Ajker Patrika

খুনের ঘটনার ১০ দিন পর দোকান খুলতে শুরু করেছে বুধপুরা বাজারের ব্যাবসায়ীরা

পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
খুনের ঘটনার ১০ দিন পর দোকান খুলতে শুরু করেছে বুধপুরা বাজারের ব্যাবসায়ীরা

চট্টগ্রামের পটিয়ার কাশিয়াইশ ইউপি চেয়ারম্যান ছোট ভাই সোহেল খুনের টানা ১০ দিন পর বুধপুরা বাজারে ও তার আশপাশের দোকানগুলো স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ আজ সোমবার সকাল থেকে ব্যবসায়ীরা তাঁদের দোকানপাট খুলতে শুরু করলে তাঁদের বাধা দেন চেয়ারম্যানের লোকজন। পরে দুপুরে পুলিশ এসে ব্যবসায়ীদের দোকান খুলতে আশ্বস্ত করলে অনেকেই দোকান খুলতে শুরু করেছেন। 

তবে অনেকের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করায় তারা আজও দোকানপাট খুলছেন না। এ সময় অনেক ব্যবসায়ীকে দোকানপাট পরিচ্ছন্নতা কাজ করছেন। গত ২২ এপ্রিল রাত থেকে টানা ১০ দিন বুধপুরা বাজারের দক্ষিণ অংশের অর্ধশতাধিক দোকান পাঠ বন্ধ থাকায় অনেক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

এই সময় ব্যবসায়ী জানান, ঘটনার পর থেকেই তাঁদের দোকান বন্ধ রাখতে শাসিয়ে গেছেন চেয়ারম্যানের লোকজন। আর বন্ধ না করলে জ্বালিয়ে দেবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে তাঁদের। সেই ভয়ে ব্যবসায়ীরা কেউই দোকান খুলতে সাহস পাননি। আজ দুপুর থেকেই কেউ কেউ খুলতে শুরু করেছেন দোকান। তবে এখনো পুরোপুরিভাবে স্বাভাবিক হয়নি এলাকায় পরিস্থিতি। 

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, আশপাশের দোকানদাররা ধীরে ধীরে তাঁদের দোকান খুলতে শুরু করেছেন। সংঘর্ষের সময় অনেক দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোর মেরামতের বিষয় রয়েছে। দোকান মালিকেরা সেগুলো ঠিক করছেন। আবার কেউ কেউ এখনো এলাকা ছাড়া। 

মোবাইল দোকানি সোহেল বলেন, ঘটনার পর থেকেই দোকান বন্ধ রাখতে শাসিয়ে গেছেন চেয়ারম্যানের লোকজন। তাঁদের ভয়ে বন্ধ রেখেছি। আজ সোমবার সকালে দোকান খুলে বসলে চেয়ারম্যানের লোকজন এসে বন্ধ করে দিতে বলেন। দুপুরের দিকে যখন পুলিশ এসে আশ্বস্ত করেন তখন দোকান খুলে বসতে সাহস পাই।

এদিকে হত্যার ঘটনার পর থেকে বুধপুরা এলাকার ৩০ টি পরিবারের প্রায় তিন শতাধিক মানুষ গ্রাম ছাড়া হয়েছেন। তাঁদের বাড়িঘর ও দোকানপাট ঘটনার দিন ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালিয়েছে চেয়ারম্যান আবেদন কাসেমের লোকজন।  

বুধপুরা বাজারের ফার্নিচার ব্যবসায়ী ও মামলার আসামি জাহাঙ্গীর আলমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও ১০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেন তাঁর মা ও মুক্তিযোদ্ধা মুন্সি মিয়ার স্ত্রী কুলসুমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে নিরপরাধ। ঘটনার সময় সে দোকানের বাইরে ছিল। দোকানের সব ফার্নিচার লুট করে নিয়ে গেছে চেয়ারম্যানের লোকজন। এরপর ও তাঁরা দমেনি। আমার ছেলেকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। আমার অন্য ছেলেরাও পর্যন্ত তাঁদের ভয়ে এলাকায় আসতে পারছে না এবার ঈদেও। আমার ছেলের অপরাধ সে ইউপি নির্বাচনে কায়েছকে ভোট দিয়েছে।’ 

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমার ভাই মারা গেছে তাঁকে তো আর ফিরে পাব না। এলাকায় যারা পালিয়ে আছে তাদেরকে ঈদে এসে বাড়িতে ঈদ উদ্‌যাপন করতে আমার লোকজন বলে আসছেন।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘দোকান পাট কেন বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা তা আমি জানি না। আমরাতো কাউকে দোকান বন্ধ রাখতে বলিনি। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তার আছে। আর যারা পালিয়ে আছে তারা তো আসামি।’

এ বিষয়ে পটিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা তো খুনের ঘটনার পর থেকেই এ এলাকায় নিয়মিত ডিউটি করছি। বাজারের দক্ষিণ অংশের বেশ কিছু দোকান বন্ধ থাকতে দেখেছি। কি কারণে তাঁরা দোকান বন্ধ রেখেছে তা কেউ আমাদের জানাননি। আজও আমরা এসে দোকান পাট খুলতে বলছি ব্যবসায়ীদের।’ 

নিহত সোহেলের ভাই ও ওই এলাকার চেয়ারম্যান দোকান বন্ধ রাখার জন্য বলেছেন বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদেরউল্লেখ্য, ২২ এপ্রিল শুক্রবার রাতে তারাবির নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কাশিয়াইশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের ছোট ভাই মোহাম্মদ সোহেলকে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। এ ঘটনায় আরও তিনজন ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন। ঘটনার পরদিন চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বাদী হয়ে মোহাম্মদ কায়েছকে প্রধান আসামি ৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত ১৪-১৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ ঘটনায় ছুরিকাঘাতকারী শরিফ সহ ৪ জন আটক আছেন। তাদের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত