Ajker Patrika

আশুলিয়ায় ‘যুবলীগ কর্মী’র কাছে জিম্মি দেড় শতাধিক পরিবার

রিফাত মেহেদী, সাভার (ঢাকা)
Thumbnail image

ঢাকার আশুলিয়ার চাড়ালপাড়ার শান্তিনগর এলাকায় বসতবাড়ির সংখ্যা দেড় শতাধিক। কিছু বাড়ির সামনে ঝুলে আছে ভাঙা সিসি ক্যামেরা। এলাকায় মানুষের আনাগোনা কম। কিছু ফাঁকা প্লটে আগাছার জঙ্গল হয়েছে। ‘বাসা ভাড়া’ লেখা সাইনবোর্ড ঝুলছে কিছু বাড়িতে। বাড়ির মালিকদের অভিযোগ, এলাকায় গড়ে ওঠা ‘বখাটে বাহিনীর’ দাপটে এসব বাড়ি ভাড়া নেন না কেউ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যুবলীগের কর্মী পরিচয় দেওয়া ফরহাদ হোসেন সোহাগ নামের এক যুবকের নেতৃত্বে এই এলাকায় একটি বাহিনী গড়ে উঠেছে। এই বাহিনী মাদক কারবার, মারামারি, চুক্তিতে ঝুট ব্যবসা দখলসহ নানা অপরাধমূলক কাজ করে। অত্যাচারের ভয়ে কেউ প্রতিবাদও করেন না।

২৭ জুলাই এক নারীকে রিকশা থেকে টানাহেঁচড়ার প্রতিবাদ করায় স্থানীয় বাসিন্দা ইশতিয়াক ভূঁইয়ার মাথা ফাটিয়ে দেন সোহাগের দলের সদস্যরা। ছোট ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রমণের শিকার হন মেজ ভাই আজহার ভূঁইয়াও। পরে এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়। আজহার ভূঁইয়া বলেন, ‘ভাইকে বাঁচাতে বুকে জড়িয়ে ধরি। তারা আমাকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান।’

একটি বাড়ির মালিক লাকী বেগম বলেন, ‘ভাড়াটিয়া বা বাইরের কেউ এলাকায় বেড়াতে এলে পোলাপানরা অত্যাচার করে। নিরাপত্তা না থাকলে কেউ থাকতে চায়? ভাড়াটিয়াই যদি না থাকে, তাহলে বাড়ি করে এখানে থেকে লাভ নেই। এখানকার ঘটনার কথা প্রায় সবাই জানে। ঘটনা ঘটলে পুলিশ আসে, কিন্তু কোনো কিছুই হয় না।’

স্থানীয় চায়ের দোকানি আবুল মোল্লা বলেন, ‘সোহাগের অনেক লোকজন। সোহাগ এলাকার নেতা। বিচার-আচার করে। সোহাগ নাকি মইনুল মেম্বারের দল করে। এলাকায় খালি মারপিট।’

সিরাজ খান নামের এক বাড়িওয়ালা বলেন, ‘২৮ জুন আমার বাড়ির সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করেছে এলাকার পোলাপাইন। এখানে সব সময় মারামারির কথা শুনি। আমি ঢাকায় থাকি। মাঝেমধ্যে আসি। আমার বাড়িতে ১৫টা রুম। ভাড়াটিয়া নাই, পুরোটাই খালি। পুলিশকে জানায়া লাভ নাই, একদিন দাবড়াইব, পরদিন তো আমরা এলাকায় থাকতে পারব না।’

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, যুবলীগের আশুলিয়া থানার যুগ্ম আহ্বায়ক মইনুল ইসলাম ভূঁইয়া ও ধামসোনা ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুমের ছত্রচ্ছায়ায় সোহাগ বাহিনী এলাকা দাবড়ে বেড়ায়।

আশুলিয়া থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোহাগের বিরুদ্ধে থানায় অন্তত আটটি মামলা হয়েছে। সোহাগের সবচেয়ে কাছের সহযোগী হলো চাচাতো ভাই রুবেল ইসলাম। রুবেলের বিরুদ্ধেও আশুলিয়া থানায় অন্তত ছয়টি মামলা আছে।

এ বিষয়ে সোহাগের বাবা হরমুজ আলী বলেন, ‘আমার ছেলে কী করেছে, তা তো আমি জানি না। তবে সোহাগ খালি ফেঁসে যায়। সে যুবলীগ করে। মইনুলের (মইনুল ইসলাম) কথামতোই চলে।’

এ বিষয়ে মইনুল ইসলাম বলেন, ‘অপরাধী ও সন্ত্রাসী কোনো দলের নয়। কারও আত্মীয়ও নয়। সোহাগ তো আমাদের সংগঠনের কেউ না। যুবলীগে তাঁর কোনো পদ-পদবি নেই।’

তবে যুবলীগের ধামসোনা ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, সোহাগ যুবলীগের কর্মী। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব বা কোনো অপরাধের দায় সংগঠন নেবে না।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, সোহাগের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা আছে। তাঁকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত