Ajker Patrika

শর্টকাট আয়ের লোভে জুয়া

ফায়সাল করিম, চট্টগ্রাম
শর্টকাট আয়ের লোভে জুয়া

জুয়া খেলার টাকা জোগাড়ে নিজের ছেলের মোবাইল ফোন চুরি করেছিলেন মিজানুর রহমান। সেটি বিক্রি করে জুয়ায় বসে এক দিনেই হারিয়েছেন পুরো টাকাটা। পরের দিন বাবার এমন অপরাধের প্রতিবাদ করেছিল ছেলে। তবে অনুশোচনা তো দূরে থাক, উল্টো ক্ষোভে ফেটে পড়েন মিজানুর রহমান। ছেলে এবং স্ত্রীর ওপর চালান নির্যাতন।

গত ১২ জুলাই নগরের বায়েজিদ থানায় এমনই এক অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন ওই ব্যক্তির স্ত্রী হাজেরা বেগম। পুলিশকে তিনি জানান, মহামারিতে গত বছর থেকেই তাঁর স্বামীর আয়-উপার্জনে ভাটা পড়ে। বয়স ৫০ হওয়ায় এখন আগের মতো রিকশাও চালাতে পারেন না। টুকটাক কাজে যা আয় করেন তা–ও সামান্য। তাই শর্টকাটে উপার্জনের ফন্দি আঁটেন মিজানুর। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন জুয়ার আসরে। তখন থেকেই সংসারে চলছে নানা অশান্তি।

বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, এখানকার অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ লকডাউনে কাজ হারিয়ে লোভে পড়ে জুয়া খেলায় ঝুঁকছেন। সোনার চেইন বা মোবাইল ফোনের মতো মূল্যবান জিনিস বন্ধক রেখে বা বিক্রি করে জুয়ার ফাঁদে হারাচ্ছেন সব। এ নিয়ে বেড়েছে পারিবারিক অশান্তি আর কলহ। তিনি জানান, গত মে মাস থেকে বায়েজিদ থানায় ১২ মামলায় আটক হয়েছেন ৫৪ জন। জব্দ করা হয়েছে লক্ষাধিক টাকা।

নগরীর পতেঙ্গা থানায় গত মে মাস থেকে জুয়ার মামলা হয়েছে ৩টি। এসবে ধরা পড়েছেন ৪৪ জন।

পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জোবাইর সৈয়দ বলেন, ‘এদের অধিকাংশই রিকশাচালক, ভ্যানচালক, নয়তো দোকানের কর্মচারী বা দিনমজুর। দিনে আয় করে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা। তবে লোভে পড়ে জুয়া খেলে তারা এসব উপার্জনও হারায়। এসবে জড়িত কয়েকজন মূল হোতা আমাদের সাম্প্রতিক অভিযানে ধরা পড়েছে।’

সিএমপির জনসংযোগ কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার আরাফাতুল ইসলাম জানান, গত সাড়ে তিন মাসে নগরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষুদ্র পরিসরের এমন জুয়া খেলার জায়গা থেকে আটক হয়েছেন অন্তত ২০০ জন। এসব অভিযানে মামলার সংখ্যা ১২৫।

উপপুলিশ কমিশনার বলেন, টানা লকডাউনে নিম্ন আয়ের অনেকেরই আয়–রোজগারে ভাটা পড়েছে। অভাবে পড়েই হয়তো শর্টকাটে বড়লোক হওয়ার জন্য এভাবে জুয়ার নেশায় বিপথে পা বাড়াচ্ছেন।

নগরীর কতগুলো স্থানে এভাবে জুয়ার আসর বসছে, তা নিয়ে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য আছে কি না জানতে চাইলে সিএমপির পশ্চিম জোনের উপপুলিশ কমিশনার মো. আব্দুল ওয়ারীশ বলেন, সরকারের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে বড় জুয়ার আসর আগের মতো না বসলেও মহামারিতে নগরীর অলিগলিতে ক্ষুদ্র পর্যায়ের জুয়ার আসর বেড়েছে। কারও বাসার ভেতরে, রিকশা বা সিএনজি অটোরিকশার গ্যারেজ কিংবা পরিত্যক্ত গোপন স্থানে এক প্যাকেট তাস বা লুডোর বোর্ড নিয়ে বসছে এসব আসর। এগুলো তো হাউজি বা ক্লাবগুলোর বড় আসরের মতো না। তাই এসবের তালিকা করাটাও মুশকিল।

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার কামাল খান বলেন, অনেক শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষ কাজ হারিয়ে বসে আছেন। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর নগদ অর্থসহায়তা অনেকেই পেয়েছেন, আবার অনেকেই পাননি। কর্ম ও আয়হীন হয়ে পড়ায় তাঁদের অনেকেই তাই পথভ্রষ্ট হচ্ছেন। সরকারি ও বেসরকারিভাবে তাঁদের কর্মসংস্থান ও আর্থিক প্রণোদনা বাড়ানো হলে এই প্রবণতা কমে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কুয়েটে ক্লাস বর্জন নিয়ে শিক্ষক সমিতিতে মতবিরোধ, এক শিক্ষকের পদত্যাগ

২ ম্যাচ খেলেই মোস্তাফিজ কীভাবে ৬ কোটি রুপি পাবেন

দুটি নোবেলের গৌরব বোধ করতে পারে চবি: প্রধান উপদেষ্টা

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রশ্নে যে প্রতিক্রিয়া জানাল যুক্তরাষ্ট্র

বিড়াল নির্যাতনের ঘটনায় গ্রামীণফোন ও অ্যারিস্টোফার্মা কেন আলোচনায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত