Ajker Patrika

বালু তোলায় ভাঙছে জনপদ

শহিদুল ইসলাম, বাসাইল
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ১৭
বালু তোলায় ভাঙছে জনপদ

বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর পশ্চিমপাড়া এলাকার ঝিনাই নদে বালু উত্তোলনের যন্ত্র (ড্রেজার) বসিয়ে রাস্তা ভরাটের নামে চলছে বালু বিক্রি। দিনের বেলায় লোক দেখাতে রাস্তায় ফেলা হয় বালু। রাতে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে নদ থেকে তোলা বালু বিক্রির রমরমা ব্যবসা। রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় প্রভাবশালী একটি চক্র দিনের পর দিন এমন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।

সরেজমিন দেখা গেছে, কাঞ্চনপুর ছনকাপাড়া থেকে কোদালিয়াপাড়া হয়ে আদাজান পর্যন্ত নতুন রাস্তা নির্মাণে বালু ফেলার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রেজার। আর এ রাস্তা ভরাটের নামে কাঞ্চনপুর পশ্চিমপাড়া ঝিনাই নদের মাজমের দও এলাকা থেকে দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ইতিমধ্যে নদীতীরবর্তী এলাকার বসতবাড়ি, কবরস্থান, আবাদি জমি, কাঁচা-পাকা সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

নতুন করে আরও অনেক স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। অবৈধভাবে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন দ্রুত বন্ধ করতে না পারলে নদীতীরবর্তী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভিটেবাড়িসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নদীতে ধসে যাওয়ার শঙ্কা করছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তায় বালু ফেলার নাম করে নদীতে ড্রেজার বসিয়ে দেদার চলছে বালু বিক্রি। দিনের বেলায় লোক দেখাতে রাস্তায় অল্প অল্প করে বালু ফেলা হলেও রাতে লোকচক্ষুর আড়ালে ভরাট করা হচ্ছে ব্যক্তিমালিকানা বাড়ি ও পুকুর-ডোবা। গত কয়েক সপ্তাহে কোদালিয়াপাড়ার আশরাফ হোসেন, শাহজাহান মিয়া, মিজানুর রহমান, মামুনের ভিটেবাড়ি এবং পুকুর ভরাট করা হয়েছে। নালা ভরাট করা হয়েছে আরও কয়েকজনের।

অভিযোগ রয়েছে, ছনকাপাড়া, কোদালিয়াপাড়ার অসংখ্য বাড়িতে মাটি ভরাটের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন এ বালু ব্যবসায়ীরা।

এদিকে রাস্তার কাজে মাটি ভরাটের জন্য এ প্রকল্পে যথাযথ নিয়মে সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া থাকলেও অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলা হবে কেন—এমন প্রশ্ন রেখে স্থানীয় কৃষক ছানোয়ার হোসেন বলেন, এলাকাবাসী ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে বাধা দিতে গেলে ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নানা ধরনের হুমকি দেন।

ভুক্তভোগী আবু সাইদ বলেন, একটি সরকারি রাস্তা করতে গিয়ে আরেকটি রাস্তা নদীগর্ভে ফেলার ব্যবস্থা করছেন তাঁরা। এর প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক, উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দপ্তরসহ বিভিন্ন স্থানে আবেদন করেও ফল পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ড্রেজার মালিক জাকির হোসেন মোবাইল ফোনে বলেন, ‘ঠিকাদার আমাকে রাস্তায় মাটি ফেলার কন্ট্রাক্ট দিয়েছেন।’

ঠিকাদার মেসার্স তাপস ট্রেডার্সের প্রতিনিধি ফরিদ আহমেদ বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নাহিদ হোসেন রাস্তার এ কাজটি এনেছেন।

উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নাহিদ হোসেন মোবাইল ফোনে বলেন, ‘এলাকা ও রাস্তার উন্নয়নের স্বার্থে ড্রেজার দিয়ে রাস্তায় মাটি ফেলার কাজে সহযোগিতা করছি মাত্র।’

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুল জলিল বলেন, ‘রাস্তায় সাইড বাই সাইড মাটির কাজ ধরা আছে। বালু ফেলার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও বরাদ্দ দেওয়া আছে। ড্রেজার ব্যবহার করে বালি ফেললে সে দায়ভার ঠিকাদারকেই নিতে হবে। আমরা ড্রেজার ব্যবহারের বিপক্ষে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা পারভীন বলেন, ‘ড্রেজার বন্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্পটে অভিযান চালিয়ে ড্রেজার মেশিন ও বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি ধ্বংস করাসহ মালিকদের জরিমানা করা হয়েছে। ড্রেজারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত