Ajker Patrika

পারিবারিক সহিংসতায় ৫ বছরে খুন ২০৬০ নারী

অর্চি হক, ঢাকা
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ১৫: ৩৪
পারিবারিক সহিংসতায় ৫ বছরে খুন ২০৬০ নারী

অভাবের সংসারে সাইফুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী আঁখি আক্তারের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকত। পারিবারিকভাবে মিটমাটও হতো। কিন্তু ৫ অক্টোবর ঝগড়ার একপর্যায়ে সাইফুল রেঞ্জ ও লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে আঁখিকে হত্যা করেন বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর। ঘটনাটি কুমিল্লার তিতাসের। 

বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে পারিবারিক সহিংসতায় আঁখির মতো ২ হাজার ৬০ নারী প্রাণ হারিয়েছেন। একই সময়ে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২ হাজার ৪৮৭ জন। আর ২০১৪ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পৌনে ১০ বছরে স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন ২ হাজার ১২৯ নারী।

নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ২০১০ সালে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন (ডিভিপিপিএ) করা হলেও পারিবারিক সহিংসতা কমেনি বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা। স্বামী, স্বামীর পরিবার ও নিজের পরিবারের সদস্যদের সহিংসতার শিকার হচ্ছেন নারীরা।

মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন বলেন, আইনটি যুগোপযোগী করতে কমিটি করা হয়েছে। আইনটি সম্পর্কে মানুষকে জানাতে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ৪৯২টি উপজেলায় ব্যাপক প্রচার চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে। 

২০১০ সালে আইনটি পাস হলেও বিধিমালা হয় ২০১৩ সালে। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের অধীন উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা এই আইনের প্রয়োগকারী। পরিবারের কারও মাধ্যমে সহিংসতার শিকার নারী তাঁর কাছে অভিযোগ জানাতে পারবেন। তিনি পরিবারের সবার কথা শুনে এবং তদন্ত করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন। ওই নির্দেশনা না মানলে আদালতে মামলার বিধান রয়েছে। প্রয়োজনে মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ভুক্তভোগীর সুরক্ষার ব্যবস্থা করবেন।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের এক গবেষণায় দেখা যায়, ডিভিপিপিএতে মামলার সংখ্যা খুব কম। অনেক জেলার আদালতে ১০ বছরে এই আইনে কোনো মামলা হয়নি।

মানবাধিকারকর্মী এবং মনোবিদেরা মনে করেন, তাৎক্ষণিক কলহের জেরে হত্যার ঘটনা কম। বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ড ঘটে দীর্ঘদিনের দাম্পত্য কলহ ও পারিবারিক বিরোধে। আইনজীবীরা বলছেন, হত্যা ছাড়াও নারীরা বিভিন্নভাবে স্বামী, স্বামীর পরিবার ও নিজের পরিবারের শারীরিক ও মানসিক সহিংসতার শিকার হন। কিন্তু তাঁরা এ বিষয়ে না জানায় উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কাছে না গিয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যৌতুক বা নির্যাতনের মামলা করেন।

অর্থাৎ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভুল আইনে মামলা হয়। ফলে আসামিরা কিছুদিন পরই কারাগার থেকে ছাড়া পান এবং প্রমাণের অভাবে দু-তিন বছরে মামলা খারিজ হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ পারিবারিক সহিংসতা আইনের অধীনে অভিযোগ করলে সময়মতো তদন্ত হয় না, প্রতিকারও মেলে না। এ জন্য পৃথক প্রয়োগকারী কর্মকর্তা নিয়োগ প্রয়োজন। 

বেসরকারি সংস্থা ব্লাস্টের উপপরিচালক আইনজীবী তাপসী রাবেয়া বলেন, মানুষ শাস্তি দেখতে চায় বলে মামলা করে। তবে পারিবারিক সহিংসতা আইন মূলত ভুক্তভোগীকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য, শাস্তির জন্য নয়। 

পারিবারিক সহিংসতা থেকে নারীদের সুরক্ষা দিতে ডিভিপিপিএ একটি ভালো সমাধান হতে পারত বলে মনে করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। তিনি বলেন, এটি আধুনিক একটি আইন। সংসার না ভেঙে কীভাবে দাম্পত্য সম্পর্ক টিকিয়ে রেখে পারিবারিক কলহের মীমাংসা করা যায়, একই সঙ্গে নারীকেও সুরক্ষা দেওয়া যায়, সে বিষয়ে আইনটিতে দিকনির্দেশনা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত