Ajker Patrika

হত্যাকাণ্ড যেসব শর্তে গণহত্যা হয়

আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩: ৩৩
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে নিধনের জন্য গণহত্যা চালায়। ছবি: বাসস
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে নিধনের জন্য গণহত্যা চালায়। ছবি: বাসস

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে বহুল আলোচিত শব্দগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘ফ্যাসিস্ট’ ও ‘গণহত্যাকারী’। এই দুটি গণহারে ব্যবহার হচ্ছে। পতিত সরকার ও তাঁর সহযোগীদের উদ্দেশ্যে ব্যবহার তো হচ্ছেই, ক্ষমতাসীনদের কোনো সমালোচনা করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও এই ট্যাগের শিকার হচ্ছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে চলমান বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললে, তাকে ‘গণহত্যাকারীর দোসর’ বলে স্যোশাল মিডিয়ায় ট্রল করা হচ্ছে।

জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় সহিংসতায় সহস্রাধিক নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ অনেকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। এই বিচার নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে বলছেন, জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড গণহত্যা নয় এবং এসব ঘটনার বিচার করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নেই। এই বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদনও করা হয়। যদিও সেই আবেদন শোনার এখতিয়ার নেই বলে খারিজ করা হয়েছে। তবে আবেদনের ‘মেরিট’ বা গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ট্রাইব্যুনাল কোনো মন্তব্য করেননি।

তবে বিশ্বজুড়ে গণহত্যার বিচার সংঘটিত হয় জাতিসংঘের একটি সনদ অনুসারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গৃহীত ওই সনদের ভিত্তিতে জার্মানির নুরেমবার্গ ট্রায়ালে প্রথম বিচার হয়। এরপরে স্থাপিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতসহ (আইসিসি) আরো কয়েকটি ট্রাইব্যুনাল এই সনদের ভিত্তিতে বিচারকাজ পরিচালনা করছে। Genocide Convention (জেনোসাইড কনভেনশন) বা গণহত্যা সনদ নামে পরিচিত এই সনদে বাংলাদেশও স্বাক্ষর করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালও এই সনদ অনুসারে গৃহীত হয়। সেই সনদে গণহত্যা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

গণহত্যা সনদ কী?

গণহত্যা প্রতিরোধ ও শাস্তি প্রদান সম্পর্কিত সনদ বা সংক্ষেপে গণহত্যা সনদ হল একটি আন্তর্জাতিক আইন। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সনদটি চূড়ান্ত করা হয়। এই সনদেই প্রথমবারের মতো গণহত্যার (জেনোসাইড) অপরাধকে আইনগতভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

সনদে প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী, ‘জাতিগত, নৃগোষ্ঠী, বর্ণ বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস’ করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত অপরাধই গণহত্যা। এই সনদ অনুযায়ী, গণহত্যা যুদ্ধকালীন বা শান্তিকালীন সময়েও সংঘটিত হতে পারে। তবে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বা তথাকথিত ‘সাংস্কৃতিক গণহত্যা’ এই সনদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

refugee-exodus

গণহত্যা প্রতিরোধ ও শাস্তি প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে রাষ্ট্রগুলোর ওপর বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে এই সনদে। এর মধ্যে আছে— সংশ্লিষ্ট আইন প্রণয়ন ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। এই দায়িত্ব সংবিধানিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত শাসক, সরকারি কর্মকর্তা বা বেসরকারি ব্যক্তি (৪নং অনুচ্ছেদ) সকলের উপর বর্তায়।

গণহত্যার সংজ্ঞা

সনদের ২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘জাতি, নৃগোষ্ঠী, বর্ণ বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে’ নিম্নলিখিত কাজগুলো সংঘটিত হলে তা গণহত্যা বলে বিবেচিত হবে—

১. নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করা

২. গোষ্ঠীর সদস্যদের মারাত্মক শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা

৩. সম্পূর্ণ বা আংশিক শারীরিক ক্ষতি করার পরিকল্পনা করে তেমন জীবনযাত্রার পরিস্থিতি চাপিয়ে দেওয়া

৪. গোষ্ঠীর মধ্যে জন্ম রোধের ব্যবস্থা গ্রহণ

৫. গোষ্ঠীর শিশুদের অন্য গোষ্ঠীতে জোরপূর্বক স্থানান্তর

গণহত্যা অপরাধ গণ্য হওয়ার বিশেষ শর্ত

গণহত্যার সংজ্ঞায় দুটি উপাদান রয়েছে— (১) শারীরিক উপাদান বা সংঘটিত কাজগুলো এবং (২) মানসিক উপাদান বা অপরাধীদের উদ্দেশ্য। সনদে বর্ণিত সংজ্ঞায় উল্লেখিত কোনো একটি গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস করার ‘সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য’ নিয়ে অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত হতে হবে। এইভাবে অপরাধ প্রমাণিত না হলে তা গণহত্যা হিসেবে গণ্য হবে না।

গণহত্যা সনদে রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা

১. গণহত্যা না করা (অনুচ্ছেদ ১)

২. গণহত্যা প্রতিরোধ করা (অনুচ্ছেদ ১), যা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের মতে আঞ্চলিকভাবে প্রযোজ্য।

৩. গণহত্যার জন্য শাস্তি প্রদান করা (অনুচ্ছেদ ১)।

৪. সনদের বিধান কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা (অনুচ্ছেদ ৫)।

৫. গণহত্যার অপরাধের জন্য দায়ীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা (অনুচ্ছেদ ৫)।

৬. গণহত্যার অপরাধে অভিযুক্তদের জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার করা (অনুচ্ছেদ ৬)।

৭. গণহত্যার জন্য অপরাধীদের প্রত্যর্পণ করা (অনুচ্ছেদ ৭)।

গণহত্যা সনদের গুরুত্ব

গণহত্যা সনদের গ্রহণ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত প্রথম মানবাধিকার চুক্তি ছিল এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বর্বরতার পর ‘আর কখনো নয়’ প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ছিল।

গ্রহণের তারিখ: ৯ ডিসেম্বর ১৯৪৮

কার্যকর হওয়ার তারিখ: ১২ জানুয়ারি ১৯৫১

সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সংখ্যা: ১৫০ (জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত)

গণহত্যার সনদে স্বাক্ষর করেছে যারা

বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ১৫০টি রাষ্ট্র এই সনদ অনুমোদন করেছে। জাতিসংঘের গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে এই সনদ অনুমোদন বা এতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে এটি একটি সর্বজনীন চুক্তি হয়ে ওঠে।

৪৪টি রাষ্ট্র এখনো সনদটি অনুমোদন করেনি, যার মধ্যে রয়েছে—

আমেরিকা: ডোমিনিকা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, গ্রেনাডা, গায়ানা, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট কিটস ও নেভিস, সুরিনাম।

আফ্রিকা: অ্যাঙ্গোলা, বোতসোয়ানা, ক্যামেরুন, চাদ, কঙ্গো, জিবুতি, কেনিয়া, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, জাম্বিয়া প্রভৃতি।

এশিয়া: ভুটান, ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, কিরিবাতি, মালদ্বীপ, কাতার, থাইল্যান্ড, টুভালু, ভানুয়াতু ইত্যাদি।

গণহত্যা প্রতিরোধের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে আর কখনো মানবজাতিকে এই নৃশংসতার শিকার হতে না হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৭
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।

স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।

মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।

মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।

গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’

কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’

যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অতি লোভে তাঁতি নষ্ট: ৬০০ কোটি টাকা হারালেন নওগাঁর ৮০০ জন!

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ১৮: ৩৪
বুধবার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনু। ছবি: সিআইডি
বুধবার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনু। ছবি: সিআইডি

‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’— প্রচলিত প্রবাদ যে হুবহু বাস্তবে ঘটতে পারে, তার প্রমাণ মিলল উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁয়। এই জেলার ৮০০ জনের বেশি মানুষকে অতি মুনাফার ফাঁদে ফেলে ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।

বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অন্যতম হোতা মো. নাজিম উদ্দিন তনুকে (৩৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি। গতকাল বুধবার সকালে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় রাজধানী ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সিআইডির পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনুর বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার জগৎসিংহপুরে। প্রায় এক বছর আগে ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নওগাঁ সদর থানায় নাজিম উদ্দিনসহ কয়েকজনের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা করেছিলেন এক ব্যক্তি। মামলাটি বর্তমানে সিআইডির নওগাঁ জেলা ইউনিট পরিচালনা করছে।

মামলার তদন্তে জানা যায়, প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু।

প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন। পরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকেরা সুকৌশলে প্রচার করা শুরু করেন। তাঁদের এই ফাঁদে পড়ে বহু সাধারণ মানুষ বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে গ্রাহক হিসেবে বিনিয়োগে আগ্রহী হন। মামলার বাদী নিজেই ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে আর্থিক লেনদেনে অস্বচ্ছতা দেখা দেয়। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা সে সময় থেকে তাঁদের জমাকৃত কিংবা ঋণের অর্থ ঠিকঠাক উত্তোলন করতে পারছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে অভিযাগ জানালে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে গ্রাহকদের কাছে কিছুটা সময় চেয়ে নেন পরিচালক তনু।

কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে আও বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে গিয়ে বাদীসহ অন্য ভুক্তভোগীরা নিজেদের অর্থ ফেরত চাইলে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। একপর্যায়ে গ্রাহকদের অর্থ দেওয়া হবে না মর্মে জানিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

এই ঘটনার পর বাদী নওগাঁ সদর থানায় মামলা (মামলা নম্বর ২০, তারিখ ১২-১১-২০২৪, ধারা-৪০৬/৪২০ পেনাল কোড-১৮৬০) করেন। বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন যে ভুক্তভোগীদের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল।

তবে সিআইডি জানায়, এ পর্যন্ত আট শতাধিক ভুক্তভোগী ৬০০ কোটির বেশি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় মো. নাজিম উদ্দিন তনুসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত