Ajker Patrika

চার বছর ধরে জুয়ার আসর বসিয়ে আসছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক

নিজস্ব প্রতিবেদক
চার বছর ধরে জুয়ার আসর বসিয়ে আসছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক

চট্টগ্রাম: নগরের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের দক্ষিণ গ্যালারিতে চট্টগ্রাম ফুটবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের অফিস। স্টেডিয়ামের একপাশে অনেকটা সুনসান নীরব এলাকা। সন্ধ্যার পর জ্বলে না সামনের বাতিও। অন্ধকারে থাকা এ অফিসে সূর্য ডুবলেই আনাগোনা বাড়ে জুয়াড়িদের। রাত যতই গভীর হয় ততই জমতে থাকে আসর।

চার বছর ধরে প্রশাসনের অলক্ষ্যেই চলছে এমন জমজমাট অবৈধ কর্মকাণ্ড। এর নেতৃত্বে ছিলেন খোদ অ্যাসোসিয়েশনেরই সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান মিরন। একসময় তিনি ফিফার রেফারি হিসেবেও ফুটবল মাঠে হুইসিল বাজিয়েছেন। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা এ ক্রীড়াবিদ এখন পুলিশের খাতায় পালাতক আসামি। কারণ, গত ১ জুন রাতে এ কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ১৯ জুয়াড়িকে প্রায় সাত লাখ টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ক্রীড়া কার্যালয়ে এমন ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় চট্টগ্রামে। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয় সিলগালা করে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) সহসভাপতি হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি গতকাল বুধবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে বেরিয়ে আসে মিরনের কোটি টাকা অবৈধ আয়ের চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঘটনার পর পরই পালিয়ে যান মিরন।

পুলিশ জানায়, ফুটবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনে আলাদা একটি কক্ষকে তারা ফুটবল ট্রেনিং একাডেমি হিসেবে ব্যবহার করেছে। সেই কক্ষটিতে আলাদা সিঁড়ি লাগিয়ে দোতলা করা হয়। যাতে কেউ অফিসে ঢুকলে সহজে চোখে না পড়ে।

সিজেকেএসের কাউন্সিলর ও তদন্ত কমিটির সদস্য মহসীন কাজী আজকের পত্রিকাকে বলেন, তদন্ত কমিটি আব্দুল হান্নান মিরনকে স্টেডিয়াম এলাকায় আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা ও রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সদস্যপদসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়াসহ পাঁচটি সুপারিশ করেছে। এ ছাড়াও রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন ও নির্বাহী সদস্য বিশ্বজিৎ সাহাকে ফুটবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশন সব পদ থেকে ও সংস্থার কার্যক্রম থেকে তিন বছর বহিষ্কারের সুপারিশ করে। এই ঘটনায় সম্পৃক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যাতে অন্যরা শিক্ষা নেয়।

সূত্র জানায়, জুয়ার আসর বসাতে প্রথমে আব্দুল হান্নান মিরন তিন শ টাকবার স্ট্যাম্পে চুক্তি করেন জুয়াড়ি সীমান্ত সেনের সঙ্গে। চুক্তিতে সাক্ষী হিসেবে আছেন অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য বিশ্বজিত সাহা ও সাবেক ফুটবলার অনুপম বড়ুয়াও। এর মধ্যে অনুপম বড়ুয়া বর্তমানে বিদেশে। চুক্তি অনুসারে অগ্রিম বাবদ ৩ লাখ টাকা নেন মিরন, আর প্রতিরাতে নিতেন ৪ হাজার টাকা করে। সে হিসাবে প্রতি মাসে এক লাখ ২০ হাজার করে প্রথম এক বছর তিনি আয় করেন ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। পরবর্তী ৬ মাসে প্রতিরাতে ৪ হাজার ৫০০ করে তুলে নেন ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা।
টাকা আদায় হতো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জন্যও। মাসে ৪০ হাজার টাকা করে দেড় বছরে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা উল্লেখ আছে চুক্তিতে। সে হিসেবে দেড় বছরে ৩২ লাখ ৭০ হাজার টাকার লেনদেন করেছেন মিরন।

তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, আব্দুল হান্নান মিরন ও সীমান্ত সেনের সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১৭ সালের শুরুতে। পুলিশ অভিযান চালানোর আগ পর্যন্ত গত চার বছরে জুয়ার আসর থেকে এক কোটি টাকারও বেশি লেনদেন করেন মিরন।

এদিকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আজম নাছির ফুটবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনেরও সভাপতি। সে জন্য তদন্ত প্রতিবেদনটি দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি ভাগ রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে তার নজরে আনা হয়েছে। আরেকটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার।

কমিটির প্রধান হাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, তদন্ত কমিটি সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ পেয়েছে। পুলিশও অভিযান চালিয় হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে। তাই তাদের শাস্তির সুপারিশ করেছি আমরা।

তদন্তে দেখা যায়, রাতভর বাতি জ্বালিয়ে জুয়ার আসর বসিয়েছেন তারা। অথচ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেননি এক টাকাও। বিল বকেয়া পড়েছে ১০ লাখ টাকা। প্রতিবেদনে এ টাকা আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। এদিকে চুক্তিতে জুয়ার আসরের বিদ্যুৎ বিল ১ম পক্ষ পরিশোধ করবেন এমন কথা লেখা আছে। সে হিসাবে ১০ লাখ টাকা বকেয়া রেখেই হাওয়া হলেন মিরন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কুয়েটে ক্লাস বর্জন নিয়ে শিক্ষক সমিতিতে মতবিরোধ, এক শিক্ষকের পদত্যাগ

২ ম্যাচ খেলেই মোস্তাফিজ কীভাবে ৬ কোটি রুপি পাবেন

দুটি নোবেলের গৌরব বোধ করতে পারে চবি: প্রধান উপদেষ্টা

বিড়াল নির্যাতনের ঘটনায় গ্রামীণফোন ও অ্যারিস্টোফার্মা কেন আলোচনায়

বাগ্‌বিতণ্ডার মধ্যে সাম্যকে ইট ও ধারালো অস্ত্রের আঘাত করা হয়: ডিএমপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত