Ajker Patrika

চমেকে নিয়োগ দেওয়া ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
চমেকে নিয়োগ দেওয়া ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত প্রায় ২ শ কর্মচারীর চাকরি পুনর্বহালে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। শাপলা এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটি চমেকের জনবল সরবরাহকারী। জনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা করে কর্মচারীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা আদায়ের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। অর্থাৎ ২ শ কর্মচারী থেকে আধ কোটি টাকা আদায় করছে শাপলা এন্টারপ্রাইজ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ড. মো. আফতাবুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হাসপাতালে জনবল নিয়োগ দিয়েছি। এখন তাদের লোকজনদের ভেতরে কি হচ্ছে সেটা আমরা জানি না। এসব খবর আমাদের কাছে আসার কথা না। কর্মচারীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের এমন অভিযোগ পাইনি। তবে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণসহ অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানা যায়, গত বছর হাসপাতালটিতে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে এক বছরের জন্য প্রায় ২ শ লোক নিয়োগ পান। এরা ওয়ার্ড বয় ও আয়ার কাজ করেন। চলতি বছর জুলাইয়ে চুক্তির মেয়াদ হয়। গত আগস্টে কর্মচারীদের চাকরিতে পুনর্বহাল করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে চমেক কর্তৃপক্ষ নতুন চুক্তি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শাপলা এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে।

হাসপাতালটিতে আউটসোর্সিং হিসেবে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত চারজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দাবি করে। বলা হয় এক বছরের চুক্তি শেষ হওয়ায় নতুন করে নিয়োগ দেওয়া বাবদ এ টাকা নেওয়া হচ্ছে। টাকা দিতে না পারলে চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে ভয়ভীতিও দেখানো হয়। কর্মচারীদের কেউ নিজেদের জমানো টাকা, আবার কেউ ধার-দেনা কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের থেকে ঋণ নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হাতে টাকা তুলে দিচ্ছে। এদের একজন মঙ্গলবার বলেছেন, কোনো রকম ধার-কর্জ করে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ম্যানেজ করতে পেরেছি। অল্প সময়ের মধ্যে বাকি টাকাগুলো কীভাবে ম্যানেজ করব বুঝে উঠতে পারছি না।

বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেছে, চমেক হাসপাতালে লিলেন স্টোরের ভেতর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির একটি টেবিলে কর্মচারীদের কাছ থেকে এ টাকা প্রকাশ্যে নেওয়া হচ্ছে। আড়ালে থেকে একটু দূর থেকে ওই টেবিলে টাকা আদায়ের চিত্র চোখে পড়ে প্রতিবেদকেরও। ইতিমধ্যে অর্ধেকের বেশি কর্মচারীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে বলেও জানা যায়। তবে গত শনিবার গিয়ে দেখা যায়, চার দিন আগে যেখানে কর্মচারীদের থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছিল সেখানে এখন আর টাকা নেওয়া হচ্ছে না।

কর্মচারীদের সূত্রগুলো জানায়, কিছুদিন কর্মচারীদের কাছ থেকে সরাসরি টাকা নেওয়া হয়েছে। তবে এখন টাকা জমা নেওয়ার জন্য কর্মচারীদের দশজনের একটি গ্রুপ করে দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে শাপলা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী প্রনয়ন বড়ুয়ার সঙ্গে প্রথম মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু পরিচয় পেয়ে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। পরে একাধিকবার ফোন করলেও ধরেননি। গত শনিবার শাপলা এন্টারপ্রাইজের অফিসে গেলে প্রনয়ন বড়ুয়া এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকেন্দ্রিক টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, সরকারি-বেসরকারি ঠিকাদারি, বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্য, কমিশন-ক্লিনিক বাণিজ্য নিয়ে গত বছর দুর্নীতি দমন কমিশন আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করে। এ সময় বিভিন্ন নথির পাশাপাশি গত ১১ বছরে হাসপাতালটিতে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত