Ajker Patrika

পাহাড়ে আগ্নেয়াস্ত্রের কারখানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
পাহাড়ে আগ্নেয়াস্ত্রের কারখানা

দেখতে অনেকটা ওয়ান শুটারগানের মতো। তবে এগুলো দেশে তৈরি পয়েন্ট টু টু পিস্তল। আর এতে ব্যবহার করা যায় একে-২২ রাইফেলের গুলিও। দেশীয় অস্ত্র কারিগরের হাতে এ ধরনের ভয়ানক আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়ে ১০টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করে র‍্যাব। এসব অস্ত্রের মধ্যে ৮টি ওয়ান শুটার গান ও ২টি টু টু পিস্তল রয়েছে। এ ঘটনায় জাকেরুল্লাহ নামে অস্ত্র তৈরির এক কারিগরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একে-২২ রাইফেলের যে ধরনের অ্যামোনিশন (গোলাবারুদ) ব্যবহৃত হয়। টু টু পিস্তলের একই অ্যামোনিশন ব্যবহৃত হয়। এগুলোর অ্যমো তুলনামূলক ছোট। সম্ভবত ৫.৪ মিলিমিটার কিংবা ৫.৫ মিলিমিটার অ্যামো ব্যবহৃত হয় এখানে। মূলত একে-২২ এর মতো করে দেশীয় এ অস্ত্রটি তৈরি করা হয়েছে। তাঁরা এটাকে টু টু পিস্তল নাম দিয়েছে। দেশীয় অস্ত্রের মধ্যে এগুলো একটু উন্নতভাবে তৈরি বলে জানান তিনি।

গ্রেপ্তার অস্ত্র কারিগর জাকেরুল্লাহ মেজর মেহেদী বলেন, এসব অস্ত্র সাধারণত তৈরি হতে দেখা যায় না। র‍্যাবের হাতে আগে একবার এই ধরনের দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল। এগুলো তৈরি করতে অনেক সময় লাগে বলে আসামি জাকেরুল্লাহ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। এ ছাড়া এসব অস্ত্রের অ্যামো সহজে পাওয়া যায় না।

র‍্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, জাকেরুল্লাহ জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, টু টু পিস্তলগুলো ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। ওয়ান শুটার গানগুলোও একই দামে বিক্রি করা হয়। তবে বড় বন্দুকগুলো ক্ষেত্র ভেদে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। কারখানাটিতে দুজন কারিগর মিলে এসব অস্ত্র তৈরি করতেন। এদের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরেকজন পলাতক রয়েছেন। এ ঘটনায় বাঁশখালী থানায় মামলা হয়েছে।

মেজর মেহেদী বলেন, এ অস্ত্র তৈরির কারখানাটির সঙ্গে মূলত তিনটি পক্ষ জড়িত। একটি পক্ষ অস্ত্রের ক্রেতা সংগ্রহ করে দেয়, আরেকটি পক্ষ অস্ত্র তৈরির বিভিন্ন কাঁচামাল সংগ্রহসহ অস্ত্র বিক্রির মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকে। তৃতীয় পক্ষটি অস্ত্র তৈরি করে থাকে। দুজন কারিগর মিলে মূলত কারখানাটিতে অস্ত্র তৈরি করা হচ্ছিল।

গ্রেপ্তার আসামি র‍্যাবকে জানিয়েছেন, প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫টি আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি হতো কারখানাটিতে। লটভেদে অর্ডার পাওয়ার পর এসব অস্ত্র তৈরি হয়।

র‍্যাব-৭ চান্দগাঁও ক্যাম্পে অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, ‘টু টু বোরের পাটকলটিতে ৭.৬২ মিলিমিটার অ্যামুনিশনও ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া পিস্তলটিতে একটি সাইলেন্সার যুক্ত করা হয়েছে। বিদেশি অস্ত্রের মতো করে অনেকটা উন্নত করে দেশীয় প্রযুক্তিতে অস্ত্রটি তৈরি করা হয়।’

এম এ ইউসুফ বলেন, ‘এসব অস্ত্রের কাঁচামাল আশপাশেই রয়েছে। সেখান থেকে তাঁরা সংগ্রহ করে থাকেন। অস্ত্র তৈরির পর এসব অস্ত্র স্থানীয় জলদস্যু, মাদক ব্যবসায়ী ও মহাসড়কে ছিনতাই ডাকাতিতে জড়িত ডাকাত দলসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের কাছে চলে যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত