Ajker Patrika

সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
Thumbnail image

সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নওয়াবেঁকী বাজারের পেরিফেরিপ্রাপ্ত জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। ব্যবসা করেন না এমন ব্যক্তিরা নিজের নামে বা বেনামে একাধিক প্লট বরাদ্দ নেওয়ার পাশাপাশি ইজারার শর্ত লঙ্ঘন করে পেরিফেরিভুক্ত জমিতে গড়ে তুলেছেন পাকা, আধা পাকা অবকাঠামো আর বহুতল ভবন। এমনকি বরাদ্দের শর্ত ভঙ্গ করে জমির প্রকৃতি পরিবর্তনসহ সাবলীল ও ভাড়া দেওয়ার পাশাপাশি হস্তান্তরের ঘটনাও সেখানে প্রকাশ্যে ঘটছে।

সরেজমিনে নওয়াবেঁকী বাজার ঘুরে দেখা যায়, ইজারার শর্ত লঙ্ঘন করে মোল্যা ফিড, ভিশন শোরুম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল্লাহর দান মেশিনারিজ ও শামিমা ক্লিনিকসহ ৩০টিরও বেশি দ্বিতল অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে।

এ ছাড়া দুটি তিনতলা ভবনসহ শতাধিক স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে বরাদ্দের নীতিমালা উপেক্ষা করা হয়েছে। পেরিফেরিভুক্ত জমিতে বাসভবনসহ ব্যাংক-বিমা প্রতিষ্ঠানের অফিসও নির্মিত হয়েছে। বরাদ্দের শর্ত অনুযায়ী ০.০০৫ (অর্ধ) শতক জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হলেও প্রায় অর্ধশত অবকাঠামো গড়ে উঠেছে বরাদ্দের কয়েকগুণ বেশি জায়গাজুড়ে।

স্থানীয়রা জানান, ব্যবসায়ী না হয়েও প্রভাবশালী ও বিত্তবান হওয়ার সুযোগে অনেকে নওয়াবেঁকী বাজারের পেরিফেরিভুক্ত জমি বরাদ্দ পেয়েছেন। একেকজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০-১২টি পর্যন্ত প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন উল্লেখ করে তাঁরা জানান, বরাদ্দের পর চড়া দামে বিক্রিসহ অবকাঠামো নির্মাণের পর তা ভাড়া দিয়েছে শতাধিক ব্যক্তি। অনেকে পরিবারের একাধিক সদস্যের নামে সাত-আটটি পর্যন্ত প্লট বরাদ্দ নিয়ে সেখানে বাসভবন গড়ে তুলেছেন বলেও তাঁদের অভিযোগ।

বিড়ালাক্ষী গ্রামের আব্দুল জব্বারসহ স্থানীয়রা জানান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুল ইসলামের ভাই আবুল কালাম ও সাধারণ সম্পাদক সাধু রঞ্জন মণ্ডলসহ প্রভাবশালীরা একাধিক প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। নিজেরা ব্যবসা না করা সত্ত্বেও বরাদ্দকৃত জমি হস্তান্তরসহ অবকাঠামো নির্মাণের পর তা ভাড়া দিয়েছেন।

এ ছাড়া জামায়াত নেতা সৈয়দ কামাল ও আব্দুল হাকিমসহ মনিরুজ্জামান নামের কয়েকজন ইজারার শর্ত লঙ্ঘন করে পেরিফেরিভুক্ত জমিতে প্রাসাদসম বাসভবন গড়ে তুলেছেন।

মুজিবর রহমান, এসকেন্দার আলী, আমিনুর, নজরুল ও কামরুলসহ অনেকে ১২ থেকে ১৭টি পর্যন্ত প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন কুপোট গ্রামের আলম ও নওয়াবেঁকীর মারুফ হোসেন।

তাঁরা জানান, ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে অবকাঠামো গড়ে প্লটমালিকেরা ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়েছেন। যুবদল নেতা হাবিবুল্লাহ ও তাঁর বাবা জোনাব আলীসহ ভাই আব্দুল্লাহ আর ভগ্নিপতি নুরুজ্জামানের দখলে একাধিক প্লট রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। এ ছাড়া নির্দিষ্ট একটি জায়গায় ব্যবসা পরিচালনা করলেও অন্য প্লটগুলোতে তাঁরা অবকাঠামো তুলে ভাড়া দিয়েছেন।

আজিজুর রহমান ও জুলফিকার হোসেনসহ স্থানীয়দের দাবি, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে নওয়াবেঁকী বাজারের পেরিফেরিভুক্ত জায়গা নিয়ে এমন নৈরাজ্য চলছে। তাঁদের ইন্ধন থাকায় বরাদ্দের প্রতিটি শর্ত লঙ্ঘন করে প্রতিনিয়ত অবকাঠামো গড়ে উঠলেও তাঁরা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। উল্টো সম্প্রতি দুটি অবৈধ স্থাপনা মালিকের অনুকূলে উচ্ছেদ নোটিশ জারির পর তাঁরা নিজেদের ছেলের নামে পৃথক বরাদ্দের আবেদন জানিয়ে অবৈধ দখলকে বৈধ করেছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উদ্যোগে পাশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ও খোলপেটুয়া নদীর চর পেরিফেরিভুক্ত সম্পত্তি দেখিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। আমিনুর, নজরুল ও কামরুল নামের তিন ভাইসহ ইসরাফিল, শরিফুল, আতিয়ারের মতো শতাধিক ব্যক্তি ইতিমধ্যে বরাদ্দপ্রাপ্ত জায়গায় অবকাঠামো গড়ে তুলেছেন।

এদিকে ইজারার শর্ত লঙ্ঘনের বিষয়টি স্বীকার করে সৈয়দ কামাল জানান, দুই-তিন বছর আগে জায়গাটি তিনি বরাদ্দ নেন।পেরিফেরিভুক্ত জায়গায় বহুতল বাসভবন গড়ে তোলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সবার মতো আমিও একভাবে না একভাবে সিস্টেম করে নিয়েছি।’

আব্দুল হাকিম বলেন, পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে বরাদ্দ নেওয়া প্লটগুলো একত্রিত করে তিনি বাসাবাড়িসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

যুবদল নেতা হাবিবুল্লাহর দাবি, ইজারার শর্ত লঙ্ঘন করলে সবাই করেছেন। নিজের পরিবারের সদস্যরা সবাই ব্যবসায়ী বলেই তাঁরা একাধিক প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন বলে জানান।

আটুলিয়া ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তা (ভূমি) মো. আশরাফুজ্জামান জানান, যাবতীয় অবৈধ স্থাপনা তাঁর যোগদানের আগে নির্মিত।দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা ব্যবসা করায় সংগত কারণে ঘরমালিকদের অপসারণে নোটিশ দেওয়া হচ্ছে না।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আসাদুজ্জামান জানান, আগে-পরে কোনো বিষয় নয়। আইন সব সময় একই রকম। শর্ত ভঙ্গ করে নওয়াবেঁকী বাজারের পেরিফেরিভুক্ত জায়গায় স্থাপনা গড়ে তোলার অভিযোগ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত