Ajker Patrika

অভিযানের মধ্যেই গাজীপুরে চলছে বন দখল

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
Thumbnail image

গাজীপুরে অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে বনের জমি উদ্ধারে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ। কিন্তু এর মধ্যেও থেমে নেই বন দখল। শ্রীপুরে বন বিভাগের ১০ বিঘা গেজেটভুক্ত জমি জবরদখল করে সীমানাপ্রাচীর করছেন রুহুল আমিন নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি। তবে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, একটি কারখানা কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের মাধ্যমে এই জমি জবরদখলে নিয়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করছে।

গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে কাওরাইদ ইউনিয়নের আবদার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বন বিভাগের গেজেটভুক্ত জমিতে লোহার পিলার, স্টিলের এঙ্গেল ও ঢেউটিন দিয়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজে ব্যস্ত অর্ধশতাধিক শ্রমিক। জমিটি ধামলই মৌজার ১২৫৩ আরএস দাগভুক্ত।  

সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কারণে কাটা পড়ছে শাল, গজারিসহ বনের বিভিন্ন বৃক্ষ। সীমানাপ্রাচীরের ভেতরও রয়েছে অনেক শাল-গজারি গাছ। এভাবে দিনদুপুরে বন দখল হলেও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে বাধা দিচ্ছে না বন বিভাগ।

জানতে চাইলে বন বিভাগের শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে আমরা জেনেছি। সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তার কাছে বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নিশ্চিত থাকুন, আগামীকাল শনিবার (আজ) সকালে অভিযান পরিচালনা করে সীমানাপ্রাচীর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।’

বনের যে জমিতে সীমানাপ্রাচীর দেওয়া হচ্ছে, সেটির মালিকানা দাবিদার মো. সোহাগ মিয়া নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘এই জমি দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে ভোগদখলে আছি। হঠাৎ করে বন বিভাগ জমিটি নিজেদের দাবি করে আমাদের হয়রানি করছে। ইতিমধ্যে আমরা সীমানা নির্ধারণের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি। পারিবারিক কারণে জমিতে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করছি। এই জমি আমরা বিক্রি করিনি।’

মো. সোহাগ মিয়ার প্রতিবেশীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁরা জানান, একটি কারখানা কর্তৃপক্ষ জমিটি বুঝে নিয়ে ওই সীমানাপ্রাচীর দিচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আতাউর রহমান বলেন, ‘গেজেটভুক্ত ১২৫৩ আরএস দাগের জমিতে শুক্রবার (গতকাল) সকাল থেকে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করছেন রুহুল আমিন নামের এক ব্যক্তি। তবে আমরা শুনেছি, স্থানীয়দের মাধ্যমে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান এই জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করছে।’ এ ব্যাপারে রুহুল আমিনের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি।

রহস্যময় আগুনে পুড়ছে বন
গাজীপুরের শ্রীপুরে রহস্যময় আগুনে জ্বলছে বন। সংরক্ষিত বনের শত শত বিঘা জমিতে লতা-বৃক্ষ পুড়ে যাচ্ছে এই আগুনে। কিন্তু আগুন নেভানোর কোনো উদ্যোগ নেই কারও।

গতকাল দুপুরে উপজেলার শ্রীপুর রেঞ্জের সাতখামাইর বিটের পোষাইদ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বিশাল একটি এলাকায় আগুন জ্বলছে। আগুন বনের ছোট ছোট গাছপালা ও শুকনো ঝরাপাতা পুড়ে পুড়ে সামনের দিকে যাচ্ছে। এতে বনের ভেতর বাস করা বানরগুলো গভীর জঙ্গল থেকে বের হয়ে রাস্তার পাশে চলে আসছে।

পোষাইদ গ্রামের বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আশপাশের বিশাল একটি এলাকায় রয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। প্রায়ই বনে আগুন লাগে। কিন্তু কোনো সময় বন-কর্মীদের আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে দেখিনি।’

স্থানীয় বাসিন্দা গৌতম বর্মন বলেন, ‘আমাদের বসতবাড়ির চারপাশে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। আমরা বনকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করি। হঠাৎ করে দেখি, বনে আগুন জ্বলছে। কে বা কারা আগুন দেয়, আমরা জানি না। এ পর্যন্ত আগুনের রহস্য কেউ উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি।’

ভাওয়ালগড় বাঁচাও আন্দোলনের মহাসচিব ড. এ কে এম রিপন আনসারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, বন ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে বন কর্মকর্তাদের শক্ত অবস্থান চোখে পড়েনি। বনে কারা আগুন দেয়? এটা এখনো শনাক্ত করতে পারেনি। তাহলে সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তাদের কাজ কী?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত