Ajker Patrika

চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী পরীর পাহাড়ে ৩৫০ অবৈধ স্থাপনা

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী পরীর পাহাড়ে ৩৫০ অবৈধ স্থাপনা

চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী পরীর পাহাড়ে সাড়ে ৩ শ অবৈধ স্থাপনা থাকার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। সৌন্দর্য রক্ষা ও ঝুঁকি বিবেচনায় পাহাড়টিতে কোনো রকম স্থাপনা নির্মাণ থেকে বিরত থাকতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়। এ নিয়েই বিরোধে জড়িয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতি। কারণ আইনজীবীদের অনেকগুলো স্থাপনা ওই তালিকায় রয়েছে। আইনজীবীদের জন্য দুটি ভবনও নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে।

তবে কারও সঙ্গে বিরোধে জড়াননি বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। এদিকে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এ এইচ এম জিয়া উদ্দিন বলছেন এ ধরনের সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি মূলত তাঁদের ইঙ্গিত করে দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, পরীর পাহাড়ে সাড়ে ৩শ’ অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নেওয়া এবং পরিকল্পনা ছাড়া অননুমোদিত এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে পাহাড়টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা। তাই নতুন করে কোনো পরিবেশ বিধ্বংসী দখলবাজি, খাস জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ থেকে বিরত রাখতে সতর্কীকরণ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

অবৈধ স্থাপনার বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এ বিষয়টি আমরা পরে জানাব।’

আইনজীবীদের আরও দুটি ভবন নির্মাণের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ওই ভবন দুটি নির্মাণেও যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আদালত পাড়া খ্যাত চট্টগ্রামে পরীর পাহাড়ে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, জেলা প্রশাসন কার্যালয়, আদালত ভবন, আইনজীবী ভবনসহ প্রায় ৪শ ভবন রয়েছে। এসব স্থাপনার বেশ কয়েকটি আইনজীবীদের। এ ছাড়া ডিসি কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মচারীদেরও দখলে রয়েছে অনেক স্থাপনা।

সরেজমিনে দেখা গেছে মূল সড়ক থেকে পরীর পাহাড়ে ওঠার সরু সড়কগুলোর দুই পাশে রয়েছে পার্কিং প্লেস, দোকানপাট, ফুটপাতের অবৈধ বাজার, বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠনের অফিস, হোটেলসহ ছোট–বড় নানান স্থাপনা। রাস্তাটি সরু হওয়ায় প্রতিদিনই যানজট লেগে থাকে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এ এইচ এম জিয়া উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের আইনজীবীদের যতগুলো ভবন আছে সবই যথাযথ অনুমোদন নিয়ে করা হয়েছে। যে দুটো ভবন করা হচ্ছে সেগুলোও অনুমোদন নিয়ে হচ্ছে। এখানে অবৈধভাবে কিছু করা হয়নি। এসবের কাগজ আমরা দেখাতে পারব। উনি যেসব অভিযোগ করেছেন তা সত্য নয়।’

অ্যাডভোকেট এ এইচ এম জিয়া উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরা বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবিলা করব।’

এর আগে গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান গণমাধ্যমে এ বিষয়ে একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেন। এতে জানানো হয় এক সময়ের দৃষ্টিনন্দন পরীর পাহাড়ে পরিকল্পনা ছাড়াই অবৈধভাবে বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ করার পাশাপাশি পাহাড়টিতে ওঠার রাস্তার ওপর যত্রতত্র পার্কিং, স্টেশনারি দোকান, খাবার হোটেল, কম্পিউটার দোকান, অস্থায়ী কাঁচা বাজার, শুঁটকি বাজার, ভ্রাম্যমাণ হকার বসেছে। পরিকল্পনা ছাড়া এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ফলে পরীর পাহাড়ে ভূমিকম্প, ভূমিধস ও অগ্নিকাণ্ডের মতো পরিস্থিতি উদ্ভব হলে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয় হতে পারে বলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সমীক্ষায় উঠে এসেছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ এ সব স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূমি মন্ত্রণালয়, কালেক্টর, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সরকার সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থার অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। পরীর পাহাড়ের কোর্ট হিল এলাকায় পরিবেশ বিধ্বংসী দখলবাজি, খাস জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও নির্মাণকাজে সহযোগিতা করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এমন কাজ থেকে বিরত থাককে অনুরোধ করে নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

এ ছাড়া গত ২৯ আগস্ট জেলা প্রশাসক এক দাপ্তরিক চিঠিতে পরীর পাহাড়ে কোর্ট হিল এলাকায় সরকারি ভবন ও স্থাপন এবং জেলা প্রশাসনের অনুমোদনপত্র ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান না করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ করেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, ১১ দশমিক ৭ হাজার ৬০৪ একর জায়গা জুড়ে পরীর পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় বহুতল ভবনসহ অনেক অননুমোদিত অবৈধ স্থাপনা আছে। এসব স্থাপনায় বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি কর্মচারীদের পদ-পদবি-বেতন কাঠামো নিয়ে পাল্টা অবস্থানে দুই পক্ষ

বাংলাদেশ এড়িয়ে সমুদ্রপথে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করতে নতুন প্রকল্প ভারতের

ফেসবুকে লাইক-কমেন্ট, পাঁচ কর্মকর্তাকে নোটিশ

নাম প্রস্তাবে আটকে আছে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’

মোহাম্মদপুরে আলোকচিত্রী ও জিগাতলায় শিক্ষার্থী খুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত