Ajker Patrika

কালীগঙ্গা এখন মরা খাল

দেবাশীষ দত্ত, কুষ্টিয়া
Thumbnail image

একসময়ের খরস্রোতা কুষ্টিয়ার গড়াই নদীর শাখা কালীগঙ্গা এখন মৃতপ্রায়। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালী, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা নদী দখল করে মাছ চাষ, ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কালীগঙ্গার গতিপথ সচল করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নির্দেশনা দিলেও কর্তাদের সমন্বয়হীনতায় তা হয়ে ওঠেনি। এ অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও জেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কর্মকর্তারা দায় একে অপরের ওপর চাপাচ্ছেন।

নদীপারের বাসিন্দারা জানান, কালীগঙ্গার মৃত্যুঘণ্টা বেজেছে ব্রিটিশ আমলেই। লাহিনী এলাকায় নদীর মাঝখানে বাঁধ দিয়ে ব্রিটিশ সরকার রেললাইন নির্মাণ করে এবং বাঁধের পাশে মহাসড়ক নির্মাণ করে। তখন থেকে খরস্রোতা কালীগঙ্গা দুর্বল হতে শুরু করে। প্রায় ৩০ বছর আগে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার গা ঘেঁষে কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়া গ্রামে কালীগঙ্গার উৎসমুখ বন্ধ করে দেন স্থানীয়রা। উৎসমুখ থেকে কয়েক শ গজ দূরে লালন শাহর মাজারের সামনে নদীর বিশাল এলাকা ভরাট করে বানানো হয় মাঠ। এর পর থেকে দখলে-দূষণে এখন মৃতপ্রায় নদীটি।

নদী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ছেঁউড়িয়া থেকে শুরু করে লাহিনী, সাঁওতা, কমলাপুর, পিয়ারপুর, শালঘরমধুয়া, বাঁশগ্রাম, কুশলীবাসা, হরিনারায়ণপুর পর্যন্ত কালীগঙ্গার দুই পাড়ে অনেক ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। অনেকে নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন।

বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল জেলা শাখার সভাপতি খলিলুর রহমান মজু বলেন, কালীগঙ্গাকে নতুন রূপ দিতে নদী পরিব্রাজক দল দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে। নদী নিয়ে ২৭টি দপ্তর কাজ করলেও তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে।

মোবাইল ফোনে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক পরিচালক ড. কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘নদী রক্ষা কমিশনের ক্ষমতা সুপারিশ পর্যন্ত। অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করে পাউবো ও জেলা প্রশাসককে উচ্ছেদের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমান জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আমার কথা হয়নি।’

এদিকে সব দায় পাউবোর ওপর চাপিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাসরিন বানু বলেন, ‘পাউবো তালিকা না দিলে আমরা উচ্ছেদ অভিযান কীভাবে শুরু করব। আবার তারা কাজ শুরু না করলে দখলমুক্ত করেও লাভ হবে না।’

পাউবো কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান বলেন, ‘দখলদারদের তালিকা জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানো হয়েছিল। কোনো কারণে তাঁরা হাতে না-ও পেতে পারেন। এ ছাড়া নদী রক্ষা কমিশন বিভিন্ন প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে। কাজের অংশ হিসেবে বিকল্প পথ চিহ্নিত করে নদীকে বিভক্ত করা আরেকটি উৎসমুখ সাঁওতা এলাকায় সাইফুন সেতু নির্মাণের নকশা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত