Ajker Patrika

৬০টির বেশি অবৈধ করাতকল

ফরিদ আহম্মেদ রুবেল, শ্রীবরদী (শেরপুর)
আপডেট : ১৬ জুন ২০২২, ১২: ৩৩
Thumbnail image

শেরপুরের শ্রীবরদীতে অবৈধভাবে চলছে ৬০টির বেশি করাতকল। এর মধ্যে বেশির ভাগই পাহাড়ি বনের আশপাশে। যদিও যেকোনো বনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো করাতকল থাকার নিয়ম নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রশাসনের সঠিক উদ্যোগের অভাবে রাতের আঁধারে বন থেকে গাছ কেটে আনে একটি চক্র। আর সেই গাছ বনের আশপাশের করাতকলে চিরাই করে তারা খুব সহজেই বিক্রি করছে। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে একটি করাতকল বন্ধ হয়। কিন্তু কয়েক দিন পরই আবারও শুরু হয় সেই করাতকলের কার্যক্রম। অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসন বলছে, সব অবৈধ করাতকলে আবারও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হবে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট করাতকলের সংখ্যা কাগজে কলমে ৭৭টি। এর মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে ৯টির। লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন ৯টি করাতকলের মালিক। বাকি ৫৯টি করাতকল সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

যেকোনো বনভূমির সীমানা থেকে ন্যূনতম ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না। আর এর বাইরে যদি কেউ করাতকল স্থাপন করেন, তাঁর আগে সরকারি অনুমোদন নিতে হবে। যেমন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি এবং বন বিভাগ থেকে নিবন্ধন। সব ধরনের অনুমোদন থাকলে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করাতকল চালানো যাবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলায় শতাধিক করাতকল রয়েছে। যার অধিকাংশই বনাঞ্চলের খুবই কাছে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে এসব করাতকলে কাঠ চিরাইয়ের কাজ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাতের আঁধারে বন থেকে গাছ কেটে আনে একটি চক্র। আর সেই গাছ বনের আশপাশের করাতকলে চিরাই করে তারা খুব সহজেই বিক্রি করছে। কিন্তু প্রশাসন পারছে না এসব অবৈধ করাতকল বন্ধ করতে।

রাণীশিমূল গ্রামের সবুজ মিয়া বলেন, ‘অবৈধ করাতকলের কারণে সরকারি বন শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বাজার ও আবাসিক এলাকায় করাতকল হওয়ায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। এটা তো কেউ দেখে না। আমরা সাধারণ মানুষ, আমাদের কী করার আছে?’

ভায়াডাঙ্গা বাজারের আবু সাইদ বলেন, অবৈধ করাতকল বন্ধ হওয়া দরকার। অবৈধ করাতকল বন্ধ না হওয়ার কারণে বেড়েই চলছে এর সংখ্যা। তাই এখনই সব অবৈধ করাতকল বন্ধ হওয়া উচিত।

রাণীশিমুল এলাকার করাতকলের মালিক সেলিম বলেন, ‘মিল না চালাইলে আমরা কী কইরা খামু? আঙগরতো আর কোনো গতি নাই। এহন সরকার আঙগর লাইসেন্স না দিলে কী করমু? এইডা করা ছাড়া তো আর কোনো উপায় নাই।’

পাশেই আসাদ নামের একজন বলেন, ‘ভাই, হুনেন; শ্রীবরদীতে যতগুলো মিল আছে, সবগুলোতে ভেজাল আছে। বন্ধ করলে বাজারের সব কল বন্ধ করা লাগবো। খালি আমার এইডা বন্ধ করবেন, আর বাকিরা চালাবো, এইডা হইবো না।’

সিংগাবরুনা এলাকার করাতকলের মালিক ওয়াদুদ মিয়া বলেন, ‘আমরা আবেদন করছিলাম। কিন্তু আমাদের লাইসেন্স দেওয়া হয় না। এখন না দিলে আমরা তো এভাবেই চালামু। কী আর করমু, কিছু তো কইরি খাওয়া লাগবো।’

কেন লাইসেন্স দিচ্ছে না বন বিভাগ, এমন প্রশ্নের জবাবে ওয়াদুদ মিয়া আরও বলেন, ‘বনের কাছাকাছি আর মিলের পাশে স্কুল, তাই লাইসেন্স দেয়নি। এ জন্য এমনেই চলাইতাছি।’

বন বিভাগের বালিজুড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এর আগে করাতকলে অভিযান পরিচালনা করেছে উপজেলা প্রশাসন। এখন আবার অবৈধভাবে করাতকল চালানো হচ্ছে। তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর সরকারি নিয়মের মধ্যে পড়লে তাঁদের অবশ্যই লাইসেন্স দেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা আক্তার বলেন, ইতিমধ্যে অবৈধ করাতকলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে। সে সময় একটি করাতকলের মেশিন পর্যন্ত খুলে আনা হয়েছে। কিন্তু পরে নাকি সেই করাতকল আবার চালু করেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে উপজেলায় সব অবৈধ করাতকলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণের ১৩০০ কোটির এক টাকাও দেননি হলিডে ইনের মালিক

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

গণ–সমাবেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলেন বিএনপি নেতা

হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত