Ajker Patrika

নদী দখল করে আবাদ

পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ৩৬
Thumbnail image

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন নদীতে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। এতে নদীতে জেগে ওঠা চর দখল করে ধান লাগানো হচ্ছে, অনেকে তুলছেন অবৈধ স্থাপনা।

পাটগ্রাম উপজেলা দিয়ে তিস্তা, সানিয়াজান, ধরলা, শিংগীমারী, শংলীসহ প্রভৃতি নদী বয়ে গেছে। এসব নদীর অনেক অংশে চর জেগেছে। নদী তীরের মানুষ চর দখল করে বালু কেটে জায়গা সমান করে ধান ও ভুট্টার চাষাবাদ করছেন।

বিভিন্ন নদী তীরবর্তী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদীর বিভিন্ন অংশ দখল করে গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি। কোনো বাধা ছাড়াই দখল অব্যাহত রয়েছে। নদীর পানি প্রবাহ মূল জায়গা থেকে সরে যাচ্ছে। বন্যার সময় নতুন এলাকা ভেঙে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও নদীর কাছে যাওয়ার রাস্তাও বন্ধ করে দিয়ে দখলে নেওয়া হয়েছে। এতে নদী দূষণ বেড়েছে।

পাটগ্রাম পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের স্টেডিয়াম এলাকার বাসিন্দা আইনুল হক বলেন, ‘ধরলা নদী এখন নদী নাই। যে জায়গা দিয়ে নদী বয়ে যেত, সেখান থেকে সরে গেছে। অনেকে দখল করে বাড়িসহ খেত-খামার করছে। নদীর ওই পারের বেংকান্দা এলাকার রফিকুল ইসলামের দখল করা নদী এলাকা প্রায় (৩০ শতাংশ) তিন মাসের জন্য ১ হাজার ৫০০ টাকা চুক্তিতে ধান রোপণ করেছি। আবাদে যা ধান পাব এতেই আমাদের উপকার।’

পাটগ্রামের চাত্রারপাড় শিংগীমারী নদী এলাকায় ধানচাষি অনন্ত দাশ বলেন, ‘নদীতে সেরকম পানি নাই। নদীতে ধান চাষাবাদে বেশি পানি দিতে হয় না। অনেকে জায়গা দখল ও ভরাট করে ধান চাষাবাদ করছে। স্বাবলম্বী হতে আমিও ধান লাগিয়েছি।’

পাটগ্রাম আদর্শ কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ সহর উদ্দিন বলেন, ‘নদী দখল ও ভরাটের কারণে দূষণ বেড়ে যায়। এতে পানির ভূগর্ভস্থ স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়। পানির স্তর নিচে নেমে যায়। পানির অক্সিজেন কমে যায়, মাছ ও অন্যান্য জীব সংকটে পড়ে। কাজেই প্রাকৃতিক পরিবেশ ও নদীরক্ষায় অবশ্যই নদী দখল, ভরাট বন্ধ করতে হবে।’

পাটগ্রাম উপজেলার পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনভয়েস পাটগ্রাম উপজেলা শাখার সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, ‘পাটগ্রাম উপজেলার নদীগুলো যেভাবে দখল ও ভরাট হচ্ছে এতে দূষণ বাড়বে, পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে। নদী দখল বন্ধে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’

জেলা পানি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব ও পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘পানি না থাকায় লোকজন সাময়িকভাবে কৃষিকাজ করে নদীর যদি ক্ষতি না হয় তাহলে খারাপ কিছু না। কোথাও যদি দখল ও দূষণ হয়ে থাকে, সরেজমিন দেখে তালিকা করে পরবর্তী সময়ে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা পানি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, ‘নদী যাঁরা অবৈধভাবে দখল করছে এ ধরনের ১১৩টি উচ্ছেদ কার্যক্রম করা হয়েছে। সম্প্রতি অনেক জায়গায় যাঁরা বাঁধ বা নদীর তীর দখল করে আছে সেগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। নতুন তথ্য পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত