Ajker Patrika

পাহাড় কাটা, চাঁদাবাজি ও মাদকে নাকাল

আবদুস সাত্তার, চট্টগ্রাম 
Thumbnail image

নগরীর শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ড। মাদক বাণিজ্য, চাঁদাবাজি এবং ভূমিদস্যুদের উৎপাত এখানকার বড় সমস্যা। সরকারি পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ অবৈধ আয়ের অন্যতম উৎস। অক্সিজেন মোড়, বিআরটিসি মোড় এলাকায় প্রতিদিনই যানজট লেগে থাকে। গার্মেন্টস, রি-রোলিং মিল, টি-বোর্ডসহ বিভিন্ন কল–কারখানা রয়েছে এ এলাকায় ।  

নগরের বায়জিদ, শেরশাহ, কুঞ্জছায়া, সাংবাদিক হাউজিং সোসাইটি, আরেফিন নগর, চৌধুরী নগর , ড্রিম লাইন ঘোনা, মাঝের ঘোনা , ইসলামপুর, অক্সিজেন, কুলগাও নিয়ে জালালাবাদ ওয়ার্ড।

প্রায় ৪ লাখ মানুষের বসবাস এই এলাকায়। এখানে শিক্ষার হার ৬৩ শতাংশ। ১৩ দশমিক ৫৩ বর্গকিলোমিটারের বেশ বড় একটি এলাকা নিয়ে সিটি করপোরেশনের এই ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ড।

জালালাবাদ ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী ছোটন জামান জানান, এ ওয়ার্ডের প্রধান সমস্যা দখলবাজি। একদিকে যেমন সরকারি পাহাড় দখল করে চলছে বিক্রি, তেমনি চলছে বিভিন্ন সড়কের দুই পাশ দখলের প্রতিযোগিতা। এ দখল-বেদখলের প্রতিযোগিতায় গত এক যুগে জালালাবাদ ওয়ার্ডে প্রাণও গেছে মানুষের। একইভাবে শিল্প-কারখানা ঘিরে রয়েছে একাধিক চাঁদাবাজ গ্রুপ। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অস্ত্রের মহড়া তো আছেই। মাদকের বেচাকেনা চলছে সমানতালে। ওয়ার্ডের পাহাড়ি এলাকায় গাঁজা চাষেরও অভিযোগ আছে।  

আরেফিন নগরের ফরিদুল আলম বলেন, শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত এ ওয়ার্ডে পাহাড় কাটা এবং অবৈধ দখল-বেদখলের ঘটনা সবচেয়ে বেশি। এ ওয়ার্ডে  বিগত সময়ে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন হলেও এতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ওয়াসার কাটা সড়ক । এ ছাড়া অক্সিজেন মোড়, বিআরটিসি মোড় এলাকায় প্রতিদিনই যানজট লেগে থাকে।

শিক্ষাবিস্তারের জন্য কুলগাও সিটি করপোরেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভুলনাথ স্কুল, ইমরাতুন নেছা গার্লস হাই স্কুল, বালুচড়া সরকা

প্রাথমিক বিদ্যালয়, রিডার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ সরকারি–বেসরকারি ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভূমিকা রাখে যাচ্ছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে। আধুনিক টয়লেট আছে, একটি আধুনিক পার্ক আছে বায়জিদ এলাকায়।

বায়জিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমি এ থানায় যোগদান করেছি কিছুদিন আগে। তারপর থেকেই মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। যেখানে যেখানে জুয়ার আসর হয় সব ধ্বংস করে দিয়েছি। মামলা ও অভিযানের ফলে মাদক কারবারিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তবে, আমি ঘোষণা দিয়েছি যত দিন এ থানায় ওসি থাকব তত দিন অবৈধ কোনো কিছুই হতে দেব না। তার প্রমাণ এসব জুয়া, মাদক ও দখলবাজির বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সাহেদ ইকবাল বাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি গতবারও এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলাম। ৫ বছর আগে রাস্তাঘাটের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। আমার গত মেয়াদে ১৭০ কোটি টাকার কাজ করেছি। এটি চসিকের সর্বোচ্চ বরাদ্দ এ ওয়ার্ডে। তখন কুলগাও এলাকায় আধুনিক বাস টার্মিনাল করার জন্য ২৬০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। এর ভূমি অধিগ্রহণ কাজ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এখানে আমার এলাকার প্রায় ১৫০টি ছোট ছোট সড়কের নাম দেওয়া হয়েছে।’

ওয়ার্ডে কাউন্সিলর মো. সাহেদ ইকবাল বাবু আরও বলেন, খন্দকিয়া খালের ফলে জলাবদ্ধ সৃষ্টি হয় এ ওয়ার্ডে। তবে, সেনাবাহিনী খাল খনন কাজ করছে। এ কাজ শেষ হলে এখানে আর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে না। জালালাবাদ ওয়ার্ডের বায়জিদ, শেরশাহ, অক্সিজেন এলাকায় মাদক ও জুয়ার উপদ্রব রয়েছে বেশ। খন্দকিয়া নাসিরাবাদ অংশে ইয়াবা ও গাঁজা সেবন হয় প্রকাশ্যে। পাহাড়ের ওপরে জুয়া খেলার আসর বসে। ভেজাল ঘি তৈরি হয় রাতে। টি-বোর্ড এলাকায় শিল্পাঞ্চলের অনুমোদিত প্লটে তৈরি হচ্ছে এসব ভেজাল ঘি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত