Ajker Patrika

আয়াতের বাবাকে অপরিচিত নম্বর থেকে হুমকি, হত্যাকাণ্ডে আরও কেউ কি জড়িত 

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১৮: ৪৫
Thumbnail image

চট্টগ্রামে পাঁচ বছর বয়সী শিশু আয়াতকে অপহরণের পর নৃশংসভাবে হত্যা ঘটনায় তার পরিবারকে দুই দফা মোবাইলে বার্তা পাঠিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) রাতে আয়তের বাবা সোহেল রানা এ অভিযোগ করেন। এ ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে-ঘটনার পেছনে আর কেউ কি জড়িত! এদিকে হুমকির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে বলে জানিয়েছে পিবিআই।

আয়াতের বাবা সোহেল রানা আজ শনিবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাঁচ দিন আগে হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেজ দিয়ে আয়াত হত্যার বিষয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দিয়েছিল অপরিচিত একজন। গতকাল শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২ টায়ও একইভাবে হুমকি দেওয়া হয়। আমরা বিষয়টি পিবিআইকে জানিয়েছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘৬৫৮৪০৪০২০৭ নম্বর থেকে অপরিচিত ওই ব্যক্তি আরও বলেন, আয়াতকে ৬ টুকরো করেছি তোমাদেরও টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হবে। আবিরকে আমি বলেছিলাম ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সে না পালানোর কারণে ধরা খেয়েছে।’ 

সোহেল রানা বলেন, ‘ওই ব্যক্তির কণ্ঠ শুনে মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি মনে হয়েছে। আমি ম্যাসেজগুলো সংরক্ষণ করে রাখতে পারিনি। এর মাধ্যমে কেউ আয়াতের তদন্ত ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে কিনা তা নিয়েও শঙ্কিত রয়েছি।’

আয়াতের মা শাহিদা ইসলাম তামান্না বলেন, ‘অপরিচিত ওই ব্যক্তি ভয়েস ম্যাসেজ পাঠানোর পর সঙ্গে সঙ্গে ডিলিট করে দিছে। তিনি কেন এসব করছে, কিছু বুঝতে পারছি না।’ 

মেয়ে আয়াতের কবরের পাশে বাবা সোহেল রানা। ছবি: সংগৃহীতএ বিষয়ে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মনোজ কুমার দে আজকের পত্রিকাকে বলেন, আয়াতের পরিবারকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি আমাদেরকে জানানো হয়েছে। তাঁদের এই বিষয়ে থানায় একটা জিডি করে রাখার জন্য বলা হয়েছে। যাতে থানা-পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে। একই সঙ্গে আমরা হুমকি দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখছি।’ 

এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে আর কেউ জড়িত আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্তাধীন অবস্থায় এই মুহূর্তে কিছু বলা যাবে না।’ 

এদিকে আয়াতের মরদেহের কয়েকটি খণ্ডাংশ উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) সেগুলো নিজেদের বাড়ির সামনে কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। আয়াতের শরীরের তিনটি অংশ দাফনের পর বারবার সেখানে ছুটে যাচ্ছে তাঁর বাবাসহ স্বজনেরা। এলাকার লোকজনও ছুটে আসছেন আয়াতের কবরটি দেখতে। অন্যদিকে আয়াতের মা সন্তানের জামা কাপড় ও খেলনাগুলোয় হাত বুলিয়ে মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। 

গত ১৫ নভেম্বর ইপিজেডের বাসা থেকে বেরিয়ে পাঁচ বছরের শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজ হয়। তাঁর নিখোঁজের বিষয়ে পিবিআই তদন্ত করে আবির আলী নামে ১৯ বছর বয়সী তরুণ কর্তৃক অপহরণের তথ্য পায়। গত ২৫ নভেম্বর আবিরকে গ্রেপ্তারের পর পিবিআই জানতে পারে মুক্তিপণের উদ্দেশে আয়াতকে অপহরণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। কিন্তু ঘটনার দিন তাঁর মোবাইল সিমটি কাজ না করায় সে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। একপর্যায়ে শিশুটিকে হত্যা করা হয়। 

পরে তাঁর লাশটি ৬ টুকরো করে পৃথক চারটি পলিথিনে ভরে খণ্ডিত অংশগুলো ইপিজেড থানাধীন আকমল আলী ঘাট সংলগ্ন নালায় ও সাগরে ফেলে দেওয়া হয়। পরে পিবিআই মরদেহের খণ্ডাংশের উদ্ধার অভিযানে নেমে পৃথক প্যাকেটে আয়াতের দুটি পা ও মাথা উদ্ধার করে। মরদেহের বাকি অংশগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চালানোর কথা জানান তদন্ত কর্মকর্তা। এর আগে পিবিআই আবিরসহ তাঁর বাবা, মা ও বোনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়। বর্তমানে আবির পিবিআই হেফাজতে রয়েছেন। পিবিআইয়ের কাছে আবির শিশু আয়াতকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। 

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত