্যান্য সাজা পরোয়ানা যেভাবে তামিল হয়, এখানে তার ব্যত্যয় ঘটবে না।’ 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম রেনু পাকুন্দিয়া পৌরসভার মরুরা এলাকার মৃত ইমাম উদ্দিনের ছেলে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। পরোয়ানার খবরটি ছড়িয়ে পড়লে গ্রেপ্তার আতঙ্কে তিনি গা ঢাকা দেন। উপজেলা পরিষদের কার্যালয় এবং এলাকায় তাঁকে দেখা যাচ্ছে না।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, লিমিটেড মেসার্স এলিট আয়রন অ্যান্ড স্টিল জিপি শিট লিমিটেডের কাছে ঋণের দুই কোটি পাঁচ লাখ টাকা পায় উত্তরা ব্যাংক। পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেনু ওই ঋণ মওকুফ করে দেওয়ার কথা বলে কোম্পানিটির কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা নেন। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের বরাতে তাঁর স্বাক্ষর জাল করে ঋণ মওকুফের ব্যবস্থা নিতে উত্তরা ব্যাংকের এমডি বরাবর একটি চিঠি ইস্যু করেন। চিঠিতে ড. মশিউর রহমানের স্থলে ডা. মশিউর রহমান লেখায় উত্তরা ব্যাংকের এমডির সন্দেহ হয়। তিনি চিঠিটি যাচাইয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠান। সেখানে প্রমাণিত হয় ওই চিঠি ড. মশিউর রহমান ইস্যু করেননি। 

এ ঘটনায় সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল করিম ২০১২ সালের ২৬ এপ্রিল বংশাল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় একই কর্মকর্তা ২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রেনুসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। 

মামলার অপর আসামিরা হলেন মেসার্স এলিট আয়রন অ্যান্ড স্টিল জিপি শিট লিমিডেট পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন, চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোফাজ্জল হোসেন, পরিচালক আমজাদ হোসেন ও মনোয়ার হোসেন। ২০১৫ সালের ১১ জুন মামলায় উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রেনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে অপর আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। 

পরে আদালত এ মামলায় দণ্ডবিধির ৪৬৮ ধারায় উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনুকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং দুই হাজার টাকা জরিমানা; অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। 

এ বিষয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময়ে আমার বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা দেওয়া হয়েছে।’

পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান টিটু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কাগজটি হাতে এসে পৌঁছায়নি। আমার হাতে এসে পৌঁছালে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে ২১ মার্চ আদালতে মামলায় দণ্ডিত পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি সাক্ষাতের ওই ছবি নিজের সমর্থকদের দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত