Ajker Patrika

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ম ভেঙে দোকান নির্মাণ

রিপন চন্দ্র রায়, রাবি
Thumbnail image

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) টুকিটাকি চত্বর। কী ছিল না এখানে! সারি সারি বসেছিল খাতা-কলম থেকে মোবাইল সার্ভিসিং, নারকেলের নাড়ু থেকে কলার দোকান। শুধু এ চত্বরই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা জায়গায় ছিল এমন অসংখ্য ভ্রাম্যমাণ দোকান। এসব দোকান একদিকে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য নষ্ট করছিল, অন্যদিকে বিঘ্নিত করছিল পড়ালেখার পরিবেশ। গত বছরের শেষ দিকে এসে এসব দোকান উচ্ছেদ করে রাবি প্রশাসন। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ২০১৯ সালে ৫০ বছর মেয়াদি একটি মাস্টারপ্ল্যান বা মহাপরিকল্পনা করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই পরিকল্পনা উপেক্ষা করে খোদ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই এবার দোকান নির্মাণ শুরু করেছে। প্রশাসনের দাবি, শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই দোকান বসানো হচ্ছে।

রাবির প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পাসের সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে গত বছরের ২৭ আগস্ট বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্ধশতাধিক দোকান উচ্ছেদ করা হয়। মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, রাবির পরিবহন মার্কেট এলাকায় একটি ১০ তলা কমপ্লেক্স নির্মাণের কথা। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসের তিনটি পয়েন্টে মোট ৮টি দোকান ও ৭টি রেস্তোরাঁ নির্মাণের কাজ শুরু করে দিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬ লাখ টাকা।

রাবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০১তম সিন্ডিকেট সভায় মহাপরিকল্পনাটি অনুমোদিত হয়। এতে ক্যাম্পাসের ৭৫০ একর জায়গাকে পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়। পরিকল্পনার মধ্যে রাখা হয়েছে, একাডেমিক ও প্রশাসনিক অবকাঠামোর উন্নয়ন, গ্রন্থাগার আধুনিকীকরণ, শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাস্তাঘাট ও উন্মুক্ত স্থানের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, পরিবহনব্যবস্থার আধুনিকায়ন, আধুনিক জিমনেসিয়াম স্থাপন, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থার উন্নয়ন, ড্রেনেজ, বর্জ্য ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাসহ নানা বিষয়।

মাস্টারপ্ল্যানটি তিন পর্যায়ে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। শুরুতে ১০ বছর মেয়াদি (২০২০-২০৩০), এরপর ২০ বছর মেয়াদি (২০৩১-২০৫০) এবং সর্বশেষ ২০ বছর মেয়াদি (২০৫১-২০৭০)। তবে মহাপরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি কাজে গতি নিয়ে আসতে। তবে নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ায় কাজ কিছুটা ধীরে হচ্ছে।’

সম্প্রতি ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, রাবির টুকিটাকি চত্বরে দুটি, ডিনস কমপ্লেক্স ভবনের পেছনে একটি ও মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশে পাঁচটি দোকান ও রেস্তোরাঁ নির্মাণের কাজ চলছে। অন্যদিকে শেখ রাসেল মাঠের দক্ষিণ পাশে পাঁচটি দোকানের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। এ ছাড়া বাকি দুটি দোকান ও রেস্তোরাঁ চারুকলা অনুষদসংলগ্ন এলাকায় নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট (ভূমি) শাখার অফিস প্রধান মো. জাহেদ আলী।

মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক প্রকৌশলী খন্দকার শাহরিয়ার বলেন, ‘ক্যাম্পাসের কোথায়ও দোকান নির্মাণের কথা পরিকল্পনায় নেই। আমাদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই দোকানের কাজ চলছে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাময়িক আর্থিক চাহিদা মেটাতেই অস্থায়ী দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে। রাবির উপ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর খাবারের সুবিধা দিতেই দোকান করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত